লজিস্টিক্সের ক্ষেত্রে মানুষের জায়গা নিচ্ছে রোবট
চিঠি বা পার্সেল দ্রুত প্রাপকের কাছে পৌঁছে দেওয়া বড় চ্যালেঞ্জ৷ বিশেষ করে ই-কমার্সের রমরমার কারণে পার্সেলের সংখ্যা বেড়েই চলেছে৷ কম্পিউটার ও রোবটের সাহায্যে সেই প্রক্রিয়ায় আরো দক্ষতা আনার চেষ্টা চলছে৷
রোবট কুকুর হিসেবে স্পট ডান্স মোডে রয়েছে৷ সেটি সামনের দিকে তাকিয়ে থাকে৷ ঘুরিয়ে অল্প ধাক্কা দিলে সেটি বিপরীত দিকে চলতে থাকে৷ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে বস্টন ডায়নামিক্সের এই রোবোট ডগ এমনভাবে প্রোগ্রাম করা হয়েছে, যে সেটি ঘরের তাপমাত্রা ও শব্দের মাত্রা পরিমাপের মাধ্যমে বাধাবিপত্তি শনাক্ত করতে পারে৷
হ্যার্মেস ফুলফিলমেন্ট কোম্পানির শিক্ষানবিস হিসেবে ইয়োনাস বেহরেন্ট বলেন, আমি আলাদা করে এখানেই আবেদন করেছিলাম৷ কারণ জানতাম যে আমি যন্ত্র নিয়ে অনেক কাজ করবো৷ বিশেষ করে রক্ষণাবেক্ষণের কাজ৷ সেটাই কোনো মেকানিককে মেকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ার করে তোলে৷ হ্যার্মেস গ্রুপ এখানে অত্যন্ত ডিজিটালাইজড উপায়ে কাজ করে৷ কিন্তু প্রথমে সেটা জানতাম না৷ সেই কারণেই সে সব আমার জন্য আরও উত্তেজনাপূর্ণ এবং আনন্দদায়ক করে তুলেছে৷ হ্যার্মেস লজিস্টিক্স সেন্টারে আরেকটি রোবট পার্সেল পাঠানোর কাজে সাহায্য করছে৷ অ্যামেরিকার কোভেরিয়েন্ট কোম্পানি সেই মডেল তৈরি করেছে৷ বিভিন্ন টেক্সটাইল কোম্পানির পার্সেল আলাদা করে প্রাপকদের কাছে পাঠায় সেই রোবট৷ সেটির মধ্যে বিশেষ সফটওয়্যার প্রোগ্রাম করা হয়েছে৷
কোভেরিয়েন্ট কোম্পানির কর্ণধার টেড স্টিনসন বলেন, কোভেরিয়েন্ট ব্রেন সেই প্রণালীকে চোখ ব্যবহার করতে দিচ্ছে৷ সেই চোখ দিয়ে টোট ব্যাগের মধ্যে উঁকি মারতে দেয়৷ কোভেরিয়েন্ট ছবি তোলে৷ সেই ছবির সাহায্যে টোটের মধ্যে কী আছে, তা বুঝতে পারে৷ যেমন এখানে টোটের মধ্যে এক টিশার্টের অবয়ব দেখা যাচ্ছে৷ কোভেরিয়েন্ট ব্রেন সেটিকে টোটের মধ্যে কোনো বস্তু হিসেবে শনাক্ত করতে পারে৷ হাল্ডেসলেবেনে হ্যার্মেস লজিস্টিক্স সেন্টার ইউরোপের আধুনিকতম এমন স্থাপনার মধ্যে পড়ে৷ প্রায় ২৬টি ফুটবল মাঠের সমান জায়গা জুড়ে সেটি বিস্তৃত৷ সারা বছরে অটোর অধীনস্থ বনপ্রিক্সের মতো ফ্যাশন কোম্পানি ও ঘর সামগ্রী সরবরাহকারীর প্রায় ২০ কোটি পার্সেল সেখান দিয়েই গ্রাহকের কাছে যায়৷ গোটা প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয়৷ একমাত্র সমান আকারের পার্সেল হলে তবেই সেটা সম্ভব৷ ভিন্ন পণ্য ও ছোট আকারের কনসাইনমেন্টের ক্ষেত্রে সেটা অনেক বেশি কঠিন৷ আগে হাতে করেই সেগুলি আলাদা করা হতো৷ ভবিষ্যতে একাধিক রোবট অন্যান্য যন্ত্রের সঙ্গে মিলে সেই দায়িত্ব পালন করবে৷ অটো গ্রুপ নিজস্ব লজিস্টিক্স সেন্টারের জন্য ইতোমধ্যেই ১০০ রোবট অর্ডার করেছে৷
অটো গ্রুপের প্রতিনিধি জি বেটি হু বলেন, অটো গ্রুপে আমরা বাণিজ্যিক লজিস্টিক্সের বেড়ে চলা চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে সচেতন৷ একদিকে দক্ষ কর্মীর অভাব রয়েছে৷ অন্যদিকে আমরা আমাদের কর্মীদের দক্ষতা বাড়ানোর সুযোগ দিতে চাই৷ এভাবে লজিস্টিক্সের কাজ আরো আকর্ষণীয় করে তুলতে চাই৷
তাদের মধ্যে অনেককে এখন নতুন করে প্রশিক্ষণ নিতে হবে৷ হাতের কাজ থেকে শুরু করে যন্ত্র চালনা করা এবং ভুল সংশোধনও করতে হবে৷ নিজের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে হ্যার্মেসের কর্মী বিয়র্কা ক্রাইবিশ বলেন, রোবট আমার কাজ অনেক সহজ করে দিচ্ছে৷ সেটি আমাকে সাহায্য করছে৷ কনসাইনমেন্ট পরীক্ষা করে প্যাক করছে৷ তারপর সেগুলি ডিসপ্যাচে চলে যাচ্ছে৷ চাকরি হারানোর ভয় আমার নেই৷ আমাদের কম্পিউটার ও রোবটও পরীক্ষা করতে হয়, সেগুলির উপর নজর রাখতে হয়৷ কখনো রিসেট করতে হয়৷ না আমার সেই ভয় নেই৷ আরো বেশি রোবট কাজে লাগানোর প্রেক্ষাপটে সব কর্মী নতুন দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত কিনা, সেটা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে৷ ভবিষ্যতে সেখানে হয়তো হাতে গোনা কিছু মানুষের প্রয়োজন পড়বে৷ শুধু মনিটরিং এবং কাজের শেষে রোবট কুকুর চার্জ করার দায়িত্ব পালন করতে হবে৷ কারণ থেকে থেকে রোবটের ব্যাটারির চার্জ ফুরিয়ে যায়৷
মন্তব্য করুন