মধ্যরাতে বুয়েট শিক্ষার্থীদের যে বার্তা পাঠাল হিযবুত তাহরীর
বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে চলমান আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীদের ইমেইল দিয়েছে নিষিদ্ধ উগ্রবাদী সংগঠন হিজবুর তাহরীর।
বৃহস্পতিবার (৩ এপ্রিল) রাতে এ মেইল পাঠানো হয়।
মেইলটির শিরোনামে লেখা রয়েছে, ছাত্রলীগের আগ্রাসন থেকে আমাদের মেধাবী সন্তানদের কে নিরাপত্তা দেবে?
সেখানে আরও বলা হয়, বর্তমানে বুয়েট ক্যাম্পাস সরকারের গুন্ডাবাহিনী দ্বারা পদদলিত হচ্ছে। সরকার শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টিকে গুরুত্ব না দিয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জঙ্গিসংশ্লিষ্টতার আভাস দিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবিকে দমন করার চেষ্টা চালাচ্ছে। ইমেইলের শেষে হিজবুত তাহরীরের পক্ষ থেকে এ সরকারের বিরুদ্ধে সেনা হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়, যা এই উগ্রবাদী সংগঠনটি নিয়মিতই করে আসছে।
এ প্রসঙ্গে এক ফেসবুক পোস্টে বুয়েটে ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার তন্ময় আহমেদ লেখেন, কিছুক্ষণ আগে রাত ১২ টায় বুয়েটের ছাত্র-ছাত্রীদের হিজবুততাহরীরের খিলাফত প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়ে মেইল। একই সঙ্গে আন্দোলনের পক্ষে অবস্থান নিশ্চিত করেছে হিজবুত তাহরীর।
বুয়েট শিক্ষার্থীদের কাছে হিজবুত তাহরীরের ইমেইল নতুন কিছু নয়। অভিযোগ রয়েছে, বুয়েটে নীরবে জঙ্গি কার্যক্রম বা প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছে হিবুজত তাহরীর। এর আগেও এই নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনটির পক্ষ থেকে বুয়েট শিক্ষার্থীদের প্রাতিষ্ঠানিক আউটলুক ইমেইলে পাঠানো হয়েছে হিযবুত তাহরীরের ইমেইল। প্রাথমিকভাবে নির্দিষ্ট কিছু শিক্ষার্থীদের প্রাতিষ্ঠানিক ইমেইলে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হওয়ার বার্তা পাঠানো হলেও সর্বশেষ তথ্য অনুসারে সকল শিক্ষার্থীদের রোল নম্বর ধরে একাধারে প্রেরণ করা হয় এসব ইমেইল।
এছাড়া বুয়েটে ছাত্র রাজনীতির পক্ষে থাকা সাধারণ শিক্ষার্থীরা জানায়, ক্যাম্পাসের ভেতরে বেশ কিছু স্থানে হিজবুত তাহরীর কিউআর কোডসহ তাদের জিহাদি বার্তার পোস্টার লাগিয়ে দিয়েছে যা নিয়ে কোন প্রতিবাদ বা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
গত ২৯ মার্চ থেকে ফের ছাত্র রাজনীতি নিয়ে বুয়েটে আন্দোলন শুরু হয়। এ আন্দোলনের বিষয়টি গড়ায় হাইকোর্ট পর্যন্ত। যেখানে উচ্চ আদালতের পক্ষ থেকে বলা হয়, বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি চলতে বাধা নেই।
এ আন্দোলনের সূত্রপাত হয় গত ২৮ মার্চ। ছাত্রলীগের সভাপতি বুয়েটে প্রবেশ করে ছাত্রলীগের কমিটি দিচ্ছে এমন গুজব ছড়িয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি করা হয়। এ সময় ছাত্রলীগ সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগে এক শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার ও তার সঙ্গে থাকা অন্যান্য শিক্ষার্থীদের খুঁজে বের করে বহিষ্কারের দাবি জানানো হয়। তবে তাদের পক্ষ থেকে বুয়েটে জামায়াতে ইসলামির ছাত্র সংগঠন শিবির ও নিষিদ্ধ সংগঠন হিজবুত তাহরীরের কার্যক্রম নিয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। পরে গণমাধ্যমে একপাক্ষিক আন্দোলন নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়ে মৌলবাদী ছাত্র সংগঠন ও মৌলবাদী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে একাত্মতা প্রকাশ করেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনের শুরুর দিকে গণমাধ্যমে প্রচারিত হিজবুত তাহরীর ও ছাত্র শিবির নিয়ে প্রকাশিত খবরকে অপপ্রচার বলে চালানোর চেষ্টা করেন বুয়েটের বর্তমান ও সাবেক কিছু শিক্ষার্থী। তারা এনিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে আপত্তিকর মন্তব্যও করে।
মন্তব্য করুন