এতিমদের সঙ্গে ঈদ আনন্দ, এগিয়ে আসুক দূর্বার তারুণ্য

সাইদুর রহমান রিমন

শনিবার, ০৬ এপ্রিল ২০২৪ , ১০:৫২ পিএম


এতিমদের সঙ্গে ঈদ আনন্দ, এগিয়ে আসুক দূর্বার তারুণ্য
সাইদুর রহমান রিমন

প্রতি বছর শবেকদরের দিন থেকেই মাদরাসাগুলো ঈদের ছুটিতে বন্ধ হয়ে যায়। আর তখন এক করুণ দৃশ্যের অবতারণা হয়। বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর অভিভাবক এসে তাদের সন্তানদের নিয়ে যান। কিন্তু সেসব মাদরাসায় অবস্থানকারী বেশ সংখ্যক শিশু শিক্ষার্থীকে কেউ নিতে আসে না। এমন সামাজিক পোস্ট বারবার পাঠ করেও আলাদা অনুভূতি জাগেনি আগে। তবে আজই ছুটে গিয়েছিলাম রাজধানীর ভাটারা থানার দুটি এতিমখানা ও মাদরাসায়। 

বিজ্ঞাপন

ঈদ ঘিরে এক সপ্তাহের ছুটিতে অনেক শিক্ষার্থী হাসিমুখে বাড়ির পথে মাদরাসা ছাড়ছে। তারই সহপাঠী এতিম শিশুরা ব্যাগ-ব্যাগেজ রিকশা-অটোরিকশায় তুলে দিয়ে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকছে- বন্ধুর চলে যাওয়া পথের দিকে। মাদরাসার মেইন গেট নামের দরজার চৌকাঠে বসেই আছে ছয় থেকে সাতজন, আজ যেন সবাইকে বিদায় দেওয়াই তাদের দায়িত্ব। সহপাঠী বন্ধুদের আনন্দ উচ্ছ্বাস উপভোগের জন্য স্বজনদের কাছে পাঠিয়ে নিজেরা আটকে পড়ছে গুমরে কান্নায়।

তারা এতিম, তাদের কারও বাবা-মা বেঁচে নেই, তেমন স্বজন-পরিজনও নেই খোঁজ নেওয়ার। সহপাঠী বন্ধুরা ঈদ ছুটিতে চলে যেতেই নিজেদের কষ্ট যন্ত্রণা অনুভব করতে থাকে তারা। কোনো শান্তনায় মনে প্রবোধ মানে না, ভেঙে পড়ে কান্নায়। সারা বছর তারা কাঁদে না, শুধু ঈদ ঘিরেই বাঁধ ভাঙ্গা চোখের পানিতে বুক ভাসে তাদের। এতিম এ শিশুরা জানে কেউ তাদের নিতে আসবে না‌, তাদের যাওয়ারও কোন জায়গা নেই। ঈদ আনন্দের রঙিন উচ্ছ্বাস, শিশুসুলভ হৈচৈ, খেলাধুলা এ শিশুদের ভাগ্যে জোটে না। তাই এই ঈদে আপনার কাছাকাছি কোনো এতিমখানায় যান। বন্ধু-বান্ধব কিংবা নিজ সন্তানদের সঙ্গে নিয়েই যান, খোঁজ নিন এতিম শিশুদের। তাদের সঙ্গে কিছু সময় কাটান, সামর্থ্য অনুযায়ী কিছু করার চেষ্টা করুন। দেখুন, নিজের ঈদ আনন্দ কতটা পরিপূর্ণ হয়ে উঠে। আমি নিশ্চিত, অন্যরকম প্রশান্তি পাবেন অন্তরে।

বিজ্ঞাপন

লাখ লাখ মানুষ এটুকু করবে তা আশা করার দরকার নেই। এই লেখাটুকু যে বা যারা পাঠ করছেন তারা অন্তত কয়েক মিনিটের জন্য কোনো না কোনো এতিমখানায় হাজির হই। কেউ না থাকা শিশুদের হাতে বাসায় রান্না করা মাংস ও পায়েস না দিতে পারি,  দুই-চারটা চকলেট, এক খণ্ড কেক তো কিনে দিতে পারব? নাইবা দিলাম কিছু, তাদের মাথায় হাত বুলিয়ে আদর স্নেহের পরশ দেওয়াও কি অসম্ভব? আমার বিশ্বাস, আবু আবিদ এর দূর্বার তারুণ্য যদি ‘এতিমখানায় ঈদ আনন্দ’ শীর্ষক কোনো কার্যক্রম ঘোষণা করে- তা ছড়িয়ে যেতে পারে সারাদেশে।

তবে মায়ের কাছে সন্তান মৃত্যুর অনুভূতি জানতে চাওয়ার মতো কোনো টিভি চ্যানেল এতিমখানায় না গেলেও চলবে। ঈদের দিনেও এতিম শিশুদের কাছে তাদের মা-বাবা না থাকার কষ্ট কিংবা আনন্দময় ঈদের স্মৃতি জানতে চেয়ে ব্যুম ধরার দরকার নেই। মমত্ববোধে সদয় না হলে সমস্যা নেই, কিন্তু যন্ত্রণাকাতর এতিমদের প্রতি নির্দয় হবেন না প্লিজ।

লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক / সম্পাদক, দৈনিক দেশবাংলা

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন
Advertisement
Advertisement

Loading...


© All Rights Reserved 2016-2025 | RTV Online | It is illegal to use contents, pictures, and videos of this website without authority's permission