বিসমিল্লাহ না বলে জবাই করা পশু খাওয়া যাবে?
মহান আল্লাহর খুশির জন্য কোরবানি দেওয়া হয়। সওয়াব অর্জনের অনন্য আমল এই পশু কোরবানি। যে কোনো ইবাদত সহিহ ও কবুল হওয়ার জন্য শর্ত হচ্ছে তা একমাত্র মহান আল্লাহর জন্য হতে হবে। আর ইসলামি শরিয়ত নিধার্রিত নিয়ম-নীতি অনুযায়ী তা করা।
পশু-পাখি জবাই করার সময় আল্লাহর নাম নেওয়া ওয়াজিব। ইচ্ছাকৃত আল্লাহর নাম ছেড়ে দিলে সে প্রাণীর গোশত খাওয়া হারাম হয়ে যাবে। কেননা আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, وَلَا تَأْكُلُوا مِمَّا لَمْ يُذْكَرِ اسْمُ اللَّهِ عَلَيْهِ وَإِنَّهُ لَفِسْقٌ ‘আর তোমরা তা থেকে আহার করো না, যার ওপর আল্লাহর নাম উচ্চারণ করা হয়নি এবং নিশ্চয় তা গর্হিত।’ (সুরা আনআম: ১২১)
তবে ভুলে বিসমিল্লাহ বা আল্লাহু আকবর ছুটে গেলে জবাই শুদ্ধ হয়ে যায়। আল্লাহর নাম ভুলে যাওয়ার কারণে জবাইকৃত পশু-পাখি হারাম হয়ে যায় না। আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ আমার উম্মতের ভুল, বিস্মৃতি এবং বাধ্য হয়ে করা বিষয় ক্ষমা করেছেন।’ (ইবনে মাজাহ: ২০৪০)
পবিত্র কোরআনেও এর উদ্ধৃতি রয়েছে। ইরশাদ হয়েছে- رَبَّنَا لاَ تُؤَاخِذْنَا إِن نَّسِينَا أَوْ أَخْطَأْنَا ‘হে আমাদের পালনকর্তা, যদি আমরা ভুলে যাই কিংবা ভুল করি, তবে আমাদেরকে অপরাধী করো না।’ (সুরা বাকারা: ২৮৬)
ভুলবশত বিসমিল্লাহ না পড়ে জবাই করা সম্পর্কে তাবেয়ি ইবরাহীম নাখায়ি (রহ)-কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, এতে কোনো সমস্যা নেই। (মুসান্নাফ আব্দুর রাজজাক: ৮৫৪০)
এ সম্পর্কে ইবনে আব্বাস (রা.)-কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, এতে কোনো সমস্যা নেই; তোমরা আল্লাহর নাম পড়ে খাও। (মুসান্নাফ আব্দুর রাজজাক: ৮৫৪১)
‘যদি ইচ্ছাকৃতভাবে আল্লাহর নাম না নেওয়া হয়, তাহলে জন্তুটি মৃত (অর্থাৎ মৃত পশুর হুকুমের মতো), তা খাওয়া যাবে না। তবে যদি ভুলবশত ছেড়ে দেয়, তাহলে খাওয়া যাবে।’ (আল বিনায়াহ খ: ১০ পৃ-৬৪৫)
কোরবানির পশু জবাই করার দোয়া:
কোরবানি স্বাভাবিক কোনো আমল নয়; বরং এর সঙ্গে মিশে আছে তাৎপর্য। পশু জবাই করার মাধ্যমে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের অফুরন্ত সুযোগ। আজকে আমরা জানবো, কোরবানির পশু জবাই করার দোয়া সম্পর্কে --
কোরবানির পশু কেবলামুখী করে শোয়ানোর পর এ দোয়াটি পাঠ করতে হয়:
إِنِّي وَجَّهْتُ وَجْهِيَ لِلَّذِي فَطَرَ السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضَ حَنِيفًا، وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِينَ، إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ لَا شَرِيكَ لَهُ، وَبِذَلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا مِنَ الْمُسْلِمِينَ، اللَّهُمَّ مِنْكَ وَلَكَ
উচ্চারণ: ইন্নি ওয়াজ জাহতু ওয়াজহিয়া লিল্লাজি ফাতারাস সামাওয়াতি ওয়াল আরদা হানিফাও ওয়ামা আনা মিনাল মুশরিকিন। ইন্না সালাতি ওয়া নুসুকি ওয়া মাহইয়ায়া ওয়া মামাতি লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন। লা শারিকা লাহু ওয়া বিজালিকা উমিরতু ওয়া আনা মিনাল মুসলিমিন। আল্লাহুম্মা মিনকা ওয়ালাকা। (অর্থ: নিশ্চয়ই আমি দৃঢ়ভাবে সেই মহান সত্তার অভিমুখী হলাম, যিনি আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন। আমি মুশরিকদের অন্তর্গত নই। নিশ্চয়ই আমার নামাজ, আমার কোরবানি, আমার জীবন ও আমার মরণ—সবই বিশ্ব প্রতিপালক মহান আল্লাহর জন্য নিবেদিত। তার কোনো শরিক নেই। আমি এ কাজের জন্য আদিষ্ট হয়েছি। আর আমি আত্মসমর্পণকারীদের একজন। হে আল্লাহ, তোমার পক্ষ থেকে, তোমার জন্য, আল্লাহর নামে, আল্লাহ সবচেয়ে মহান।) (আবু দাউদ: ২৭৯৫)
যদি কেউ এ দোয়াটি না পারেন, তবে ছোট্ট এ অংশটুকু পড়া যেতে পারে --
بِسْمِ اللهِ اَللهُ اِكِبَر - اَللَّهُمَّ مِنْكَ وَ لَكَ
উচ্চারণ: বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার, আল্লাহুম্মা মিনকা ওয়ালাকা। (অর্থ: আল্লাহর নামে, আল্লাহ সবচেয়ে মহান। হে আল্লাহ, তোমার পক্ষ থেকে, তোমার জন্য।)
এ দোয়া পড়ার পর ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবর’ বলে পশু জবাই করতে হয়। এর পর এ দোয়া পাঠ করতে হয় —
اَللهُمَّ تَقَبَّلْ لَهُ مِنِّى كَمَا تَقَبَّلْتَ مِنْ حَبِيْبِكَ مَحَمّدٍ وَّ خَلِيْلِكِ اِبْرَاهِيْم
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা তাকাব্বালহু মিন্নি কামা তাকাব্বালতা মিন হাবিবিকা মুহাম্মদ ও খালিলিকা ইবরাহিম। (অর্থ: হে আল্লাহ! আমার পক্ষ থেকে এ কোরবানি কবুল করুন, যেমন কবুল করেছিলেন আপনার হাবিব মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আপনার বন্ধু ইবরাহিম (আ.)-এর কোরবানি।)
যদি একাধিক ব্যক্তি মিলে কোরবানি করে, তবে ‘মিন্নি’র স্থলে ‘মিন্না’ পাঠ করবে এবং শরিকদের নাম পাঠ করবে। তবে তাদের নাম শুধু নিয়ত করলেই হবে।
মন্তব্য করুন