ঢাকাশনিবার, ৩১ মে ২০২৫, ১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ঢাকায় বৃষ্টি কম যে কারণে

আরটিভি নিউজ

বৃহস্পতিবার, ২০ জুন ২০২৪ , ০৩:২৩ পিএম


loading/img
ছবি : সংগৃহীত

মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে সিলেট, ময়মনসিংহ ও রংপুর বিভাগে কয়েক দিন ধরেই বৃষ্টি হচ্ছে। তবে মধ্যাঞ্চলের ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টি তেমন হচ্ছে না। কিছু কিছু এলাকায় বইছে তাপপ্রবাহ। ঢাকার আকাশ মেঘলা থাকলেও বৃষ্টির দেখা নেই। বৃষ্টিপাত বিভিন্ন কারণে কমে যেতে পারে। কিন্তু বতর্মানে বৃষ্টিপাতের তারতম্য বেশি দেখা যাচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

জীবনের অস্তিত্ব রক্ষায়, মানুষের বর্ণময় কর্মধারায় এবং ভূমিরূপের পরিবর্তন ও বিবর্তনে আবহাওয়া বা জলবায়ুর উপাদান হিসেবে বৃষ্টিপাতের গুরুত্ব সর্বাধিক। এক্ষেত্রে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ও বণ্টনের প্রকৃতি তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

জলীয়বাষ্প পূর্ণ হাল্কা বায়ু ওপরের উঠে শীতলতার সংস্পর্শে ঘনীভূত হওয়ার ফলে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জলকণার সৃষ্টি করে। ঐ জলকণাগুলো বায়ুতে ভাসমান ধূলিকণাকে আশ্রয় করে মেঘের সৃষ্টি করে। মেঘ থেকে জলকণাগুলো মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে জলের ফোঁটার আকারে ভূপৃষ্ঠে পতিত হয়। মেঘ থেকে ভূপৃষ্ঠে পতিত এই জলবিন্দুগুলো বৃষ্টিপাত নামে পরিচিত। মনে রাখা দরকার সব মেঘেই বৃষ্টিপাত হয় না। বৃষ্টিপাত হওয়ার জন্য দুটি প্রধান বিষয়ের প্রয়োজন। 

বিজ্ঞাপন

১। জলীয়বাষ্প পূর্ণ বায়ু

২। মেঘকে শীতল করার জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান

এছাড়া বায়ুর প্রকৃতি অর্থাৎ শুষ্ক না আর্দ্র এবং বায়ুর ওপরে ওঠার প্রবণতাও বৃষ্টিপাতকে নিয়ন্ত্রণ করে। জলীয়বাষ্প পূর্ণ আর্দ্র বায়ু প্রবল বেগে ওপরে উঠলে ওপরের বায়ুমণ্ডলের প্রবল শৈত্যর সংস্পর্শে এসে ঘনীভূত হলে এবং জলকণায় পরিণত হলে বৃষ্টিপাত ঘটে থাকে। অর্থাৎ, দেখা যাচ্ছে প্রয়োজনীয় উপাদানের একটিতেও অসামঞ্জস্য দেখা গেলে বৃষ্টিপাতের ঘাটতি দেখা দেবে।

বিজ্ঞাপন
Advertisement

বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ার কয়েকটি কারণ হলো: প্রাকৃতিক কারণ, এলনিনো এর প্রভাব, সব মেঘে জলকণার সংযুক্তির উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি না হওয়া।

অতিরিক্ত তপমাত্রা : প্রায় ৬০০ ক্যালোরি তাপ প্রয়োজন হয় এক গ্রাম জলকে বাষ্পীভূত করতে। কিন্তু অতিরিক্ত তাপমাত্রা বৃষ্টিপাতের জন্য উপযুক্ত নয়।

দূষণ : দূষণের ফলে বৃষ্টির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। বিশেষ করে গ্রীণহাউস গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধি।

বৃক্ষচ্ছেদন : ভালো বৃষ্টির জন্য গাছ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বতর্মানে গাছের পরিমাণ কমে যাওয়ার ফলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে যাচ্ছে।

এছাড়াও ঢাকায় বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ার পেছনে কয়েকটি কারণের কথা উল্লেখ করেছেন আবহাওয়াবিদেরা। যেমন-

গত ৩০ মে মৌসুমি বায়ু দেশে প্রবেশ করে। তবে এটি সক্রিয় হতে আরও কয়েক দিন সময় নেয়। মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে সিলেটসহ বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টি শুরু হয়ে যায়। আবার অন্যদিকে মধ্যাঞ্চলের ঢাকা, খুলনা ও বরিশাল বিভাগে এবং রাজশাহীর কয়েকটি স্থানে তাপপ্রবাহ বইতে শুরু করে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক বলেন, মৌসুমি বায়ুর অক্ষ দেশের উত্তরাঞ্চল ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মধ্যে সক্রিয় আছে। উত্তরাঞ্চলের মধ্যে রংপুর এবং উত্তর–পূর্বাঞ্চলের মধ্যে ময়মনসিংহ ও সিলেটেই এর প্রভাব বেশি। সাগরে মৌসুমি বায়ুর কিছুটা প্রভাব আছে, এ জন্য চট্টগ্রামে কিছুটা বৃষ্টি হচ্ছে। এর বাইরে দেশের বিস্তৃত অঞ্চলে মৌসুমি বায়ুর প্রভাব অতটা সক্রিয় নয়। তবে ধীরে ধীরে এর বিস্তৃতি বাড়বে। সক্রিয়তা কম থাকার জন্যই ঢাকাসহ মধ্যাঞ্চলে বৃষ্টি কম হচ্ছে।

বৃষ্টি হওয়ার জন্য ‘বায়ুমণ্ডলীয় বিশৃঙ্খলা’ একটা বড় শর্ত বলে জানান আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক। তার কথা, বাতাসে এখন জলীয় বাষ্পের পরিমাণ অনেক বেশি। আশপাশের এলাকায় বৃষ্টি হওয়ার জন্য ঢাকাসহ মধ্যাঞ্চলের আকাশও মেঘে ছেয়ে আছে। কিন্তু এই গরম বাষ্পের সঙ্গে নিম্নভাগে প্রবাহিত ঠান্ডা বাতাসের একটা সংঘাত হয়, এর মাধ্যমে মেঘের সৃষ্টি হয় ও বৃষ্টি হয়। মধ্যাঞ্চলে এই অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে না। তাই এখানে বৃষ্টি কম।

মেঘ যত বেশি দূরের আকাশে সৃষ্টি হয়, বৃষ্টি তত কম হয়। ঢাকাসহ যেসব অঞ্চলে মৌসুমি বায়ু সক্রিয় নেই, সেখানে এমনটাই ঘটছে বলে মনে করেন নাজমুল হক।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আরেক আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশিদ বলেন, ঢাকাসহ মধ্যাঞ্চলের আকাশে মেঘ আছে। কিন্তু এখানে মেঘে সঞ্চিত জলবিন্দু বৃষ্টির আকার ধারণ করতে পারেনি। মৌসুমি বায়ু এখানে খুব বেশি সক্রিয় না থাকার কারণেই সেটা হয়েছে। যখন বায়ু সক্রিয় হবে, তখন এখানেও বৃষ্টি হবে।

মৌসুমি বায়ু জুন মাসের প্রথম থেকে সক্রিয় হলেও ঢাকাসহ মধ্যাঞ্চলে এর প্রভাব পড়তে‌ সাধারণত মাসের অর্ধেকটা সময় চলে যায়। এটা অনেক বছরই ঘটে বলে জানান আবহাওয়াবিদ নাজমুল হক। এবারও তেমনটা হচ্ছে বলে মনে করেন তিনি। কিন্তু চারপাশের বৃষ্টির আবহাওয়ার প্রভাব ঢাকাতেও পড়বে বলে জানান তিনি।

আবহাওয়া অধিদপ্তর প্রতি মাসের শুরুতে ওই মাসের আবহাওয়ার পূর্বাভাস জানিয়ে দেয়। চলতি মাসের পূর্বাভাস অনুযায়ী, এ মাসে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হবে।

আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ জানান, সিলেট, ময়মনসিংহ ও রংপুর বিভাগে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টি হলেও এখন পর্যন্ত ঢাকায় বৃষ্টি অনেকটাই কম।

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন
Advertisement
Advertisement


© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৬-২০২৫ | RTV Online |