• ঢাকা মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২ আশ্বিন ১৪৩১
logo

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য: সাম্যের পৃথিবীর এক স্বপ্নদ্রষ্টা

আরটিভি নিউজ

  ০৮ আগস্ট ২০২৪, ১৩:৪৯
ছবি : সংগৃহীত

আজ ৮ আগস্ট, আশি বছর বয়সে ইহলোক ত্যাগ করেছেন ওপার বাংলার সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। পশ্চিমবঙ্গের মানুষের শোকের দিন তো বটেই, শোকে মুহ্যমান অধিকারসচেতন পুঁজিবাদবিরোধী প্রতিটি মানুষ।

দীর্ঘ পাঁচ দশকেরও বেশি রাজনৈতিক কর্মজীবনে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির (মার্কসবাদী) সিনিয়র নেতাদের একজন হয়ে উঠেছিলেন বুদ্ধদেব।

বামপন্থী পরিবারে বেড়ে ওঠার সংস্কৃতি বুদ্ধদেবের উপর প্রগাঢ় প্রভাব ফেলেছিল। ১৯৬২ সালে ভারত-চিন যুদ্ধের পর ১৯৬৪ সালে সিপিআই (ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি) ভেঙে সিপিএম বা ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্ক্সবাদী) তৈরি হয়। এর দুই বছর পর ১৯৬৬ সালে বুদ্ধদেব সিপিএমের সদস্য হন। তার আগে পর্যন্ত তিনি বাম-মনস্ক একজন ছাত্র ছিলেন, সাহিত্যের নানাধারায় তার বিচরণ।

কলেজজীবনে রাজনীতিতে যোগদান করেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। তিনি পশ্চিমবঙ্গের উত্তাল খাদ্য আন্দোলনের সাথে সাথে ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় মার্কিন সাম্রাজ্যবাদবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে যোগদান করেন। তিনি গণতান্ত্রিক যুব ফেডারেশনের রাজ্য সম্পাদক হন, যা পরবর্তীকালে ভারতের গণতান্ত্রিক যুব ফেডারেশন রূপে আত্মপ্রকাশ করে। ১৯৭৭ সালে তিনি কাশীপুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে বিধায়ক নির্বাচিত হন, কিন্তু ১৯৮২ সালে কংগ্রেসের প্রফুল্ল কান্তি ঘোষের কাছে ৭৮২ ভোট পরাজিত হন। ১৯৮৭ সালে তিনি তার নির্বাচনী কেন্দ্র পরিবর্তন করে যাদবপুরে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ওই কেন্দ্র থেকে তিনি টানা পাঁচবার জয়ী হন। ২০১১ বিধানসভা নির্বাচনে তিনি এই কেন্দ্র থেকেই সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের মণীশ গুপ্তের কাছে পরাজিত হন।

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ব্যবসা সংক্রান্ত তার অপেক্ষাকৃত উন্মুক্ত নীতির জন্য পরিচিত ছিলেন, কারণ CPI-এর আর্থিক নীতিগুলো মূলত পুঁজিবাদবিরোধী ছিল। কিন্তু তা করার চেষ্টা করে, ভট্টাচার্য মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তার মেয়াদে শক্তিশালী জমি অধিগ্রহণের প্রতিবাদ এবং প্রতিবাদকারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতার অভিযোগের মুখোমুখি হন। এর ফলে তিনি ২০১১ সালের নির্বাচনে হেরে যান। যে কারণে পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্টের ৩৪ বছরের শাসনের পতন ঘটে, যা বিশ্বের দীর্ঘতম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত কমিউনিস্ট সরকার।

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য জন্মেছিলেন ১৯৪৪ সালের ১ মার্চ, উত্তর কলকাতায় এক ব্রাহ্মণ পরিবারে। তার পিতামহ কৃষ্ণচন্দ্র স্মৃতিতীর্থ ছিলেন একজন সংস্কৃত পণ্ডিত, পুরোহিত এবং একজন প্রখ্যাত লেখক। তিনি পুরোহিত দর্পণ নামে একটি পুরোহিত ম্যানুয়াল রচনা করেছিলেন, যা পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি হিন্দু পুরোহিতদের কাছে জনপ্রিয়। বুদ্ধদেবের পিতা নেপালচন্দ্র পৌরোহিত্য না করে পারিবারিক প্রকাশনা সারস্বত লাইব্রেরির সাথে জড়িত ছিলেন, যা হিন্দু ধর্মীয় সামগ্রী বিক্রির জন্য নিবেদিত ছিল। কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য ছিলেন তার পিতার মামাত ভাই। শৈলেন্দ্র সরকার বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র ভট্টাচার্যের বাংলাদেশে তার পৈতৃক বাড়ি ছিল। তিনি কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে বাংলা সাহিত্য অধ্যয়ন করেন এবং বাংলা (সম্মান) বিষয়ে বিএ ডিগ্রি অর্জন করেন এবং একটি সরকারি স্কুলে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন।

তিনি মীরা ভট্টাচার্যকে বিয়ে করেছেন। সুচেতনা ভট্টাচার্য নামে তাদের একটি মেয়ে রয়েছে। পরিবারটি কলকাতার বালিগঞ্জে বসবাস করে। তিনি কয়েক দশক ধরে দুই কক্ষের বাসায় ছিলেন এবং একই বাসভবন থেকে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে কাজ করেছেন। ভট্টাচার্য তার মিতব্যয়ী জীবনধারার জন্য বিখ্যাত। তিনি যদিও পুরোহিতদের পরিবারের অন্তর্গত, তবুও কমিউনিজমের নীতি অনুসারে একজন স্বীকৃত নাস্তিক।

২০২২ সালে তিনি পদ্মভূষণ লাভ করলেও তা প্রত্যাখ্যান করেন বুদ্ধদেব। বুদ্ধদেবের পদ্মসম্মান ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষের ভাষ্য, তিনি যে পদ্ম ভূষণ প্রত্যাখ্যান করেছেন, সেটা তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। কিন্তু এই পদ্মভূষণ বুদ্ধবাবুকে দেওয়াটাই একটা গভীর রাজনীতির বিষয়। এই রাজনীতিটা অবশ্যই জরুরি ভিত্তিতে পর্যালোচনা করা দরকার। কারণ, বাবরি মসজিদ ভাঙার নায়ক কল্যাণ সিংকে যেখানে বিজেপি সরকার পদ্ম সম্মান পাওয়ার তালিকায় রাখছে, সেখানে একই তালিকায় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এলেন কী করে, কোন উদ্দেশ্যে? এই রাজ্যের বামপন্থী ভোটারদের কাছে বন্ধুত্বের একটা নরম বার্তা দেওয়ার জন্যই এই নামটি আনা হয়েছে?

মন্তব্য করুন

Radhuni
  • অন্যান্য এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
মারা গেছেন পশ্চিমবঙ্গের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য