• ঢাকা শুক্রবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২ আশ্বিন ১৪৩১
logo

কীভাবে আ.লীগ আমলের পাচার হওয়া সম্পদ উদ্ধার করতে পারে বাংলাদেশ?

এ কে এম ওয়াহিদুজ্জামান

  ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২১:০৯
লেখক: এ কে এম ওয়াহিদুজ্জামান

অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং সম্পদ জব্দ করার ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত অন্যসব দেশের সরকারের সঙ্গে কাজ করা।

২০২২ সালের সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যায়, তখন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার প্রায় ৪.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাজেট সহায়তা চাইতে বাধ্য হয়।

একই সময় যুক্তরাজ্যের দৈনিক দ্য ফিনান্সিয়াল টাইমস বাংলাদেশি ঘড়ি সংগ্রহকারী আহমেদ রহমানকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। আহমেদ রহমান হলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রভাবশালী উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের ভাগনে। বর্তমানে সালমান এফ রহমান কারাগারে রয়েছেন।

দ্য ফিনান্সিয়াল টাইমসে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, দামি ঘড়ি ছাড়াও আহমেদের পরিবার যুক্তরাজ্যে কয়েক মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের সম্পত্তির মালিক। এর আগে আরেকটি নিউজ সাইট নেত্র নিউজে প্রকাশিত হয়েছিল, শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানা যুক্তরাজ্যে রহমান পরিবারের মালিকানাধীন একটি বাড়িতে থাকেন।

কীভাবে আহমেদ এবং তার পরিবার এই বিপুল পরিমাণ অর্থ যুক্তরাজ্যে স্থানান্তরিত করেছে তা একটি ধাঁধার মধ্যে রয়ে গেছে। কারণ, বাংলাদেশের আইনে সীমিত পরিমাণ অর্থই বিদেশে পাঠানো যায়।

বাংলাদেশে হাসিনার শাসনামলে ক্ষমতাসীন এলিটরা বিদেশে অসৎ উপায়ে অর্থ পাচার করেছিল। আল জাজিরার অনুসন্ধানী তথ্য অনুযায়ী, হাসিনা সরকারের সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, যার বৈশ্বিক সম্পদের পরিমাণ ৫০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি। যার বেশির ভাগ অংশ তিনি বাংলাদেশ থেকে পাচার করেছেন।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি নতুন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। এই সরকারকে বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া সম্পদ ফিরিয়ে আনতে কাজ করতে হবে।

ইউনূস সরকার ইতোমধ্যেই অর্থনীতি পুনরুজ্জীবিত করার জন্য কিছু সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছে।

যেগুলো হলো—

বিতর্কিত ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদে রদবদল করে আর্থিক খাতের সংস্কার এবং আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ সহায়তা চাওয়া। এসব প্রচেষ্টা সত্ত্বেও বাংলাদেশের রিজার্ভের ওপর চাপ রয়েছে।

সুতরাং ঋণ চাওয়ার পাশাপাশি অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই পাচার করা অর্থ ফেরত আনার উপায় খুঁজে বের করতে হবে। যা কেবল অর্থনীতিকেই চাঙা করবে না, ঋণের বোঝা কমাতেও সহায়তা করবে।

বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে চারটি উপায় রয়েছে—

প্রথমত, বাংলাদেশ স্টোলেন অ্যাসেট রিকভারি ইনিশিয়েটিভ (এসটিএআর)-এর সদস্য। বিশ্বব্যাংক এবং জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধসংক্রান্ত অফিসের (ইউএনওডিসি) মধ্যেও অংশীদারিত্ব রয়েছে। কিন্তু হাসিনা সরকারের অপব্যবহারের কারণে এখনও এগুলোর সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো যায়নি। সম্পদ পুনরুদ্ধারের পরিবর্তে বিরোধী নেতাদের হয়রানির হাতিয়ার হিসেবে এগুলোকে ব্যবহার করা হয়েছে। এসব উদ্যোগের মাধ্যমে যুক্তরাজ্য সরকার বাংলাদেশকে প্রায় ১.৫ মিলিয়ন ডলার ফেরত পেতে সহায়তা করেছে।

দ্বিতীয়ত, অন্তর্বর্তী সরকার সন্দেহভাজন অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং তাদের সম্পদ জব্দ করতে অন্য দেশের সরকারের সঙ্গে কাজ করতে পারে। এ ছাড়া তাদের বাংলাদেশে ফেরত আসতে এবং আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়।

তৃতীয়ত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিদেশি দুর্নীতি অনুশীলন আইন (এফসিপিএ) একটি গেমচেঞ্জার হতে পারে যদি পাচারকৃত অর্থ মার্কিন আর্থিক ব্যবস্থার মাধ্যমে বিনিয়োগ বা লেনদেন করা হয়। এমনকি বাংলাদেশ ফিফার দুর্নীতি কেলেঙ্কারি থেকে শিক্ষা নিতে পারে এবং এটিকে কাজে লাগিয়ে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত ও বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশিদের টার্গেট করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হলো- সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সহযোগী মন্মথ রঞ্জন বাড়ৈ, যিনি দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত হয়ে ২০২০ সালের এপ্রিলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে যান। আরেকজন হলেন সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান, যিনি যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগ করেছেন বলে জানা গেছে।

সবশেষ, বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) অবশ্যই হাসিনার সহযোগীদের অর্থ পাচারের গন্তব্য হিসেবে বিবেচিত দেশগুলোর সরকারের সঙ্গে কাজ করতে হবে এবং সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের সম্পর্কে আর্থিক গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান বাড়াতে হবে। মানিলন্ডারিং প্রতিরোধে আইনি সহায়তা এবং অর্থ পাচারকারীদের জনপ্রিয় গন্তব্য হিসেবে পরিচিত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সিঙ্গাপুরের সঙ্গে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ হিসেবে সরকার থেকে সরকার অংশীদারিত্ব শুরু করতে হবে।

যদিও বিকল্প পথ খুঁজে বের করতে এবং বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে বাংলাদেশকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। তবে পশ্চিম, মধ্যপ্রাচ্য এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সরকারেরও পাচার করা অর্থ পুনরুদ্ধারে বাংলাদেশকে সহযোগিতা ও সদিচ্ছা দেখানো উচিত।

লেখক: শিক্ষাবিদ, কলামিস্ট ও মানবাধিকার কর্মী

(দ্য ডিপ্লোমেট থেকে বাংলা করা)

মন্তব্য করুন

Radhuni
  • অন্যান্য এর পাঠক প্রিয়