পুলসিরাতের বিষয়ে যা বলছে ইসলাম
পুল শব্দটি ফারসি। এর অর্থ সেতু। আর সিরাত শব্দটি আরবি। এর অর্থ রাস্তা বা পথ। ইসলামী পরিভাষায় এর অর্থ হলো, পারলৌকিক সেতু বা পুল। কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার পর সব মানুষকে পুনরুজ্জীবিত করে হাশরের ময়দানে সমবেত করা হবে। এরপর দুনিয়ার জীবনের বিচার শুরু হবে। এই বিচারের পর হাশরের মাঠ থেকে পুলসিরাত পার হয়ে জান্নাতের দিকে যেতে হবে। পুলসিরাত কোরআন-হাদিসের মাধ্যমে প্রমাণিত বিষয়।
এ বিষয়ে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই যে, তাকে এটা পার হতে হবে না। এটা তোমার প্রতিপালকের অবধারিত ফয়সালা। তারপর আমি ধর্মভীরুদের নিস্তার দেব এবং অত্যাচারীদের অধঃমুখে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব।’ (সুরা মারিয়াম : ৭১-৭২)।
হাদিসে আবু সাঈদ আল-খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, যেখানে আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভ, আল্লাহকে দেখা এবং শাফাআতের কথা আলোচিত হয়েছে, সেখানে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তারপর পুল নিয়ে আসা হবে, এবং তা জাহান্নামের উপর স্থাপন করা হবে।
আমরা (সাহাবিরা) বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, পুল কি? তিনি বললেন, তা পদস্খলনকারী, পিচ্ছিল, যাতে লোহার হুক ও বড়শি এবং চওড়া ও বাঁকা কাটা থাকবে, যা নাজদের সাদান গাছের কাঁটার মত। মুমিনগণ তার ওপর দিয়ে কেউ চোখের পলকে, কেউ বিদ্যুৎগতিতে, কেউ বাতাসের গতিতে, কেউ দ্রুতগামী ঘোড়া ও অন্যান্য বাহনের গতিতে অতিক্রম করবে। কেউ সহিহ সালামতে বেঁচে যাবে, আবার কেউ এমনভাবে পার হয়ে আসবে যে, তার দেহ জাহান্নামের আগুনে ঝলসে যাবে। এমন কি সর্বশেষ ব্যক্তি টেনে-হেঁচড়ে, খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে কোনরকম অতিক্রম করবে। আর কেউ খামচি খেয়ে জান্নামে পতিত হবে।’ (বুখারি, হাদিস : ৭৪৩৯)
ইমাম গাজালি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, ‘পুলসিরাত হলো জাহান্নামের ওপর প্রলম্বিত সেতু, যা তলোয়ারের চেয়ে ধারালো হবে এবং চুলের চেয়েও সূক্ষ্ম হবে। কাফির ও পাপাচারীরা সেখানে পদস্খলিত হয়ে নিচে পতিত হবে। সেখানে জাহান্নাম অবস্থিত থাকবে। আর মহান আল্লাহ ঈমানদারদের পা সুদৃঢ় রাখবেন। ফলে তারা চিরস্থায়ী নিবাসে পৌঁছে যাবে।’ (কাওয়াইদুল আকায়িদ)
ইমাম আশআরি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ‘পুলসিরাত হলো জাহান্নামের ওপর স্থাপন করা দীর্ঘ সেতু। মানুষ তার আমল অনুযায়ী তা পার হবে। মানুষের আমলভেদে পুলসিরাত পার হওয়ার সময় চলার গতির ক্ষেত্রেও তারতম্য হবে।’ (রিসালাতুন ইলা আহলিস সাগার)
আরটিভি/এফএ
মন্তব্য করুন