ফেরাউনের তৈরি মন্দির মাবাদে আবু সাম্বল
আসিয়া, পুরো নাম আসিয়া বিনতে মুজাহিম। তিনি প্রাচীন মিশরের ফেরআউন দ্বিতীয় রামেসিসের স্ত্রী ছিলেন। কাদেশের যুদ্ধ বিজয়কে স্মরনীয় করে রাখার জন্য ১২৪৪ খৃস্টপূর্বে ফেরাউন '২য় রামসিস' (মূসা আ. এর সময় যে ফেরাউন ছিলো) তার প্রিয়তমা স্ত্রী নিফিরতানি (হযরত আসিয়া আ.) আর নিজেকে চির স্মরণীয় করে রাখতে নির্মাণ করছিলেন মা'বাদে আবু সাম্বল। হিসেব কষে নিখুঁত ভাবে সূর্যের কক্ষ পথের সঙ্গে মিল রেখে পাহাড় কেটে এটি তৈরি করতে সময় ব্যয় হয়েছিল ২০ বছর।
মন্দিরটি এত নিখুঁতভাবে নির্মাণ করা হয়েছিল যে, বছরে দুই দিন ২২ফেব্রুয়ারি এবং ২২ অক্টোবর, সূর্যের রশ্মি মন্দিরে প্রবেশ করে মূল হলটি অতিক্রম করে এবং ভিতরে থাকা ভাস্কর্য গুলিকে আলোকিত করে। আর তা দেখতে, সারা বিশ্ব থেকে জড়ো হয় হাজারো পর্যটক।
দ্বৈত মন্দির দুটো কাদেশ বিজয়ের স্মরনে নির্মিত হলেও সেই সময়ের বিখ্যাত দেবতা আমুনের অনুসারী ফেরাউন চেয়েছিল এর মাধ্যমে প্রতিবেশী রাজ্য ও গোত্র গুলোকে বিস্মিত বা মুগ্ধ করা। এছাড়াও তাদের কাছে তৎকালীন মিশরীয় ধর্মকে সমুন্নত করে তোলাও তার একটি বিশেষ উদ্দেশ্য ছিল ।
মন্দিরটির প্রবেশমুখে রয়েছে তাদের ছোট বড় ৮ টি ভাস্কর্য। চারটি বড়, চারটি ছোট, বড় চারটির মধ্যে একটি ফেরাউন এর বাকি তিনটি তার মাবুদদের, আর ছোট চারটিতে একটি তার, আরেকটি তার স্ত্রী (আসিয়া) নিফিরতানির, বাকি দুটি তার উপাস্যদের।
ফারাও যোগ অতিবাহিত হওয়ার পর তা বিরাণ হয়ে ১৮১৩ সাল পর্যন্ত সাহারা মরুভূমির বালিতে ডাকা পরে মানুষের আড়ালে চলে যায়। ১৮১৭ সালে ইটলিয়ান প্রত্নতাও্বিকবিদ বিলুনজির এর তল্লাশিতে আবু সাম্বল নামক এক ছোট বালকের মাধ্যমে প্রাসাদটির সন্ধান পায় ও তাকে পুনোরায় পরিপাটি করে দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।
ষাটের দশকে আসোয়ান হাই ড্যাম নামে সুবিশাল কৃত্রিম এক জলাধার নির্মাণের উদ্যোগ নেন তৎকালীন মিশরের প্রেসিডেন্ট জামাল আবদেল নাসের। জলাধারের জলস্থর বেড়ে গিয়ে মন্দিরের ক্ষতি হতে পারে, এই আশঙ্কায় মন্দির অপেক্ষাকৃত উচূ জায়গায় সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। ইউনেস্কোর এই ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট সরানোর কাজ শুরু হয় পঞ্চাশটি দেশের সহযোগিতায়। সম্পূর্ণ মন্দিরটি ২০-৩০ টন ওজনের বিশাল বিশাল পাথরের ব্লক কেটে নতুন জায়গায় প্রতিস্থাপন করা হয়। হিসেব কষে নিখুঁত ভাবে সূর্যের কক্ষ পথের সঙ্গে মন্দিরের অবস্থানকে আগের মতো করে মিলিয়ে দেওয়া হয়। এই অসাধারণ কাজটি শেষ করতে সময় লেগেছিল চার বছর।
আরটিভি/ ডিসিএনই
মন্তব্য করুন