ভারতীয় গণমাধ্যমের ‘আকাশ-কুসুম’ অপপ্রচার
ঘোড়া উড়ে গেছে আকাশে, কুকুর ও ছাগল মানুষের মতই কথা বলছে কিংবা দৈত্য গিলে নিয়েছে আস্ত মানুষ - উক্তিগুলি যে রূপকথার গল্পের অংশ তা শনাক্ত করতে হয়ত খুব বেশি সময় লাগবে না আপনাদের। তবে সেই একই রকম কথা যদি ভারতীয় মূলধারার গণমাধ্যমগুলো বলে তবে কি অবাক হবেন খুব বেশি?
না, অবাক হওয়ার কিছু নেই। ভারতের সাংবাদিকতা বিশ্বব্যাপি আগে থেকেই যথেষ্ট সমালোচিত এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নানা কারণে হাস্যরসের খোরাক। কখনো দেখা গেছে সাংবাদিক কথা বলছেন রাজনৈতিক দলে কর্মী হয়ে, কখনো বা সংবাদ উপস্থাপনকে বানিয়ে ফেলেছেন টিভিসি বা সিরিয়াল নাটকের অংশ, কখনো আবার উপস্থাপক নিজেই হয়ে যাচ্ছেন আলোচক, আবার আবেগে ঢলে পড়ছেন এদিক ওদিক।
এ ধরণের কোন ধরণের আচরণই আন্তর্জাতিক সাংবাদিকতায় গ্রহণযোগ্য নয়, কিন্তু ভারত এদিক থেকে অনড়। আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতার ধার ধারে না দেশটির গণমাধ্যমগুলো, যত যাই হউক তারা রূপকথার গল্পের ভিত্তিতেই করে যাবেন নিউজ রিপোর্ট।
ইদানিং ভারতীয় গণমাধ্যমে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে যেসব সংবাদ প্রচারিত হচ্ছে তা সত্যিই অনবদ্য। প্রফেশনাল ফেরি টেলস রাইটার ছাড়া
এ ধরনের গল্প লেখা সত্যিই অসম্ভব প্রায়। হয়ত মানের দিক থেকে তারা গুছিঁয়ে আনতে পারছেন না পুরো গল্প বা রিপোর্টটি, তবে চেষ্টা করে যাচ্ছেন আপ্রাণ।
কিন্তু লক্ষ্যে অনেকটাই সফল দেশটির পোর্টালগুলো। ইতোমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় সংবাদের নামে রূপকথার গল্প প্রচার করে পাচ্ছেন হাজার হাজার ‘হা হা রিয়্যাক্ট’। অর্থাৎ মূলধারার গণমাধ্যম হলেও তারা যে মানুষ হাসাতে কোন অংশেই পিছিয়ে নেই তা বেশ পরিষ্কার।
এসব সংবাদ পরিবেশনের ভিত্তিতে অনেক গবেষক বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের মতে- ভারত, বিদ্বেষ বা ঘৃণা থেকে নয় বরং ভয় থেকেই করছে এ ধরনের প্রতিবেদন। কারণ দেশটির সাথে নানা কারণে প্রতিবেশী দেশগুলোর সম্পর্ক ভালো নয়। তার উপর আওয়ামী সরকার পতনের পর থেকে বাংলাদেশও খুব বেশি পরোয়া করছে না তাদের। যেটি ভারতের জন্য একটি ভীতির কারণ। তবে ভীতি থাকলেও নানা কারণে তারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সরাসরি কিছু করবে না। ফলে গণমাধ্যমগুলো এ ধরনের প্রচারণার মধ্য দিয়েই বহি:প্রকাশ করছে তাদের ভয়ের।
যদিও ভারতীয় সাংবাদিকতা দীর্ঘদিন ধরে গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। তবে, সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতীয় সাংবাদিকতার প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বাড়ছে। এর পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে, যা প্রমাণ ও উদাহরণের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা সম্ভব।
সাংবাদিকদের স্বাধীনতা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মূল ভিত্তি। তবে, রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্সের (RSF) ২০২৩ সালের প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্সে ভারত ১৮০টি দেশের মধ্যে ১৬১তম স্থানে রয়েছে। এই অবনমন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ভারতের গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বেগ বাড়িয়েছে। সাংবাদিকদের হুমকি, গ্রেপ্তার এবং আইনগত চাপের ঘটনা ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়েছে। যা স্বাধীন সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে একটি বড় প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে তারা পক্ষপাতভিত্তিক সাংবাদিকতার বাইরে চাইলেও যেতে পারে না।
বিশ্বের বিভিন্ন প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে, ভারতীয় সাংবাদিকতা ধীরে ধীরে একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক এজেন্ডার দিকে ঝুঁকে পড়ছে। বিবিসি এবং আলজাজিরার মতো আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর রিপোর্টে ভারতের মূলধারার সংবাদমাধ্যমকে পক্ষপাতদুষ্ট হিসেবে দেখানো হয়েছে। বিশেষ করে ক্ষমতাসীন সরকারের কার্যক্রম এবং বিরোধী কণ্ঠস্বর দমন নিয়ে ভারতে সাংবাদিকতার ভূমিকা যথেষ্ট প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।
সামাজিক মাধ্যম এবং ইন্টারনেটের যুগে ভুয়া খবরের ব্যাপক প্রসার ঘটছে। ভারতীয় মিডিয়া হাউসগুলোকে মাঝে মাঝে এই ভুয়া খবরের উৎস বা প্রচারক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ভারতের সাংবাদিকতার প্রতি আস্থার অভাব তৈরি করেছে।
ভারতের কিছু মিডিয়া সংখ্যালঘু সম্প্রদায় এবং বিতর্কিত বিষয়গুলোতে পক্ষপাতমূলক কভারেজ করে থাকে বলে অভিযোগ ওঠে। এটি মানবাধিকার সংগঠনগুলোর নজরে এসেছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ২০১৯ সালে কাশ্মীর ইস্যুতে মিডিয়ার ভূমিকা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দারুণভাবে উদ্বিগ্ন করেছে। এমনকি ২০২৪ এর শেষভাগে এসে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে একই আচরণ প্রদর্শন করেছে তারা।
লেখক: অনলাইন এক্টিভিস্ট
আরটিভি/ডিসিএনই
মন্তব্য করুন