চীন-বাংলাদেশের গণমাধ্যমের যোগাযোগ বাড়াতে দিনব্যাপী আয়োজন
চীন ও বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ৫০তম বার্ষিকী উপলক্ষে দুই দেশের মধ্যে গণমাধ্যমের যোগাযোগ ও বন্ধুত্ব আরও জোরদার করতে ঢাকায় ‘বাংলাদেশ-চায়না আপন মিডিয়া ক্লাবের’ লোগো উন্মোচন করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে দিনব্যাপী বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে তিনটি সেশনে পৃথক তিন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। আয়োজন করে চায়না মিডিয়া গ্রুপ (সিএমজি) বাংলাদেশ ব্যুরো।
দিনের শুরুতেই ক্লাবের লোগো উন্মোচন করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন। এ ছাড়া জাতীয় প্রেস ক্লাব, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি ও বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করে সিএমজি।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে চীনের গল্প আরও বেশি করে তুলে ধরার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের চীন সম্পর্কে জানা দরকার। আর এই জায়গায় মূল ভূমিকা রাখতে পারে সিএমজি।’
তিনি আরও জানান, গত কয়েক দশকে চীনের অভাবনীয় উন্নতি, আধুনিক প্রযুক্তি এবং বাংলাদেশে চীনা কোম্পানির বিনিয়োগ সম্পর্কে আরও বেশি তথ্য বাংলাদেশি মিডিয়ার তুলে ধরা উচিত।
পরে চীনের রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক অব্যাহকভাবে স্থিতিশীল রয়েছে। আগামীতেও এই ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আশা করি। চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ আদান-প্রদানের ইতিহাস হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে বিস্তৃত। জাতি, বিশ্বাস ও ভাষার স্বাতন্ত্র্য সত্ত্বেও আমরা সব সময় শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান, সম্প্রীতি ও পারস্পরিক লাভজনক সহযোগিতা বজায় রেখেছি।’
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে বাংলাদেশ বেতারের মহাপরিচালক এ এস এম জাহীদ, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার চিফ রিপোর্টার মুরসালিন নোমানি, চীনা দূতাবাসের কালচারাল কাউন্সেলর লি শাওফেং, সিএমজির বাংলা বিভাগের পরিচালক ইয়ু কুয়াং ইউয়ে, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির প্রেসিডেন্টসহ বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সাংবাদিক সংগঠনের বিশিষ্ট সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া এই উদ্যোগের সফলতা প্রত্যাশা করে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বিশেষ ভিডিওবার্তা দিয়েছেন।
একই ভেন্যুতে দ্বিতীয় অনুষ্ঠানে বিকালে ‘চায়না থ্রু লিটারেচার’ শীর্ষক রাইটার্স ফোরাম অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ। তিনি বলেন, ‘চীনের সঙ্গে আমাদের অনেক কিছু নিয়ে কাজ করার সুযোগ আছে। বাংলাদেশিদের কথা মাথায় রেখে চীনের কুনমিংয়ে হেলথ সার্ভিস ও পর্যটন সার্ভিস গড়ে তুললে দুই দেশের সম্পর্ক আরও গভীর হবে। কারণ বাংলাদেশের মানুষ উন্নত চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন দেশে যায়। চীনের সঙ্গে চিকিৎসা ক্ষেত্রে আরও সম্পর্ক উন্নত করতে পারি আমরা।’
বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা দূতাবাসের কালচারাল কাউন্সেলর লি শাওফেং বলেন, ‘চীনের বৈশিষ্ট্যময় আধুনিকায়ন ও ঐতিহ্য চর্চার মাধ্যমে সাংস্কৃতিক বিনিময় আরও গভীর হবে।’
বাংলাদেশের বিশিষ্ট লেখক, প্রকাশক ও সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে এ সময় চীন বিষয়ক বইয়ের তিন লেখককে বিশেষ সম্মাননা ও ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। পরে চীন ও বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক যোগাযোগ স্থাপনে দুই দেশের লেখকদের মধ্যে বিনিময়, পর্যটন, কর্মশালা এবং অনুষ্ঠান আয়োজনের গুরুত্ব তুলে ধরেন লেখক ও সাংবাদিক ড. মাহবুব হাসান, আবদুল হাই শিকদার, জাকির আবুজাফরসহ বিশিষ্ট লেখকরা।
সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘মিট দ্য অডিয়েন্স’ শীর্ষক আরেকটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সিএমজি বাংলা আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে সিএমজির দর্শক, শ্রোতা, পাঠক ও ফ্যানদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সুযোগ করে দেওয়া হয়। এ সময় সিএমজির বাংলা বিভাগের পরিচালক ইয়ু কুয়াং ইউয়েসহ গণমাধ্যমটির বিভিন্ন অনুষ্ঠানের উপস্থাপকরা উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া সিএমজির বিভিন্ন অনুষ্ঠান সম্পর্কে মতামত ও পরামর্শ জানান উপস্থিত দর্শকরা।
এ সময় গণমাধ্যমটির দর্শক, শ্রোতা ও পাঠকরা জানান, সিএমজি বাংলার অনুষ্ঠান দেখে তারা চীন সম্পর্কে অনেক নতুন তথ্য জানতে পেরেছেন ও অনুপ্রাণিত হয়েছেন। পরে দর্শকদের অভিমত শুনে ভবিষ্যতে আরও ভালো অনুষ্ঠান তৈরির প্রতিশ্রুতি দেন উপস্থিত সিএমজি বাংলার কর্মকর্তারা।
অনুষ্ঠানে দর্শক ছাড়াও চায়না মিডিয়া গ্রুপের মিডিয়া সহযোগী আরটিভি, দীপ্ত টিভি, বাংলাভিশন ও রেডিও টুডের উচ্চপস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে কুইজ ও র্যাফেল ড্র প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের হাতে মোবাইল ফোন, স্মার্ট ওয়াচসহ বিভিন্ন পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।
আরটিভি/এফএ
মন্তব্য করুন