‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ কখন, কেন পড়বেন
‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ অর্থ ‘আল্লাহ ছাড়া কোনো ভরসা নেই, কোনো ক্ষমতা বা শক্তি নেই।’ অর্থাৎ মানুষের সক্ষমতা, শক্তি ও সাহস যত বেশিই থাকুক না কেন, আল্লাহর তাআলা না চাইলে মানুষ কিছুই করতে পারে না। আল্লাহ তায়ালা শক্তি ও তাওফিক না দিলে মানুষ কোনো ভালো কাজ করতে সক্ষম নয়, কোনো গুনাহ থেকে বেঁচে থাকতেও সক্ষম নয়। ইসলামে বাক্যটি অনেক মূল্যবান ও ফজিলতপূর্ণ।
হজরত আবু মুসা আশআরি (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (স.) একবার আমাকে বললেন, ‘তোমাকে জান্নাতের অন্যতম ধনভাণ্ডারের কথা কি বলে দেব?’ আমি বললাম, অবশ্যই বলে দিন, হে আল্লাহর রাসুল! তিনি বললেন- لاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللهِ ‘লা হাওলা ওয়া লা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’। (বুখারি: ২৯৯২; মুসলিম: ২৭০৪, তিরমিজি: ৩৩৭৪; আবু দাউদ: ১৫২৬)
‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ কেন পড়বেন
মানুষের ব্যক্তিগত শক্তি, সামর্থ্য, ক্ষমতা ও সাহস আল্লাহ তাআলার দান এবং তা যত বেশিই হোক না কেন আল্লাহ তাওফিক না দিলে কোনো ধরনের উপকারে আসবে না—এর স্বীকারোক্তি হিসেবেই বাক্যটি পাঠ করা হয়। অর্থাৎ আল্লাহর সত্ত্বা সবকিছুর ঊর্ধ্বে, সব শক্তিধর বস্তু আল্লাহ তাআলার সামনে একেবারে তুচ্ছ ও ছোট—এটিই লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ পাঠের অন্যতম কারণ।
‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ কখন পড়বেন
হাদিসে বিভিন্ন সময় লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ পাঠ করার কথা পাওয়া যায়। যেমন— নিজের সক্ষমতার বাইরে কোনো পরিস্থিতি ও কাজের মুখোমুখি হলে এই ব্যাকটি পড়তে হয়। এ ছাড়াও শয়তানের প্রতারণা ও আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য এই দোয়াটি পড়া হয়।
উবাদা বিন সামেত (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, যে ব্যক্তি এই দোয়া পড়ে আল্লাহ তাআলার কাছে নিজের গুনাহ থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করবে অথবা যেকোনো দোয়া করবে, আল্লাহ তাআলা তার দোয়া কবুল করবেন। দোয়াটি হলো- لا إِلَهَ إِلا اللَّهُ وَحْدَهُ لا شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ الْحَمْدُ لِلَّهِ وَسُبْحَانَ اللَّهِ وَلا إِلَهَ إِلا اللَّهُ وَاللَّهُ أَكْبَرُ وَلا حَوْلَ وَلا قُوَّةَ إِلا بِاللَّهِ উচ্চারণ: ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারিকালাহু-লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা কুল্লু শাইয়িন কাদির, আলহামদুলিল্লাহি ওয়া সুবহানাল্লাহি ওয়ালা ইলাহা ইল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার, ওয়ালা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।’ অর্থ: ‘এক আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোনো ইলাহ নেই। তিনি এক, তাঁর কোন শরিক নেই। রাজ্য তাঁরই। যাবতীয় প্রশংসা তাঁরই। তিনিই সবকিছুর উপরে শক্তিমান। যাবতীয় হামদ আল্লাহরই জন্য, আল্লাহ তাআলা পবিত্র, আল্লাহ ব্যতীত সত্য কোনো ইলাহ নেই। আল্লাহ মহান, আল্লাহ ছাড়া কোনো ভরসা নেই; কোনো ক্ষমতা বা শক্তি নেই।’ (সহিহ বুখারি: ১১৫৪)
আজানের দুই বাক্য হাইয়া আলাস সালাহ ও হাইয়া আলাল ফালাহের উত্তরেও এই বাক্যটি পাঠ করা হয়। আবু জর (রা.) থেকে বর্ণনা করেন, রাসুল (স.) আমাকে একবার বললেন—‘আমি কি তোমাকে জান্নাতের গুপ্তধনগুলোর একটির সন্ধান দেবো না? আমি বললাম, হ্যাঁ, আল্লাহর রাসুল। তিনি বলেন, ‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লাবিল্লাহ’। মুয়াজ্জিন আজানের সময় যখন ‘হাইয়া আলাস সালাহ ও হাইয়া আলাল ফালাহ’ বলে তখন ‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ বলতে হয়। (মুসলিম: ৫৭৮, আবু দাউদ: ৪৪৩)
ঘর থেকে বের হওয়ার সময়ও লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ পড়া সুন্নত এবং এর প্রতিদান অনেক। হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) বলেন, যে ব্যক্তি ঘর থেকে বের হওয়ার সময় এই দোয়াটি পড়বে আল্লাহ তাআলা তার জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবেন এবং শয়তানও তার থেকে দূর হয়ে যাবে। দোয়াটি হলো— بِسْمِ اللَّهِ تَوَكَّلْتُ عَلَى اللَّهِ لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ উচ্চারণ: ‘বিসমিল্লাহি তাওয়াক্কালতু আলালাহ, লা-হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।’ অর্থ: আল্লাহর নামে, আল্লাহ তাআলার ওপরই নির্ভর করলাম, আল্লাহ তাআলার সাহায্য ছাড়া বিরত থাকা ও মঙ্গল লাভ করার শক্তি কারো নেই। (আবু দাউদ: ৪৪৩১; তিরমিজি: ৩৪২৬)
উল্লেখিত সময়গুলো ছাড়াও তথা যেকোনো সময় লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ বাক্যটির জিকির করা যায়। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, পৃথিবীর বুকে যে ব্যক্তি বলে, ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার, ওয়ালা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ তার অপরাধগুলো ক্ষমা করে দেওয়া হয়, যদিও তা সাগরের ফেনারাশির মতো (বেশি পরিমাণ) হয়। (জামে তিরমিজি: ৩৪৬০)
হাজিম ইবনে হারমালা (রা.) বলেন, আমি নবী (স.)-এর কাছ দিয়ে যাচ্ছিলাম। তিনি আমাকে বলেন, ‘হে হাজিম! তুমি অধিক সংখ্যায় لاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللهِ ‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ বাক্যটি পড়ো। কেননা তা হলো জান্নাতের গুপ্তধন। (বুখারি: ৪২০৪, ৬৩৮৪, ৬৪০৯, ৭৩৮৬, মুসলিম: ৫৮৯)
আরটিভি/একে
মন্তব্য করুন