• ঢাকা বুধবার, ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ৮ মাঘ ১৪৩১
logo

কর্মহীনতায় বাড়ছে দারিদ্রতা

হাসান আল বান্না

  ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ১৩:৩৪
লেখক: হাসান আল বান্না

মানুষের জীবনযাপনে প্রতিদিনই ব্যয় বাড়ছে, কিন্তু সেই অনুযায়ী আয় বাড়ছে না। উল্টো বাড়ছে বেকারত্ব। ফলে দারিদ্রতাও ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। ‘উচ্চশিক্ষিত থেকে শুরু করে অশিক্ষিত’ সব পর্যায়ের মানুষের মধ্যে বেকারত্ব বাড়ছে। মানুষের কর্মসংকট আমরা বেশ কিছু দিক লক্ষ্য করলে বুঝতে পারবো। যেমন- যারা রাজধানীতে বসবাস করছি তারা ভোরে বাসা থেকে বের হলে বেশ কিছু মোড়ে দেখতে পাবো মানুষ বসে আছে কর্মের অপেক্ষায়। যেখান থেকে সর্দার বা ঠিকাদাররা দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে লোকজনকে কাজে নেন। এক অনিশ্চয়তা নিয়ে ওই মানুষগুলো ঘর থেকে বের হচ্ছেন- আজ কাজ পাবেন কিনা তার কোনো নিশ্চয়তাই নেই ত্রা কাছে, তবুও তিনি বের হন কাজের সন্ধানে। অনেক সময় দেখা যাচ্ছে বেলা বেড়ে গেলেও অপেক্ষমানদের একটি অংশ কোনো কাজ না পেয়ে অলস বসে আছেন।

আবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় দেখা যায় ফ্রিতে দরিদ্র মানুষদের খাবার দিচ্ছে বিভিন্ন সেবা সংস্থা বা ব্যক্তিগত উদ্যোক্তরা। ওই ফ্রি খাবারের জন্য দীর্ঘ লাইন দেখলে যে কেউ বুঝতে পারবেন মানুষের ক্ষুধা ও অসহায়ত্ব কতোটা। এছাড়াও আমরা যদি দেখি ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) গাড়ির সামনে ক্রেতাদের চিত্র। যেখানে সরকারি ব্যবস্থাপনায় অপেক্ষাকৃত কম মূল্যে বেশ কয়েকটি পণ্য বিক্রি করা হয়। সেখানে ফ্রি বা বিনামূল্যে কিছুই দেওয়া হয় না। আর সেই কমমূল্যে পণ্য কিনতে মানুষের দীর্ঘ লাইন ও সীমাহীন প্রতিযোগিতা দেখে সবাই বুঝতে পারছেন মানুষের আর্থিক অবস্থা কেমন। কর্মহীনতার কারণে মানুষের দারিদ্রতা কমছে না।

সরকারি তথ্য বলছে, প্রতি বছরই বেকারত্ব বাড়ছে। সর্বশেষ সরকারি হিসেবে বর্তমানে দেশে ২৫ লাখ ৯০ হাজার বেকার আছেন। ২০২৩ সাল শেষে গড় বেকারের সংখ্যা ছিল ২৪ লাখ ৭০ হাজার। এর মানে গত বছরের তুলনায় এখন দেশে বেকারের সংখ্যা বেশি। গত বছরের প্রথমার্ধে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) শ্রমশক্তি জরিপে এমন তথ্য জানানো হয়েছে। এই জরিপ প্রতিবেদনে গতবছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত বেকার পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়েছে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) নিয়ম অনুসারে, যাঁরা সাত দিনের মধ্যে মজুরির বিনিময়ে এক ঘণ্টা কাজ করার সুযোগ পাননি এবং গত এক মাস ধরে কাজপ্রত্যাশী ছিলেন, তাঁরা বেকার হিসেবে গণ্য হবেন। বিবিএস এই নিয়ম অনুসারেই বেকারের হিসাব দিয়ে থাকে। বিবিএসের হিসাব অনুসারে, ২০২৩ সালের প্রথম প্রান্তিকেও ২৫ লাখ ৯০ হাজার বেকার ছিল। সেই হিসাবে চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে বেকারের সংখ্যা বাড়েনি। বর্তমানে বেকারের হার ৩ দশমিক ৫১ শতাংশ, যা ২০২৩ সালের গড় বেকারের হারের চেয়ে কিছুটা বেশি। ২০২৩ সালের গড় বেকারের হার ছিল ৩ দশমিক ৩৬ শতাংশ। এদিকে পুরুষ বেকারের সংখ্যা বেড়েছে, নারী বেকার কমেছে। বিবিএস হিসাব অনুসারে, গত মার্চ মাস শেষে পুরুষ বেকারের সংখ্যা ছিল ১৭ লাখ ৪০ হাজার। ২০২৩ সালের প্রথম প্রান্তিকে (মার্চ-জানুয়ারি) সময়ে এই সংখ্যা ছিল ১৭ লাখ ১০ হাজার। অন্যদিকে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩০ হাজার নারী বেকার কমেছে। এখন নারী বেকারের সংখ্যা ৮ লাখ ৫০ হাজার।

দেশে প্রবৃদ্ধির হার যেভাবে বেড়েছে, দারিদ্র্য বিমোচনের হার সেভাবে বাড়েনি। এটা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, এই প্রবৃদ্ধি আসলে কতটা অন্তর্ভুক্তিমূলক হলো? এবং যদি অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি না হয় তাহলে তো সেভাবে দারিদ্র্য বিমোচন করতে পারবে না। সুতরাং, দারিদ্র্যের হার অর্ধেকে কমিয়ে আনা, চরম দারিদ্র্য বিমোচনের ক্ষেত্রে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে প্রবৃদ্ধির প্রক্রিয়াকে অন্তর্ভুক্তিমূলক করতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রথমেই দেখতে হবে, প্রবৃদ্ধি অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছে কি না। দেখা যায়, প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে বড় অসংগতি আছে। উচ্চ প্রবৃদ্ধির পরও কর্মসংস্থান সৃষ্টির হার সেভাবে শক্তিশালী নয়। একমাত্র কর্মসংস্থানই পারে সাফল্যের সঙ্গে দারিদ্র্য কমাতে। প্রবৃদ্ধির প্রক্রিয়াকে অন্তর্ভুক্তিমূলক করতে হবে। শ্রমঘন কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। অর্থনীতিতে কৃষির বাইরে শিল্প ও সেবা খাতে শ্রমঘন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের গতিশীল প্রক্রিয়া সেভাবে শক্তিশালী নয়। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড নির্দিষ্ট কয়েকটি খাতভিত্তিক। এর অন্যতম হলো পোশাক খাত। এগুলোর বহুমুখীকরণ দরকার, যাতে বিভিন্ন খাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হতে পারে।

বর্তমানে বাংলাদেশে যে দারিদ্র্য আছে তাও পর্যায়ক্রমে কমিয়ে আনতে হবে। তবেই বাংলাদেশ উন্নত দেশের কাতারে শামিল হতে পারবে। আর এই কাজ শুধু সরকারের একার নয়, প্রত্যেক স্বাবলম্বী নাগরিকেরই এই উদ্যোগে অংশগ্রহণ করা উচিত। তরুণদেরও পিছিয়ে থাকার সুযোগ নেই। সরকার, বিত্তশালী ও তরুণ সমাজ মিলে সম্মিলিত উদ্যোগ নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।

লেখক: হাসান আল বান্না, সাংবাদিক ও কলামিস্ট

মন্তব্য করুন

Bangal
rtv Drama
Radhuni
  • অন্যান্য এর পাঠক প্রিয়