তুমি আমার বীর
সারার কাছে তার মা একজন বীর। কারণ তার মা যেমন একজন আদর্শ মা সেই সাথে একজন বিশ্ব বিখ্যাত বিজ্ঞানী। কিন্তু সারার মা পর্যন্ত করোনা ভাইরাসের কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কার করতে পারছেন না।
সারা মা কে জিজ্ঞেস করলো 'কোভিড-19 দেখতে কেমন?'
মা বললেন, 'কোভিড-19 বা করোনা ভাইরাস এতটাই ছোট যে আমরা তাকে দেখতে পাই না।'
তিনি আরও বললেন, 'কিন্তু এটি আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচিকাশির মাধ্যমে এবং আক্রান্ত ব্যক্তিরা যদি আশে পাশের মানুষদের সংস্পর্শে আসে বা জিনিস পত্র স্পর্শ করে তাহলে ছড়ায়। যারা আক্রান্ত হয় তাদের জ্বর, কাশি এবং শ্বাসকষ্ট হতে পারে।'
এবার সারা মা কে জিজ্ঞেস করলো, 'তাহলে আমরা এর সাথে যুদ্ধ করতে পারি না কারণ আমরা একে দেখতে পাই না এই জন্য?'
'আমরা এর সাথে যুদ্ধ করতে পারি,' সারার মা বললেন। তিনি আরও বললেন, 'একারণেই আমি চাই তুমি সুস্থ থাকো, সারা। এই ভাইরাসটি বিভিন্ন ধরনের মানুষকে আক্রমণ করে এবং সকলেই আমাদেরকে এর বিরুদ্ধে যুদ্ধে সাহায্য করতে পারে। শিশুরা অসাধারণ এবং তারাও সাহায্য করতে পারে। আমারদের সকলের সুস্থতার জন্য তোমাদের সুস্থ থাকা প্রয়োজন। আমি তোমাকে আমার বীর হিসেবে দেখতে চাই।'
রাতে বিছানায় শুয়ে সারার নিজেকে মোটেও বীর মনে হয়নি। এ কারণে তার মন খারাপ লাগছিল। সে স্কুলে যেতে চেয়েছে কিন্তু তার স্কুলও ছুটি। সে তার বন্ধুদের সাথে দেখা করতে চেয়েছে কিন্তু এটা নিরাপদ নয়। সারা করোনাভাইরাসকে থামাতে চায়, করোনাভাইরাস যেনো তার পৃথিবীটাকে আর আতঙ্কিত না করতে পারে।
ঘুমোনোর সময় চোখ বুজে সে নিজেকে বললো, 'বীরদের বিশেষ শক্তি থাকে,আমার কি আছে?'
আচমকা অন্ধকার থেকে মৃদু কণ্ঠে কেও একজন সারার নাম ধরে ডাকলো।
সারা মৃদুস্বরে জিজ্ঞেস করলো, 'কে ওখানে?'
সেই কণ্ঠ সারাকে জিজ্ঞেস করলো, 'বীর হওয়ার জন্য তোমার কী প্রয়োজন সারা?'
সারা বললো, 'আমি এমন একটি পন্থা চাই যার মাধ্যমে আমি বিশ্বের সকল শিশুদের জানাতে পারবো যে তারা কি করে নিজেদেরকে রক্ষা করবে এবং অন্য সকলকেও রক্ষা করতে পারবে।'
এবার কণ্ঠটি বললো, 'তাহলে আমার থেকে তুমি কী চাও?'
সারা বললো, 'আমি এমন কিছু চাই যা উড়তে পারবে, যার উচ্চকণ্ঠ থাকবে এবং যা আমাকে সাহায্য করতে পারবে।'
আচমকা জোসনার আলোতে আশ্চর্যজনক কিছু একটা তার সামনে এলো...
সারা হতভম্ব হয়ে বললো, 'তুমি কে?'
সে উত্তরে বললো, 'আমি এরিও,'
সারা বললো, 'আমি আগে কখনো কোনো এরিওকে দেখিনি,'
এরিও বললো, 'আমি এখানে সর্বক্ষণই ছিলাম, আমি তোমার মনের ভেতর থেকে এসেছি।'
সারা বললো, 'যদি তুমি আমার কাছে থাকো...তাহলে তো আমি বিশ্বের সকল শিশুদেরকে করোনাভাইরাস সম্পর্কে জানাতে পারবো! আমি একজন বীর হতে পারবো! কিন্তু এরিও এই করোনাভাইরাসের সময় আশেপাশে ভ্রমণ করা কি নিরাপদ হবে?'
এরিও বললো, 'শুধুমাত্র আমার সাথে নিরাপদ সারা, আমরা একত্রে থাকলে কোনো কিছুই তোমার ক্ষতি করতে পারবে না।'
তাই সারা এরিওর পিঠের উপর উঠে বসলো এবং তারা একত্রে সারার শোবার ঘরের জানালা দিয়ে রাতের আকাশে উড়ে গেলো। তারা তারাদের মাঝ দিয়ে উড়ে গেলো এবং চাঁদকেও হ্যালো বললো।
সূর্য উদয়ের পর তারা একটি সুন্দর মরুভূমিতে নামলো যেখানে পিরামিড ছিল। সেখানে কিছু শিশু খেলা করছিল। শিশুরা আনন্দে চিৎকার করে উঠলো এবং সারা ও তার এরিওর দিকে এলোমেলোভাবে হাত নাড়াতে থাকলো।
একটি বালক চিৎকার করে বললো, 'স্বাগতম, আমি সেলিম! তোমরা এখানে কী করতে এসেছ? দুঃখিত আমরা তোমাদের কাছে যেতে পারবো না, আমাদেরকে একে অপর থেকে অন্তত এক মিটার দূরত্বে থাকতে হবে!'
সারা উত্তরে বললো, 'একারণেই আমরা এখানে এসেছি, আমি সারা এবং আমার সাথে আছে এরিও, তোমরা কি জানো, শিশুরা তাদের প্রতিবেশী, বন্ধু, বাবা-মা এবং -দাদা-দাদীকে করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষিত রাখতে পারে? আমাদের সকলের জানা প্রয়োজন...।'
সেলিম মুচকি হেসে উত্তর দিলো, 'আমরা জানি সারা, আমাদের সকলের সাবান এবং পানি দিয়ে হাত ধুতে হবে। আমরা অসুস্থ হলে কাশি দেওয়ার সময়ও আমাদের কনুই দিয়ে আটকে নেই এবং মানুষের সাথে দেখা হলে আমরা তাদের হাতে হাত না মিলিয়ে দূর থেকে হাত নাড়াই। আমরা বাড়ির ভেতরে থাকার চেষ্টা করি, কিন্তু আমরা অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ শহরে বাস করি... সকলে বাড়ির ভেতরে থাকছে না।'
এরিও বললো, 'হুম, সম্ভবত আমি এক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারবো। তারা করোনাভাইরাসকে দেখতে পায় না, কিন্তু... তারা আমাকে দেখতে পারবে! লাফ দিয়ে ওঠো, কিন্তু অনুগ্রহ করে আমার দুই ডানার উপরে বসবে কারণ দুই ডানার মাঝে অন্তত এক মিটার দূরত্ব আছে!'
এরিও সেলিম এবং সারাকে দুই ডানায় বসিয়ে আকাশে উড়ে গেলো। সে সমগ্র শহর জুড়ে উড়ে বেড়ালো এবং গর্জন করতে লাগলো ও গাইতে লাগলো। সেলিম পথের শিশুদের উদ্দেশ্যে চিৎকার করতে লাগলো:
'বাড়ি যাও এবং তোমাদের পরিবারকে বলো আমরা বাড়ির ভেতরে অধিক সুরক্ষিত! আমরা বাড়ির ভেতরে থেকেই সর্বশ্রেষ্ঠ উপায় একে অপরের দেখাশোনা করতে পারি!'
মানুষ অবাক হয়ে তাদের দেখলো। এলোমেলোভাবে ছুটতে শুরু করলো ও নিজেদের বাড়ি যেতে সম্মতি প্রকাশ করলো।
এরিও আকাশের অনেক উঁচুতে উড়ে গেলো, সেলিম আনন্দে চিৎকার করে উঠলো। আকাশের উপরে মেঘেদের মধ্য দিয়ে একটি উড়োজাহাজ উড়ে গেল এবং যাত্রীরা আতঙ্কিত হয়ে তাদের দেখলো।
সেলিম বললো,'মানুষের ভ্রমণ করা দ্রুত বন্ধ করতে হবে, অন্তত এই মুহূর্তে!'
সারা বললো, 'তারা পৃথিবীর বিভিন্ন সীমানা অতিক্রম বন্ধ করেছে। আমাদের উচিৎ নিজেদের প্রিয় মানুষদের সাথে আমরা যেখানে আছি সেখানেই অবস্থান করা।'
'কিছু বিষয় দেখে মনে হচ্ছে তারা অনেক পরিবর্তন হয়েছে, আমি মাঝেমধ্যেই বাড়িতে বসে এসব নিয়ে আতঙ্কিত হই।'
এরিও বললো, 'যখন কোনো কিছু পরিবর্তন হয় তখন আতঙ্ক এবং বিভ্রান্তি তৈরি হতে পারে সারা, যখন আমি আতঙ্কিত হই তখন আমি ধীর গতিতে শ্বাস নেই এবং শ্বাসের সাথে আগুনের পিণ্ড বাহির করি।'
এরিও ফুঁ দিয়ে একটি প্রকাণ্ড আগুনের পিণ্ড প্রবাহিত করলো।
এরিও সারা এবং সেলিমকে জিজ্ঞেস করলো, 'যখন তোমরা আতঙ্কিত হও তখন কি উপায়ে মনকে শান্ত করো?'
সারা বললো, 'আমি ঐ মুহূর্তে এমন কাউকে নিয়ে ভাবতে পছন্দ করি যে আমাকে সুরক্ষিত রাখতে পারে।'
সেলিম বললো, 'আমিও তাই করি, আমি তখন তাদের নিয়ে ভাবি যারা আমাকে সুরক্ষিত অনুভব করতে সাহায্য করে, যেমন আমার দাদা-দাদু, আমার তাদের কথা মনে পরে। আমি তাদেরকে সজোরে আলিঙ্গন করতে পারি না কারণ আমার দ্বারা তাদের মধ্যে করোনাভাইরাস ছড়াতে পারে। আমরা প্রতি সপ্তাহে নিয়মিত তাদের সাথে দেখা করতাম কিন্তু এখন করি না কারণ আমাদের তাদেরকে সুরক্ষিত রাখতে হবে।'
সারা তার বন্ধুকে জিজ্ঞেস করলো, 'তুমি কি তাদেরকে টেলিফোন করতে পারো।'
সেলিম বললো, 'হ্যাঁ অবশ্যই! তারা আমাকে প্রতিদিন টেলিফোন করে এবং আমরা প্রতিদিন বাড়িতে যা যা করি সব কিছু সম্পর্কে আমি তাদেরকে জানাই। এতে আমার ভালো অনুভূতি হয় এবং তাদেরও ভালো লাগে।'
এরিও বললো, 'আমরা যাদের ভালোবাসি কিন্তু এই মুহূর্তে দেখতে পাচ্ছি না তাদেরকে মনে করা খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। এতে প্রকাশ পায় আমরা তাদের কতটা যত্ন করি।'
'আরও কিছু বীরের সাথে দেখা করলে কি তোমাদের ভালো লাগবে?'
সারা এবং সেলিম চিৎকার করে বললো, 'হ্যাঁ অবশ্যই!'
'উত্তম, আমার বন্ধু সাসার কাছে একটি বিশেষ মহাশক্তি আছে, চলো সেখানে যাওয়া যাক!'
তাই তারা ভূমিতে নামার জন্য উড়ে গেলো এবং একটি ছোট্ট গ্রামের কাছে নামলো। সেখানে একটি মেয়ে তার বাড়ির বাহিরে ফুল কুড়াচ্ছিল। যখন সে এরিওকে এবং তার ডানায় বসা শিশুদেরকে দেখলো- হেসে দিলো।
সে চিৎকার করে উঠলো, 'এরিও!' সে আরও বললো, 'আমাদের অন্তত এক মিটার দূরত্বে থাকতে হবে তাই আমি তোমাকে এখান থেকে একটা আলিঙ্গন ছুড়ে মারছি! তোমরা সকলে কেমন আছো?'
এরিও বললো, 'সাসা তুমি যখনই আলিঙ্গনের কথা বলেছো আমি তখনি তা পেয়েছি, আমদের সতর্কতা প্রকাশ করে কথা বলা এবং ক্রিয়াকলাপের এ উপায়টা আমি ভালোবাসি। আমি আমার বন্ধুদেরকে তোমার মহাশক্তির সম্বন্ধে জানাতে চেয়েছি।'
সাসা বললো, 'কোনটা আমার মহাশক্তি?'
এরিও বললো,'যখন তোমার পরিবারের কেউ অসুস্থ হয়েছে তখন থেকে তুমি বাড়িতেই থাকছো, এটা নিশ্চিত করার জন্য যে তোমার মাধ্যমে যেন অন্য কেও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত না হয়।'
সাসা বললো, 'হ্যাঁ আমার বাবা আক্রান্ত এবং তিনি যতদিন না পরিপূর্ণ সুস্থ হবেন ততদিন তার শোবার ঘরে থাকবে।'
'কিন্তু এটা একেবারে খারাপ না! আমরা গেম খেলতে পারি, রান্না করতে পারি, বাগানে সময় কাটাতে পারি এবং একত্রে খাবার খেতে পারি। আমার ভাইয়েরা এবং আমি একে অপরের পায়ের আঙ্গুল স্পর্শ করে নৃত্য করি। আমরা বই পড়ি এবং আমি লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছি কারণ মাঝে মাঝে আমার স্কুলের কথা মনে পরে। বাড়িতে থাকা প্রথম কিছুদিন অদ্ভুত লেগেছিল কিন্তু এখন স্বাভাবিক অনুভব হয়!'
এরিও বললো, 'এটা সবসময় অতটা সহজ নয় সাসা, তুমি তোমার প্রিয় মানুষদের সাথে বাড়িতে আনন্দে সময় কাটানোর উপায় খুঁজে নিয়েছো, এ কারণেই তুমি আমার বীর!'
সেলিম জিজ্ঞেস করলো, 'তুমি কি কখনো তোমার পরিবারের সাথে ঝগড়া করেছ?'
সাসা বললো, 'আমরা মাঝে মাঝে ঝগড়া করি, আমাদেরকে অতিরিক্ত ধৈর্যধারণ করতে হয়, অতিরিক্ত বুঝদার হতে হয়, এবং এমনকি দ্রুত নিজের ভুল শিকার করে দুঃখিত বলতেও জানতে হয়। এটাই একটি সত্যিকারের মহাশক্তি কারণ এটি আমাদের নিজেদেরকে এবং অন্যদেরকেও ভালো অনুভব করতে সাহায্য করে। আমার নিজের একান্ত কিছু সময়ও প্রয়োজন হয়। আমি একাকী নৃত্য করতে এবং গান গাইতে ভালবাসি! এবং আমি মাঝে মাঝে আমার বন্ধুদেরও টেলিফোন করি...'
সারা বললো,'কিন্তু এরিও যে সকল মানুষেরা বাড়ি থেকে অনেক দূরে বা যাদের থাকার মত বাড়িও নেই তাদের কি হবে?'
এরিও বললো, 'চমৎকার প্রশ্ন করেছো সারা, চলো আমরা তাদের খুঁজতে যাই।'
এবং তাই তারা সাসাকে বিদায় জানালো এবং আরও একবার যাত্রা শুরু করলো। বাতাস উষ্ণতর হচ্ছিলো কারণ তারা সমুদ্রের মাঝে একটি দ্বীপে নামলো।
সেখানে তারা অনেক মানুষে পূর্ণ একটি চত্বর দেখলো।
একজন বালিকা তাদের দেখে দূর থেকে হাত নাড়ালো।
সে বললো, 'হাই এরিও, তোমার সাথে আবার দেখা হওয়ায় আমি অত্যন্ত আনন্দিত! আমরা অন্তত এক মিটার দূরত্বে থাকতে চেষ্টা করছি, তাই আমি এখান থেকেই তোমার সাথে কথা বলবো। কিন্তু আমি তোমার বন্ধুদের সাথে পরিচিত হতে আগ্রহী! আমার নাম লায়লা।'
সারা বললো, 'হাই লায়লা, আমি সারা এবং ও সেলিম। মনে হচ্ছে তোমরা করোনাভাইরাস থেকে নিজেকে নিরাপদ রাখতে চাও, এর জন্য তোমরা আর কী কী করছো?'
লায়লা বললো, 'আমরা সাবান এবং পানি দিয়ে আমাদের হাত ধুই!'
সেলিম জিজ্ঞেস করলো, 'তোমরা কি কাশি দেওয়ার সময় কনুই দিয়ে ঢেকে কাশি দাও?'
লায়লা সেলিমকে বললো, 'তুমি কি কাশি দেওয়ার উপায়টি আমাদের দেখাতে পারবে?' তাই সেলিম তাদেরকে উপায়টি দেখালো।
লায়লা বললো, 'আমরা সকলেই সাহসী হতে চাই কিন্তু আমি একটি বিষয় নিয়ে চিন্তিত, আমি কি এ বিষয়ে তোমার সাথে কথা বলতে পারি? আমি শুনেছি কেও একজন অসুস্থ হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন এবং এ বিষয়টি আমাকে ভীত করেছে। এটা কি সত্যি যে মানুষ করোনাভাইরাসের কারণে মৃত্যুবরণ করতে পারে?'
এরিও একটি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে তার প্রকাণ্ড নিতম্বের উপর ভর করে বসে পড়লো এবং বললো, 'হ্যাঁ, ছোট্ট বীরেরা, এটা অদ্ভুত, কিছু মানুষ মোটেও অসুস্থ অনুভব করে না, কিন্তু কিছু মানুষ অত্যন্ত অসুস্থ অনুভব করতে পারে এবং কেউ কেউ হয়তো মৃত্যুবরণ করে। এ কারণেই আমাদের বৃদ্ধ মানুষের জন্য বিশেষভাবে সতর্ক হতে হবে এবং যারা অন্যান্য রোগে আক্রান্ত তাদের জন্যও কারণ তাদের অধিক অসুস্থ হওয়ার প্রবণতা পরিলক্ষিত। মাঝে মাঝে যখন আমাদের অনেক ভয় লাগবে বা অনিরাপদ অনুভব হবে, তখন আমরা আমাদের মনের একটি নিরাপদ স্থানের কথা ভাবতে পারি। তোমরা আমার সাথে এটা ভাবার চেষ্টা করবে?'
তারা সকলেই হ্যাঁ বললো এবং এরিও তাদেরকে চোখ বুজতে বললো এবং এমন একটি জায়গার কথা ভাবতে বললো যেখানে তারা নিরাপদ অনুভব করে।
এরিও আরও বললো, 'এমন একটি স্মৃতি বা সময়কে কেন্দ্র করে অনুভব করো যখন তুমি নিরাপদ বোধ করেছিলে।'
তারপর সে তাদের জিজ্ঞেস করলো তারা কী দেখেছে, কী অনুভব করেছে, এবং তারা তাদের নিরাপদ স্থানে কিসের আভাস পেয়েছে। সে জানতে চাইলো যে, এমন কি কেউ ছিল যাকে তারা তাদের নিরাপদ স্থানে আমন্ত্রণ করতে চায় এবং সেখানে তার সাথে একত্রে কি বিষয়ে কথা বলতে চায়।
এরিও আরও বললো, 'তোমরা চাইলেই যখন ভয় লাগবে বা আতঙ্কিত অনুভব হবে তখন তোমাদের নিরাপদ স্থানে যেতে পারো, এটা তোমাদের মহাশক্তি এবং এটা তোমরা তোমাদের বন্ধুদের এবং পরিবারের সাথেও ভাগ করে নিতে পারো। আর মনে রাখবে আমি তোমাদের প্রতি যত্নবান এবং আরও অনেক মানুষ এমন যত্নবান। এটাও সাহায্য করবে।'
লায়লা বললো, 'আমরা সকলেই একে অপরের যত্ন নিতে পারি।'
এরিও বললো, 'ঠিক বলেছো লায়লা, আমরা যেখানে আছি সেখানে থেকেই সকলে একে অপরের যত্ন নিতে পারি, তুমি কি আমাদের শেষ ভ্রমণে আমাদের সাথে যেতে চাও?'
লায়লা এরিও এবং তার নতুন বন্ধুদের সাথে ভ্রমণে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো। লায়লা সাথে যাচ্ছে বলে সারা আনন্দিত কারণ সে জানে মাঝে মাঝে আমাদের একে অপরকে সমর্থন করা উচিৎ। তারা কোনো কথা না বলে নিঃশব্দে উড়ে গেলো, কিন্তু লায়লা জানে যে তার নতুন বন্ধুরা তার প্রতি অত্যন্ত যত্নবান।
ধীরে ধীরে তারা একটি তুষারাচ্ছন্ন পাহাড় দেখতে পেলো, এবং এরিও একটি ছোট্ট শহরে নামলো। কিছু শিশু একটি ঝর্ণার পাশে খেলছিল।
তাদের মধ্যে একজন চিৎকার করে হাত নাড়িয়ে বললো, 'এরিও!'
এরিও বললো, 'হ্যালো, কিম,' সে আরও বললো, 'আমি তোমাদের সকলকে এমন কিছু বন্ধুর সাথে পরিচয় করাতে চেয়েছিলাম যারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলো এবং সুস্থ হয়ে উঠেছে।'
সেলিম জিজ্ঞেস করলো, 'এটা কেমন ছিল?'
কিম বললো, 'আমার কাশি ছিলো এবং মাঝে মাঝে আমার অত্যন্ত গরম লেগেছে। আমি খুব ক্লান্ত থাকতাম এবং কিছুদিন খেলতে যেতেও চাইতাম না, তবে আমি প্রচুর ঘুমিয়েছি এবং আমার পরিবার আমার যত্ন করেছে। আমাদের কারো কারো বাবা-মা বা দাদা-দাদুকে হাসপাতালেও যেতে হয়েছে। ডাক্তার এবং নার্সরা তাদের প্রতি অত্যন্ত দয়াবান ছিলেন এবং আমাদের সমাজের মানুষেরা বাড়িতে আমাদের সাহায্য করেছে। কিছু সপ্তাহ পরে আমরা আবার সুস্থ হয়ে গিয়েছি।'
আরেকজন শিশু বললো, 'আমি কিমের বন্ধু, কিম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলো বলে আমাদের বন্ধুত্ব শেষ হয়ে যায়নি। এমনকি আমি যদিও ওকে দেখতে পেতাম না তাই বলে আমি ওর প্রতি কম যত্নবান হইনি এবং আমরা আনন্দিত যে আমরা আবার একত্রে খেলতে পারছি!'
এরিও বললো, 'মাঝে মাঝে একজন বন্ধু হিসেবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ আমরা যেটা করতে পারি তা হচ্ছে একে অপরকে সুরক্ষা করা। এমনকি তা যদি কিছু মুহূর্তের জন্য একে অপর থেকে দূরে থাকার মাধ্যমে হয় তবে তাই।'
লায়লা বললো, 'আমরা প্রত্যেকে প্রত্যেকের জন্য এই কাজগুলো করতে পারি।'
সেলিম বললো, 'এবং একদিন আমরা সকলেই আবার একত্রে খেলতে পারবো এবং আগে যেভাবে স্কুলে যেতাম সেভাবেই আবার স্কুলে ফিরতে পারবো।'
তারপর বিদায় নেওয়ার সময় হয়ে যায় এবং সারাকে তার নতুন বন্ধুদের বিদায় জানাতে হবে। তারা প্রত্যেকে একে অপরকে কথা দিলো যে তাদের এই একত্রিত অভিযানের কথা তারা কখনই ভুলবে না।
সারার মন খারাপ করলো কারণ সে বন্ধুদের সাথে কিছুদিন দেখা করতে পারবে না। কিন্তু যখন তার কিমের বন্ধুর বলা কথা গুলো মনে পড়লো তখন সে ভালো অনুভব করলো। তুমি কারো সাথে দেখা না করতে পারার অর্থ এই নয় যে তুমি তাদেরকে আর ভালোবাসবে না।
এরিও তাদের সকলকে বাড়ি পৌঁছে দিলো, এবং বিদায় নেওয়ার আগে সারার ঘুম আসার অপেক্ষায় রইলো।
সারা জিজ্ঞেস করলো, 'আমরা কি এই একই কাজ আগামীকাল আবার করতে পারি?'
এরিও বললো, 'না সারা, এখন তোমার পরিবারের সাথে থাকা প্রয়োজন। আমাদের গল্পটা মনে রাখবে। তুমি নিয়মিত তোমার হাত ধুয়ে এবং বাড়ির ভেতরে থেকে তোমার প্রিয় মানুষদের সুরক্ষিত রাখতে পারো। আমি কখনোই তোমার থেকে দূরে না। তুমি সবসময় তোমার মনের নিরাপদ স্থানে গিয়ে আমার সাথে দেখা করতে পারবে।'
'তুমি আমার বীর,' সারা মৃদুস্বরে বললো।
এরিও উত্তরে বললো, 'তুমিও আমার বীর, সারা। যারা তোমাকে ভালোবাসে তাদের সকলের জন্য তুমি একজন বীর।'
সারা ঘুমিয়ে পড়লো, এবং পরের দিন যখন তার ঘুম ভাঙলো ততক্ষণে এরিও চলে গিয়েছিল। তাই সে এটিওর সাথে কথা বলতে তার মনের নিরাপদ স্থানে গেলো। তারপর তাদের অভিযানে সে যা যা দেখেছে এবং শিখেছে সেই সব কিছুর ছবি আঁকলো। সে তার মায়ের কাছে দৌড়ে গেলো মাকে ছবিগুলো দেখাতে এবং খবরটি জানাতে।
সে মা কে বললো, 'আমরা সকলেই মানুষকে সুরক্ষিত থাকতে সাহায্য করতে পারি, মা, আমি আমার অভিযানে অনেকগুলো বীরের সাথে পরিচিত হয়েছি!'
মা বললেন, 'অহ সারা, তুমি ঠিক বলেছ! আরও অনেক বীর আছে যারা মানুষকে করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষা করছেন, যেমন অসাধারণ কাজ করছেন ডাক্তার এবং নার্সরা। কিন্তু তুমি আমাকে মনে করিয়ে দিলে যে আমরা প্রত্যেকেই বীর হতে পারি, প্রতিদিন, এবং তুমি আমার সবচেয়ে বড় বীর।'
নোট- এই অনুবাদটি ইন্টার এজেন্সি স্ট্যান্ডিং কমিটি (আইএএসসি) থেকে করা হয়নি। অনুবাদে কোনো রকম ভুলত্রুটির জন্য আইএএসসি দায়ী নয়। বইটির মূল কপি "Inter-Agency Standing Committee. My Hero is you: How Kids Can Fight COVID-19!
License: CC BY-NC-SA 3.0 IGO shall be the binding and authentic edition."
মন্তব্য করুন