তিন দফা দাবিতে রাবির রোকেয়া হল ক্যান্টিনে শিক্ষার্থীদের তালা
খাবারের মান বৃদ্ধিসহ তিন দফা দাবিতে ক্যান্টিনে তালা দিয়ে আন্দোলন করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) রোকেয়া হলের শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার (১৯ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ক্যান্টিনে তালা দিয়ে হল গেটে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। পরে সাড়ে ১০টার দিকে হল প্রাধ্যক্ষ এসে তাদের সঙ্গে আলোচনা করেন। আলোচনা শেষে প্রাধ্যক্ষ সাত দিনের মধ্যে দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আন্দোলন স্থগিত করেন তারা।
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো- ক্যান্টিন ব্যবস্থাপকের অপসারণ, খাবারের মান বাড়ানো এবং নতুন ব্যবস্থাপক নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের খাবারের ব্যবস্থা করা।
এ সময় ‘খাবারের মান বাড়ানো হোক, নাহলে গণরুমের জন্য ব্লকে রান্নাঘর চাই’, ‘খাবার খেয়ে অসুস্থ হলে দায়ভার হবে কার?’, ‘খালাদের ভালো ব্যবহার চাই’, ‘খিচুড়িতে কি শুধু হলুদই দেয়া হয়?’ এই ধরনের বিভিন্ন লেখা সংবলিত প্ল্যাকার্ড হাতে প্রতিবাদ জানান শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানান, সাতদিনের মধ্যে তাদের দাবিগুলো পূরণ না করলে, আবারও আন্দোলনে নামবেন তারা। এ ছাড়া, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত ক্যান্টিনের তালা খুলবেন না। তবে নতুন ব্যবস্থাপক নিয়োগ না হওয়ার আগে হল কর্তৃপক্ষ বিকল্পভাবে খাবারের ব্যবস্থা করলে তারা তালা খুলে দেবেন।
আন্দোলনকারীদের একজন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী মরিয়ম পলি বলেন, ক্যান্টিনের নতুন ব্যবস্থাপক আসার পর থেকেই ক্রমাগতভাবে খাবার নিয়ে বিভিন্ন সমস্যা হচ্ছে। বিভিন্ন সমস্যা বলতে সকাল সাড়ে ৮টার মধ্যেই খাবার শেষ হয়ে যায়। খাবার মানসম্পন্ন হয় না। রুটি বানায় টিস্যু পেপারের মত পাতলা করে। খিচুড়িতে ডাল থাকে না, আবার শুকনা মরিচ দিয়ে রান্না করে। সবজি পাওয়া যায় না। হালুয়ার মত ডাল রান্না করে। এককথায় ওইসব খাবার মেয়েরা খেতে পারে না। গুটিকয়েক যারা ওই খাবার খায়, তাদের অনেকের আবার পেটে সমস্যা হয়।
তিনি বলেন, এই সমস্যাগুলো নিয়ে হল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ছাত্রীরা অনেকবার কথা বললেও কোনো সমাধান হয়নি। তাই বাধ্য হয়েই একই দাবিতে তৃতীয়বারের মত আজ আমাদের আন্দোলন করা লাগছে। মূলত, আজ সকালে কয়েকজন খেতে গিয়ে খাবার না পেলে উত্তপ্ত অবস্থার সৃষ্টি হয় এবং সেখান থেকেই আন্দোলন শুরু হয়। সাতদিনের মধ্যে আমাদের দাবিগুলো পূরণ না করলে, আবারও আন্দোলনে নামব আমরা।
আরেক শিক্ষার্থী রিয়া আক্তার বলেন, এর আগেও একই দাবিতে আন্দোলন হয়েছিল। আন্দোলনের পর কিছুদিন খাবার ভালো দিলেও পরে পূর্বের মত দিতে শুরু করে। এ ছাড়া ছাত্রীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা হয়। ক্যান্টিনের মধ্যে থাকা দোকানে মেয়াদোত্তীর্ণ জিনিস রাখা হয়। আবার জিনিসপত্রের দামও তুলনামূলক বেশি। দোকানে লিখে রাখা, মেয়াদোত্তীর্ণ জিনিস ফেরত নেওয়া হয় না, অথচ বিক্রিই করা হয় মেয়াদোত্তীর্ণ জিনিস। তাই ক্যান্টিন ব্যবস্থাপকের অপসারণ দাবি করেন তিনি।
এ বিষয়ে হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. জয়ন্তী রানী বসাক বলেন, যেহেতু ক্যন্টিনের খাবার নিয়ে শিক্ষার্থীরা সন্তুষ্ট না, সেহেতু আমরা তাদের দাবিগুলো মানার কথা বলেছি। তবে আমরা চাইনি, ক্যান্টিনটা আপাতত বন্ধ থাকুক। আমরা চাচ্ছিলাম, ক্যান্টিন চলুক, এরমধ্যেই আমরা বিকল্প কাউকে খোঁজার চেষ্টা করব। কিন্তু তারা সেটাতে রাজি হয়নি।
সাতদিনের মধ্যে দাবি মানার বিষয়ে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা দুইদিনের মধ্যেই দাবিগুলো মেনে নেওয়ার দাবি করেছিল। আমরা জানিয়েছি, এতো কম সময়ে সম্ভব না। কারণ এখানে বিভিন্ন প্রক্রিয়া রয়েছে। এরপর তারা সাতদিনের কথা বলেছে। সাতদিন সময়টা তাদের কথা। আমি তাদের বলেছি, আমি আমার মত চেষ্টা করব। কারণ অফিসই খোলা থাকে সপ্তাহে পাঁচদিন, সাতদিন আমি কিভাবে কাজ করব?
মন্তব্য করুন