ঢাবি শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ তদন্তে কালক্ষেপণ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ ওঠার পর প্রায় পাঁচ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তদন্ত কমিটির কালক্ষেপণে থমকে আছে বিচার। বিষয়টির দ্রুত প্রতিকার চেয়েছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী।
তথ্যমতে, গত বছরের ৮ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক অমিয় সৃজন সাম্য’র বিরুদ্ধে একই বিভাগের সাবেক এক শিক্ষার্থী বিভাগের চেয়ারপারসন বরাবর যৌন নিপীড়ন ও প্রতারণার লিখিত অভিযোগ জমা দেন। অভিযুক্ত সাম্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরই আরেকজন প্রভাবশালী শিক্ষকের শ্যালক। তবে অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক সেসময় কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
অভিযোগপত্রে ওই শিক্ষার্থী উল্লেখ করেন, অমিয় সৃজন সাম্য বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তার সঙ্গে সম্পর্ক করেন। একপর্যায়ে অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাকে শারীরিক সম্পর্কে বাধ্য করেন। কিন্তু পরবর্তীতে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে অভিযুক্ত শিক্ষক গোপনে অন্য মেয়েকে বিয়ে করেন।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. জিয়া রহমানকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি (ঘটনা অনুসন্ধান কমিটি) গঠন করেছিলেন তৎকালীন ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। এরপর নতুন উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল নভেম্বরের শুরুতে দায়িত্ব গ্রহণের পর তার সঙ্গে দেখা করে বিষয়টি মৌখিকভাবে অবহিত করেন ওই শিক্ষার্থী।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বলেন, “আমি ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে অভিযোগ করার পর দীর্ঘ সময় পার হয়ে গেলেও উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি দেখতে পাচ্ছি না। ফ্যাক্টচেকিংয়ের পর থেকে চলমান তদন্ত প্রক্রিয়া যেন থেমে আছে। বিচারে বিলম্ব হওয়ার পেছনে কী কারণ থাকতে পারে সে বিষয়ে আমি অবগত নই। দ্রুততম সময়ে আমি এই অভিযোগের সমাধান চাই।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে গত ১২ ফেব্রুয়ারি গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. নাদির জুনাইদকে ৩ মাসের বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ করেন তারই বিভাগের একজন নারী শিক্ষার্থী। কিন্তু প্রায় পাঁচ মাস হলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক অমিয় সৃজন সাম্য'র বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে অগ্রগতি না হওয়ায় দুঃখ প্রকাশ করেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী।
এ বিষয়ে ঘটনা অনুসন্ধান কমিটির প্রধান সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ড. জিয়া রহমান বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যেই ঘটনায় অভিযুক্ত এবং অভিযোগকারী উভয়ের বক্তব্য নিয়েছি। কমিটির এক সদস্য বিদেশে ছিলেন বিধায় তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে দেরি হচ্ছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মাকসুদ কামাল বলেন, আমি ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটির বিষয়ে অবগত নই। ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি আমি গঠন করিনি। তবে আমি এই বিষয়ে খোঁজখবর নেব। বিশ্ববিদ্যালয়ে যে কোনো ঘটনা ঘটলে তার তদন্ত এবং শাস্তি হয়।
এদিকে শুধু যৌন নিপীড়ন নয়, পক্ষপাতমূলক আচরণেরও অভিযোগ রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন এন্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক অমিয় সৃজন সাম্য’র বিরুদ্ধে। তার পক্ষপাতমূলক আচরণের বিচারের দাবিতে গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন এবং অবস্থান কর্মসূচি পালন করে বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থী। সেসময় তারা অভিযোগ করেন, শিক্ষার্থী উপদেষ্টা অমিয় সৃজন সাম্য কর্তৃক স্বজনপ্রীতি, পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণ বিভাগের ছেলেদের জন্য শিক্ষার পরিবেশ হুমকির মুখে। এ ছাড়া এই শিক্ষক নিয়মিত ক্লাস নেন না। শিক্ষার্থীদের ব্যাপারেও তিনি উদাসীন।
মন্তব্য করুন