জবির ইমামকে অব্যাহতি, যা বললেন মসজিদে ঘুমানো সেই ছাত্রী

জবি সংবাদদাতা, আরটিভি নিউজ:

মঙ্গলবার, ২৮ মে ২০২৪ , ১০:৩৩ পিএম


জবির ইমামকে অব্যাহতি, যা বললেন মসজিদে ঘুমানো সেই ছাত্রী
ছবি : আরটিভি

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ইমাম ছালাহ্ উদ্দিনকে মৌখিকভাবে অপসারণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাকে ইতোমধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে যাওয়ার জন্য মৌখিকভাবে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে নামাজে ইমামতি করতে নিষেধ করা হয়েছে। তবে ইমামের বিরুদ্ধে আনীত সব অভিযোগই মিথ্যা বলে জানিয়েছেন যে ছাত্রীকে ঘিরে অভিযোগ তোলা হয়েছে তিনি নিজেই।

বিজ্ঞাপন

ঘটনার সূত্রপাত গত ১৮ মে রাতে। শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় এশার নামাজ আদায় শেষে একজন ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের মেয়েদের রুমে ঘুমিয়ে পড়েন। এমতাবস্থায় রাতে মসজিদের পাহারাদার তালা লাগাতে গেলে ওই ছাত্রীকে দেখতে পান। পরে পাহারাদারের স্ত্রী ওই রুম থেকে তাকে বের করে নিয়ে আসেন। ইমাম বা পাহারাদার কেউই ভেতরে ঢোকেননি। এ বিষয়ে ইমামের সাথে ছাত্রীকে জড়িয়ে অনেক ধরনের কুরুচিপূর্ণ অভিযোগ তোলা হয় এবং ইতোমধ্যে ইমামকে মৌখিকভাবে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। 

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ১৬তম ব্যাচের ছাত্রী। তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘ঘটনাটি ছিল ১৮ মে রাত প্রায় সাড়ে ১০টার দিকের। আমি ওই দিন মসজিদে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। পরে আমাকে মসজিদের দায়িত্বে থাকা একজন দেখতে পেলে তার সাথে থাকা একজন মহিলা (হয়ত উনার স্ত্রী হবে) আমাকে ওই রুম থেকে বের করে আনেন। ইমাম সাহেব তখন ভেতরেই প্রবেশ করেননি। পরে বাইরে এলে ওইখানে থাকা অবস্থায় ইমাম সাহেব প্রক্টর স্যারকে কল দেন। সেখানে প্রক্টর স্যারের সাথে মোবাইলে আমার কথা হয়। প্রক্টর স্যার আমাকে বলেন, তুমি তোমার হলের হাউজ টিউটরকে কল দাও। পরে আমি আমার হাউজ টিউটরকে কল দিলে উনি বলেন, আচ্ছা তুমি হলে চলে আসো।’ 

বিজ্ঞাপন

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি নিজেও গতরাতে নিউজটা দেখেছি। একটা সিম্পল ইস্যুকে অনেক বড় করে ফেলা হয়েছে। ওইখানে তেমন কিছুই ঘটেনি। ইমাম সাহেবের বিরুদ্ধে আনীত সব অভিযোগ মিথ্যা।’

এর আগে জবির প্রক্টর অভিযোগ করেন তিনি ঘটনাটি জানার পর সেখানে একজন সহকারী প্রক্টরকে পাঠান। এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে উক্ত শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাকে এমন কোনো বিষয়ে নিশ্চিত করা হয়নি যে, সেখানে সহকারী প্রক্টর আসছেন। আমি সরাসরি হলে চলে গেছি।’ 

প্রক্টর অফিস থেকে দাবি করা হয়, ওই ঘটনার বিষয়ে জানতে ইমাম সাহেবকে প্রক্টর নিজেই কল দিয়েছিলেন এবং ইমাম সাহেব মেয়েটাকে ফোনের ওই পাশ থেকে কথা শিখিয়ে দিচ্ছিলেন। এ বিষয়ে মুনমুন বলেন, ‘ইমাম সাহেব নিজেই প্রক্টরকে কল দিলে আমি স্যারের সাথে কথা বলেছি।’

বিজ্ঞাপন

ওই শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমি আসলে গত কয়েক দিন ধরে অসুস্থ। মসজিদে যাওয়ার পর পায়ে ব্যথা করছিল আমার। হঠাৎ আমি নিজেও বুঝতে পারিনি যে ওইখানে ঘুমিয়ে পড়েছি।’ 

বিজ্ঞাপন

এদিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে ছাত্রীদের নামাজ পড়ার স্থানে ছাত্রীর ঘুমিয়ে থাকা এবং সংশ্লিষ্ট কারণ বের করতে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এতে রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. আবুল কালাম মো. লুৎফর রহমানকে আহ্বায়ক ও সহকারী প্রক্টর খালিদ সাইফুল্লাহকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। সদস্য হিসেবে বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. পারভীন আক্তার জেমী, আইসিটি সেলের পরিচালক ড. আমিনুল ইসলাম ও অ্যাকাউন্টিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. এএনএম আসাদুজ্জামান ফকিরকে রাখা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক আইনুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নিয়ে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। কমিটি দ্রুত বিস্তারিত বিষয়টি তুলে আনবে।’

তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক লুৎফর রহমান বলেন, ‘সোমবার (২৭ মে) সন্ধ্যায় বিষয়টি তদন্তের জন্য দাফতরিক চিঠি পেয়েছি। এখন আমরা সবার সঙ্গে কথা বলে প্রতিবেদন তৈরি করব। তবে ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানার সুযোগ হয়নি।’

প্রসঙ্গত, গত ১৭ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের ভেতরে অনুষ্ঠিত এক দোয়া ও মিলাদ মাহফিলে উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম পুরুষদের নামাজের অংশে অন্য ধর্মাবলম্বী শিক্ষকদের নিয়ে পুরুষদের সামনে বক্তৃতা পেশ করেন। এ সময় উপাচার্যকে মসজিদের ভেতরে এভাবে বক্তব্য না দিতে অনুরোধ জানান সেই ইমাম। আর এতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরসহ অনেকেই এই ঘটনায় ইমামের ওপর ক্ষুব্ধ হন। অভিযোগ রয়েছে, এই কারণে ইমামতি করা মাওলানা ছালাহ উদ্দিনের বিরুদ্ধে একটি চক্র কাজ করছে। 
 

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন
Advertisement
Advertisement

Loading...


© All Rights Reserved 2016-2025 | RTV Online | It is illegal to use contents, pictures, and videos of this website without authority's permission