জাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্প্রীতি সমাবেশ ও পদযাত্রা
১৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের সকল যড়যন্ত্র রুখে দেওয়ার লক্ষ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) সম্প্রীতি সমাবেশ ও পদযাত্রা করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, মুক্তিযোদ্ধা, হেমায়েতপুর ছাত্র সমাজ ও কয়েকটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যোগদান করেন।
বুধবার (১৪ আগস্ট) বিকেল সাড়ে তিনটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ শেষে শহীদ মিনার থেকে পদযাত্রাটি শুরু হয়ে প্রধান ফটক হয়ে প্রান্তিক গেইটে গিয়ে শেষ হয়।
এ সময় ১৫ আগস্টে আওয়ামী লীগের সকল যড়যন্ত্র রুখে দেওয়া হবে বলে জানান শিক্ষার্থীরা। সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকেরা বক্তব্য রাখেন। সমাবেশে পাঁচশত লোকের সমাগম ঘটে।
সমাবেশে ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক খো. লুৎফুল এলাহী বলেন, গত ১৫ জুলাই গভীর রাতে আমার কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ যে হামলা চালিয়েছিল সেই আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনে অবস্থান নিয়েছিল। কিন্তু নির্লজ্জ বেহায়া উপাচার্য গেট পর্যন্ত খোলেননি, ছাত্রদেরকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়ে তিনি কতিপয় তল্পিবাহক নিয়ে আনন্দে উল্লাসে মেতেছিল। এ অবস্থা আমি পাশে থেকে অবলোকন করছিলাম কিন্তু আমি একা থাকা বিধায় কিছু করতে পারিনি।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের সন্ত্রাস বাহিনী যখন গেটের বাহির থেকে শিক্ষার্থীদের ওপর পেট্রোল বোমা মারতেছিল, তখন শিক্ষার্থীদের আত্মচিৎকার, বাচার আকুতি আমি আর সহ্য করতে না পেরে আমার কয়েকজন সহকর্মীকে ফোন দিয়ে ডেকে নেই এবং আমরা উপাচার্যের বাসভবনে প্রবেশ করি ও শিক্ষার্থীদের সেখান থেকে বের করে নিরাপদ আশ্রয়ে নেয়ার দাবি জানাই। কিন্তু সেই মুহূর্তে উপাচার্যসহ আর ও কয়েকজন শিক্ষক সেখান থেকে গেটের বাহিরে চলে যায় এবং সন্ত্রাস বাহিনীকে গেটের ভিতরে প্রবেশ করার সুযোগ করে দেয়। এসব অপরাধের দায় নিয়ে যে শিক্ষকরা বিভিন্ন পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। শুধু পদত্যাগ করলেই হবে না, রাষ্ট্রীয় আইনে তাদের নামে মামলা করে বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।
কর্মসূচির সমাপনী বক্তব্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শামছুল আলম বলেন, ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত আওয়ামী দুঃশাসন আমি প্রত্যক্ষ দেখেছি কিভাবে আওয়ামী শাসকরা জনগণের ওপরে নির্যাতন চালাচ্ছিল বর্তমান প্রজন্ম সেটি দেখেনি। তখন আওয়ামী শাসকরা লুটতরাজ লুটেপুটে খাওয়া শুরু করেছিল। জুলাইতে এসে যে আন্দোলন হল, সফল হল কিভাবে আওয়ামীলীগ দুঃশাসন আমাদের তিলে তিলে কুড়ে কুড়ে মেরে ফেলেছে আমাদেরকে। এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে জাগ্রত হয়েছিল আমাদের ছাত্রসমাজ তাই ছাত্র সমাজকে আজ আমি স্যালুট জানাই। ভারতে অবস্থানরত সাবেক প্রধানমন্ত্রী হুমকি দিয়েছে আগামীকাল ঢাকায় রোড মার্চ করার জন্য, জাহাঙ্গীরনগরের স্বৈরাচারী দোসররা আগামীকাল রোড মার্চ করার জন্য ঘোষণা দিয়েছে। আমরা আগামীকাল সতর্ক থাকব একজনও যেন রোড মার্চ করতে না পারে।
আমাদের সংহতি সমাবেশের মূল লক্ষ্যই হচ্ছে ধর্ম-বর্ণ, জাতি ভেদাভেদ ভুলে একযোগে সম্মিলিতভাবে কাজ করবো।
এসময় সমাবেশে সারাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার নাটক ও তাদেরকে রাজনৈতিক হিসেবে ব্যাবহার করায় তীব্র নিন্দা জানান আন্দোলনকারীরা। সেইসঙ্গে সারাদেশের মন্দির, গির্জাসহ ধর্মীয় উপাসনালয় পাহারা দেওয়ার ঘোষণা দেন তারা।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সহিংসতা রুখতে সকাল দশটা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন মোড়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
মন্তব্য করুন