বৃষ্টির মধ্যেও থেমে নেই রাবি-রুয়েট শিক্ষার্থীদের ত্রাণ সংগ্রহ কার্যক্রম
দুপুর ১২টা। রাজশাহীতে ঝরছে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি। এর মধ্যেই ত্রাণ সংগ্রহ কার্যক্রম করছেন কিছু শিক্ষার্থী। সেখানে কেউ জামাকাপড় দিচ্ছে, কেউ দিচ্ছে খাবার। কেউ দিচ্ছে জমিয়ে রাখা টাকা, কেউবা কঠোর শ্রম। এ যেন সহযোগিতার এক মহা-প্রতিযোগিতা। বলছিলাম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ও রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) শিক্ষার্থীদের কথা।
মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) সরজমিনে দেখা যায়, দুপুর ১২টা থেকে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়। বৃষ্টিতে ভিজেই ত্রাণ সংগ্রহের জন্য মাইকিং করতে দেখা যায় রুয়েটের প্রধান ফটকের সামনে। আরেকটু এগোতেই চোখে পড়ে একটা ছাতার নিচে ৪-৫ জন দাঁড়িয়ে আছে ত্রাণ সংগ্রহের ব্যানার হাতে। পরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবন চত্বরে আসলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে আরও বুথ লক্ষ্য করা যায়। যেখানে টাকা দিতে দেখা যায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের।
এ ছাড়াও, রাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করতে দেখা যায় বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর (বিএনসিসি) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ক্যাডেটদের। খোঁজ নিয়ে জানা যায় গত ৩ দিন যাবত তারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ত্রাণ সংগ্রহে সহায়তা করে আসছে।
রুয়েট সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আল-আমিন ইসলাম রকি বলেন, আমরা সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত কাপড়, শুকনো খাবার ও টাকা সংগ্রহ করছি। যার মাধ্যমে এখন পর্যন্ত আমরা প্রায় ৭ বস্তার মতো কাপড়, শুকনো খাবার ও অনলাইন-অফলাইন মিলিয়ে ৫ লাখ টাকার বেশি সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছি। আন্দোলনের আগে আমরা ভাবতাম দেশটা আওয়ামী লীগের, কিন্তু এখন চিন্তা করি দেশটা আমাদের। তাই নিজের দেশকে বাঁচানোর জন্য ঝড়-বৃষ্টি যাই হোক না কেন, আমরা ঝাঁপিয়ে পড়বো।
রুয়েটের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের জিহান নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ভালো কাজ করলে একটা ভালো লাগা কাজ করে। ফেনী, নোয়াখালী ও কুমিল্লা সহ বিভিন্ন দিকে যদি লক্ষ্য করি, তাহলে খুবই ভয়াবহ অবস্থা দেখতে পাই। আমার ল্যাবমেটের বাসা ফেনীতে। সে আমাকে ফোন দিয়ে বলতেছে, ‘বন্ধু! আমাদের বাড়িঘর পানিতে ডুবে গেছে। কিছুক্ষণ পর তোর সঙ্গে কথা বলতে পারব কিনা জানি না। পাশের বাসার একটা দোতলা ভবনে আমি ও আমার পরিবার সহ অবস্থান করছি। এমন সময় বৃষ্টি আসলেও আমরা কেমনে বসে থাকব?
তিনি আরও বলেন, আমরা মোট ১২ জন দায়িত্ব নিয়ে কাজ করছি। আমরা সময় ভাগ করে কেউ সকালে, কেউ দুপুরে আবার কেউ বিকেলে অবস্থান করি। সবাই আমাদের সহায়তা করছে।
রাবি স্কুলের সহকারী অধ্যাপক মো. বাদশা আলম বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে আজকে মোট ৭ হাজার ২ টাকা সংগ্রহ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখায় দিয়েছি। এর আগে স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীদের সহায়তায় ১২ হাজার ৫০০ টাকা দিতে সক্ষম হয়েছি। আমরা প্রতিটি শ্রেণি কক্ষে একটি করে বক্স রেখেছি। কোনো ছাত্র-ছাত্রী চাইলে সেখানে টাকা দিতে পারে। আবার কেউ কেউ আমাদের হাতে দিয়েছে। তবে আমি আজ একটা বিষয় দেখে খুবই অবাক হলাম। একজন ছাত্র আমার কাছে একটি ব্যাংক দিয়ে বলল, স্যার আমার জমানো টাকা আপনি বন্যার্তদের দিবেন। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম তোমার নাম কি? কিন্তু সে তার নাম না বলেই চলে গেল।
রাবি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মেহেদী সজীব বলেন, রাজশাহীতে বৃষ্টি চললেও বন্যা কবলিত এলাকার মানুষের থেকে এখনো ভালো আছি আমরা। বৃষ্টি আসলেও আমরা আমাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাবো। আজকেও আমাদের মোট ৬টি স্থানে বুথ আছে। সেগুলোতে সবাই কাজ করছে।
মন্তব্য করুন