• ঢাকা সোমবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ২৩ আশ্বিন ১৪৩১
logo

আন্দোলনে যুক্ত হয়েছি একজন মা হিসেবে: সারা আহমেদ

রাবি প্রতিনিধি, আরটিভি নিউজ

  ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:০৬
ছবি : আরটিভি

বাংলাদেশ স্বাস্থ্যসেবা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সদস্য সারা আহমেদ সাবন্তী বলেছেন, আমি এই আন্দোলনে যুক্ত হয়েছি একজন মা হিসেবে। যখন আমাদের সন্তানদের রক্ত রাজপথে ঝরতে শুরু করলো তখন আসলে চুপ করে বসে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব হয়নি।

শনিবার (৩১ আগস্ট) বিকেলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শহীদ মিনার মুক্তমঞ্ছে আয়োজিত ‘আগামীর বাংলাদেশ: তারুণ্যের ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তব্য প্রদানকালে তিনি এসব কথা বলেন। রাবির বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীরা এই সেমিনারের আয়োজন করে।

সারা আহমেদ সাবন্তী বলেন, ‘একটা জিনিস আমার মনে হয়েছিল যেদিন ঢাকা মেডিকেলের ইমার্জেন্সিতে ঢুকে আহতদের আবার পিটানো হলো, সেদিন চিকিৎসক হিসেবে আমি খুব বিপন্নবোধ করেছি। তো এই সমস্ত মিলিয়ে (আন্দোলনে) আসা। জুলাই অভ্যুত্থানে যারা আহত হয়েছেন, দৃষ্টি শক্তি হারিয়েছেন এবং কোন অঙ্গহানি হয়েছে, তাদের পুনর্বাসনের বিষয়টা আমরা খুব গুরুত্বের সঙ্গে নিতে চাচ্ছি। সেজন্য তহবিল সংগ্রহ থেকে তাদের পুনর্বাসনের জন্য দীর্ঘমেয়াদি যা লাগে আমরা করবো।’

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব মাঞ্জুর আল মতীন বলেন, একটা সময় ছিল যখন দেয়াল লিখন বা গ্রাফিতে আমার মন ভরতো। আমি বলতাম সেখানে ক্যালিগ্রাফি আমার ভালো নাও লাগতে পারে। এই আন্দোলন আমাকে শিখিয়েছে ক্যালিগ্রাফিও সমান সুন্দর। এই আন্দোলন আমাকে শিখিয়েছে যেমন শ্যামা সংগীত সুন্দর, তেমনি সুন্দর কুরআনের তেলাওয়াত ও মসজিদের ঘণ্টার ধ্বনি। এটাই আমাদের সাফল্য। এই সব ভেদাভেদ ভুলে আমরা দাঁড়িয়েছি। এই ভেদাভেদ আমার মধ্যে যেন না আসে। কারণ লড়াই কেবল শুরু।

তিনি বলেন, আমরা দেখেছি, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা লড়াই করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়লে মাদরাসা, ইংরেজি মাধ্যম ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও রুখে দাঁড়িয়েছে। এই লড়াই যেমন ঢাকার, তেমনি এটা গোটা বাংলাদেশেরও। এটা ভুলে গেলে চলবে না। রাজশাহীতে মানুষ জীবন দিয়েছে, রংপুরে আবু সাঈদ জীবন দিয়েছে। ঢাকায় আমার ছোটো ভাই ফারহানসহ অনেকে জীবন দিয়েছে। শুধু ঢাকা নিয়ে থাকলে এই বিপ্লব সম্ভব হতো না। এখন যারা ক্ষমতায় বসেছেন, তাদের বুঝতে হবে, শুধু কেন্দ্রে বসে শাসন করলে চলবে না। আপনাদের রাজশাহীতে আসতে হবে। আপনাদের শুনতে হবে এদেশের প্রান্তিক মানুষের কথা। অটোচালক-রিকশাচালকদের কথাও শুনতে হবে। সবাইকে নিয়েই বাংলাদেশ। আমার বাড়ির কাছে দেখেছি যখন শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে গেছে, তখন শ্রমজীবী মানুষরা নেমে এসেছে।

পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব বলেন, আমার কাছে এ সময়টা অসম্ভব আনন্দ, বেদনা, আশঙ্কা এবং আশার সময়। এ সব কিছু নিয়েই আমি বেঁচে আছি। আজকের এ সমাবেশটা হলো আনন্দ। আর বেদনার হলো সম্ভবত আজকেও আমরা একজন তরুণকে হারিয়েছি এবং শত শত সন্তান তারা তাদের চোখ হারিয়েছে। জানি না তারা কখনো পৃথিবীর আলো দেখতে পারবে কিনা। আশঙ্কা হলো গত ১৫ বছরে যেই অশুভ শক্তি ও স্বৈরশাসক জন্ম হয়েছে এবং তাদেরকে মদদ দিয়ে যারা মাথায় তুলে রেখেছে তাদের জন্য। স্বৈরশাসক কখনো একা একা টিকে না। কেউ ইচ্ছায় এবং অনিচ্ছায় ভূমিকা পালন করে। ইচ্ছায় যারা ভূমিকা পালন করেছে তারা হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক যাদেরকে কথিত বুদ্ধিজীবী বলা হয়। একজন পুলিশ বলতে পারে সে হুকুমের চাকর, যাকে বললে সে গুলি ছুড়তে বাধ্য। কিন্তু একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কোনো হুকুমের চাকর না। আমরা জানি একটা পশুকে গলায় দড়ি বাঁধলে যেমন সে চলে, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা আমাদের সঙ্গে তেমন আচরণ করেছে।

তিনি সমন্বয়কদের উদ্দেশ্য করে বলেন, এখনো অনেক শহীদ পরিবার আছে যারা অসহায়। আহত সন্তানরা এখনো ভালো চিকিৎসা পাচ্ছে না। তোমাদের কাছে আমার একটি দাবি, কোনো শহীদ পরিবার যদি অবহেলিত থাকে আমি বলব এর বিপ্লব ব্যর্থ। একটি সন্তান যদি চিকিৎসা যতোটুকু পাওয়া উচিত, ততটুকু না পায়, তাহলে তোমাদের বিপ্লব ব্যর্থ। তোমাদের অঙ্গীকার করতে হবে কোন মানুষের কাছ থেকে সরে যাব না।

সেমিনারে পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী এস এম সালমান সাব্বিরের সঞ্চালনায় বাংলাদেশ স্বাস্থ্যসেবা সংস্কার পরিষদের সদস্য সারা আহমেদ সাবন্তী, সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক আখতার হোসেন মজুমদার, প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. রেজাউল করিম, অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল মামুন, আইন বিভাগের অধ্যাপক মোর্শেদুল ইসলামসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকরা বক্তব্য প্রদান করেন। এ সময় রাবিসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সহস্রাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।

মন্তব্য করুন

Radhuni
  • শিক্ষা এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
৪০০ জনকে নিয়োগ দেবে বেসরকারি সংস্থা
মহানবী (সা.) কে নিয়ে কটূক্তির প্রতিবাদে রাবিতে বিক্ষোভ মিছিল
‘শেষবারের মতো মাকে কল দে’ বলে রাবি শিক্ষার্থীকে নির্যাতন
ওয়েবমেট্রিক্সের র‍্যাঙ্কিংয়ে দ্বিতীয় রাবি