বাকৃবি গবেষকদলের সাফল্য
ক্ষতিকর অ্যান্টিবায়োটিকের বিকল্প হতে পারে আমের আঁটি
পরিত্যক্ত আমের আমের আটিঁর বীজ থেকে প্রাপ্ত অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদানে মানবদেহ ও পশু-পাখিতে বিভিন্ন রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কার্যকর প্রাথমিক সফলতা পাওয়া গেছে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) একদল গবেষক গবেষণায় এই সফলতা পেয়েছেন।
সোমবার (২৮ অক্টোবর) সকাল ১১টায় বাকৃবি সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে এ তথ্য জানান গবেষক দলের প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োজলি এন্ড হাইজিন বিভাগের অধ্যাপক ড. গোলজার হোসেন।
গবেষক দলের অন্যান্য সদস্যরা হলেন, মাইক্রোবায়োলজি এন্ড হাইজিন বিভাগের অধ্যাপক ড. সুকুমার সাহা, ফিজিওলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. শারমিন আক্তার, কৃষি রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. বিপ্লব কুমার সাহা, স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী রাহীলা জান্নাত সাদিয়া, চন্দন সিকদার, আনন্দ মজুমদার, মোসলেমা জাহান মৌ এবং নাজমুল হাসান সিয়াম।
প্রধান গবেষক ড. গুলজার হোসেন বলেন, মানুষের পাশাপাশি প্রাণীর ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগের চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিকই প্রধান ভরসা। তবে বর্তমানে অনেক ব্যাকটেরিয়া বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত সিন্থেটিক অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল এজেন্টের প্রতি প্রতিরোধ গড়ে তুলছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্সকে (এএমআর) জনস্বাস্থ্যের জন্য একটি আন্তর্জাতিক সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
দেশ-বিদেশে বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, ভেষজ ঔষধগুলো সিন্থেটিক ওষুধের বিকল্প হিসেবে নিরাপদ, সুবিধাজনক এবং সাশ্রয়ী। দেশে প্রতিবছর প্রায় ৪ লাখ টন আমের আঁটি নষ্ট হয়। তাই আমরা দেশি জাতের আমের বীজে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল কার্যকারিতা পর্যবেক্ষণ করেছি। আমরা রাসায়নিক পদ্ধতি ব্যবহার করে আমের পরিত্যক্ত বীজ থেকে একটি নির্যাস তৈরি করি, যা কিছু ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। ইঁদুরে সেই নির্যাস পরীক্ষার সময় দেখা গেছে যে, এই নির্যাসের পাশ্বপতিক্রিয়া নেই বললেই চলে। স্ক্যানিং ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপে পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, আমের বীজের নির্যাস গ্রাম পজেটিভ ব্যাকটেরিয়ার কোষের গঠন ধ্বংস করতে সক্ষম। এটি ব্যাকটেরিয়া দ্বারা তৈরি বায়োফিল্মও ধ্বংস করতে পারে। ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রমিত ইঁদুরের ওপর এই নির্যাস প্রয়োগে ওই সংক্রমিত ইঁদুরগুলো দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠে।
আমের আটিঁর অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদান প্রয়োগের ভবিষ্যত সম্ভাবনা নিয়ে গবেষক জানান, বর্তমানে আমরা পোল্ট্রিতে এই নির্যাস প্রয়োগের প্রাথমিক কাজ শুরু করেছি। যদি সফল হই, এটি বাংলাদেশের পোল্ট্রি সেক্টর ও স্বাস্থ্যখাতে দৃশ্যমান অবদান রাখবে এবং অর্থনৈতিক সাশ্রয় সাধিত হবে, যা জাতীয় উন্নয়নে সহায়ক হবে।
আরটিভি/এফআই
মন্তব্য করুন