রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার থেকে ২০২৪-এ হারিয়ে গেলেন যারা
মৃত্যু চিরন্তন সত্য। মানুষের জীবনের অন্তিম পরিণতি হচ্ছে মৃত্যু। এই মৃত্যু কখনো স্বাভাবিক বা অস্বাভাবিক হতে পারে। স্বাভাবিক নিয়মে অনেকে ছেড়েছেন পৃথিবীর মায়া। আবার জীবন নিয়ে হতাশায় স্বেচ্ছায়ও পৃথিবী ত্যাগ করেন অনেকে। এমনই কয়েকজন বিদায় নিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবার থেকে। এর মধ্যে রয়েছেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী।
ড. মো. শামসুজ্জোহা এছামী: ১৯ জানুয়ারি দুপুরের দিকে বুকে ব্যথা অনুভব করলে তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (রামেক) ভর্তি করা হয়। সেদিনই আনুমানিক ৪টায় রামেকেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। ড. মো. শামসুজ্জোহা এছামী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স ছিল ৪৭ বছর।
জহিরুল ইসলাম: ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান চলাকালে নিজ এলাকায় গাড়িতে আগুন নেভানোর সময় গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে নিহত হন তিনি। জহিরুল ইসলাম ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার বাড়ি গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া উপজেলার ঘাগটিয়া পূর্ব পাড়া গ্রামে। কৃষক বাবা তাজুল ইসলামের চার সন্তানের মধ্যে জহিরুল তৃতীয় ছিলেন।
ড. মো. ময়েজুল ইসলাম: ২৭ জানুয়ারি রাত আনুমানিক ৯টায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। অধ্যাপক ড. ময়েজুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন। তিনি ১৯৮৪ সালে ইতিহাস বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেছিলেন। পরবর্তীতে ২০০৩ সালে তিনি অধ্যাপক পদে উন্নীত হন। তিনি ইতিহাস বিভাগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
কানাইলাল রায়: ২৬ মে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক কানাইলাল রায় মৃত্যুবরণ করেন। তিনি ১৯৭২ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষা বিভাগে সংস্কৃত বিষয়ে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন ও ১৯৯৭ সালে অধ্যাপক পদে উন্নীত হন। ১৯৯৬ সালে তিনি পুরাণ বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। কর্মজীবনে তিনি দুই মেয়াদে ভাষা বিভাগের সভাপতিসহ অন্য কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। ২০১০ সালে তিনি অবসর গ্রহণ করেন।
ড. এস এ হায়দার: ২১ জুন রাত সাড়ে ১২ টায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হৃদরোগের জন্য চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন তিনি। ড. এস এ হায়দার বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন। ১৯৯৪ সালে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন ও ২০০৮ সালে অধ্যাপক পদে উন্নীত হন। কর্মজীবনে তিনি সহকারী প্রক্টর ও হল প্রাধ্যক্ষসহ অন্য কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন।
ড. সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন: তিনি ১১ জুলাই রাত ১০টায় ক্যাম্পাস সংলগ্ন তালাইমারীস্থ নিজ বাসায় ইন্তেকাল করেন। বিশ্ববিদ্যালয় মনোবিজ্ঞান বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ছিলেন তিনি। তিনি দীর্ঘদিন যাবত বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় ভুগছিলেন। ড. সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন ১৯৯১ সালে রাবি মনোবিজ্ঞান বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন ও পরবর্তীতে অধ্যাপক পদে উন্নীত হন। ২০১৫ সালে তিনি অবসর গ্রহণ করেন।
ড. মো. শাহ আলম: ১৮ জুলাই সকাল ৬টায় ঢাকার উত্তরায় নিজ বাড়িতে ইন্তেকাল করেন তিনি। ড. মো. শাহ আলম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ছিলেন। তিনি ১৯৭০ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন ও পরবর্তীতে অধ্যাপক পদে উন্নীত হন। তিনি ২০০৯ সালে অবসরগ্রহণ করেন।
মো. নুরুল আলম: ২৮ নভেম্বর রাত সাড়ে ১০ টায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন তিনি। মো. নুরুল আলম রাবির পরিষদ শাখার উপ-রেজিস্ট্রার ছিলেন।
মো. মেহেদী হাসান: ১ ডিসেম্বর বিকেলে ক্যাম্পাসের সাবাস বাংলাদেশ মাঠে ক্রিকেট খেলা অবস্থায় অসুস্থ হয়ে পড়লে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তিনি আইন ও ভূমি প্রশাসন বিভাগের ২০১৯-২০২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা।
মোহাম্মদ আলীর: ৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ক্যাম্পাস সংলগ্ন বিনোদপুর বাজারে একটি দ্রুতগতির মোটরসাইকেলের ধাক্কায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি। মোহাম্মদ আলীর রাবি পপুলেশন সায়েন্স অ্যাণ্ড হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট বিভাগের সেকশন অফিসার ছিলেন।
সামাদ আবেদীন: ১২ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় রাজশাহী উপশহরস্থ নিজ বাড়িতে ইন্তেকাল করেন তিনি। তিনি রাবি পরিসংখ্যান বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ছিলেন। সামাদ আবেদীন ১৯৬৯ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিসংখ্যান বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন ও ১৯৯৪ প্রফেসর পদে উন্নীত হন। তিনি ২০১১ সালে অবসরগ্রহণ করেন।
লতিফ আহমেদ: ২৫ ডিসেম্বর দিবাগত রাত ১টায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন তিনি। লতিফ আহমেদ উর্দু বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ছিলেন। তিনি ১৯৯৪ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষা বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন ও ২০১২ অধ্যাপক পদে উন্নীত হন। তিনি ২০১৮ সালে অবসরগ্রহণ করেন।
মো. ইলিয়াস হোসেন: ২৫ ডিসেম্বর দিবাগত রাত দেড়টায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন তিনি। মো. ইলিয়াস হোসেন রাবি স্টুয়ার্ড শাখার অবসরপ্রাপ্ত উপ-রেজিস্ট্রার ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন।
শুভ রায়: ১২ এপ্রিল ৯টায় রংপুরে মহেন্দ্র’র ধাক্কায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। শুভ রায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার বাড়ি রংপুর সদর উপজেলার লালচাঁদপুর গ্রামে। তার বাবার নাম দিলীপ চন্দ্র রায়।
আরটিভি/এমকে
মন্তব্য করুন