জাবিতে খসে পড়ছে মসজিদের পলেস্তারা, আতঙ্কে শিক্ষার্থীরা
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আ ফ ম কামালউদ্দিন হল এবং শহীদ সালাম বরকত হল সংলগ্ন মসজিদটির অবকাঠামো ভেঙে পড়ছে, দেয়ালে দেখা দিয়েছে বড় ধরনের ফাটল এবং উপর থেকে প্রায় খসে পড়ছে পলেস্তারা। প্রতিনিয়ত জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নামাজ আদায় করছেন দুই হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা।
মসজিদটি সংস্কারের বিষয়ে প্রশাসনকে একাধিকবার অবগত করলেও এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনও পদক্ষেপ নেননি তারা। ফলে এক রকম অনিশ্চয়তায় মধ্য দিয়ে যাচ্ছে মসজিদটির সংস্কার কাজ। এতে দিনের পর দিন নামাজ আদায়কৃত শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিরাজ করছে মৃত্যু আতঙ্ক।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ১৯৯০ সালে নির্মিত হয় এক তলা বিশিষ্ট এই মসজিদটি। জানা যায়, নির্মাণের পরের বছরেই ফাটল ধরে মসজিদটির। এরপর যৎসামান্য সংস্কার করে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এ বছর আবারও বড় ধরনের ফাটল ধরেছে মসজিদটির ছাদ ও দেয়ালের বিভিন্ন অংশে। এছাড়া উপরের অংশ কাঁচ দিয়ে ঢেকে রাখায় গরমের দিনে প্রচণ্ড রোদের তাপে নামাজ আদায় করতে হিমশিম খাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। জায়গার সংকট তো আছেই। বিশেষ করে শুক্রবার জুম্মার দিনে সবচেয়ে বেশি জায়গার সংকট দেখা দেয়। এসব ব্যাপারে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এখন পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ নির্বিকার এমনটি অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
ঝুঁকিপূর্ণ এ মসজিদটিতে প্রতিদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়াও আশপাশের এলাকা থেকে প্রায় শতাধিক লোক নিয়মিত নামাজ আদায় করতে আসেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী তাহমিদ আহমেদ বলেন, ছাদ ও দেয়ালে বিপজ্জনক ফাটল ধরেছে। যে কোনও সময় ঘটতে পারে মৃত্যুর মতো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা।
আইন ও বিচার বিভাগের মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, বছরের পর বছর ধরে মসজিদের ভেতরে ব্যাপক ফাটল দেখে আসছি। দীর্ঘদিন ধরে এমন ফাটল থাকলেও কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না প্রশাসন। প্রশাসনের স্বদিচ্ছার অভাবে সংস্কার কাজ হচ্ছে না বলে দাবি করেন তিনি।
মসজিদের ইমাম আবদুল কাদের আরটিভি অনলাইনকে বলেন, মূলত নির্মাণকাজ ভালো না হওয়ার কারণে মসজিদের দেয়াল ও ছাদে ফাটল দেখা দিয়েছে। এ বিষয়ে বারবার প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করলেও এখন পর্যন্ত স্থায়ী কোনও সমাধান হয়নি।
এদিকে মসজিদটির সংস্কার কাজ নিয়ে দুই হলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আলোচনার পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও চলছে এ বিষয়ে সমালোচনা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আকিক হোসেন সিয়াম নামে এক শিক্ষার্থী ‘আমরাই জাহাঙ্গীরনগর’ নামে একটি গ্রুপে লিখেছেন, পুরানো মডেলে তৈরি করা হয়েছে মসজিদের বিল্ডিং, উপরে কাঁচ দেয়ার কারণে রোদের তাপে নামাজের সময় ভেতরের অংশ প্রচণ্ড গরম থাকে। বিভিন্ন দিক দিয়ে ফাটল ধরেছে, জুম্মার নামাজের সময় জায়গা হয় না। কর্তৃপক্ষ হল অফিস ডিজিটাল মডেলে তৈরি করে এসি লাগাচ্ছে। অথচ মসজিদটির মেরামতের বিষয়ে কোনও পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও আ ফ ম কামাল উদ্দিন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী মো. জুয়েল রানা বলেন, সত্যি বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। দুই হলের অসংখ্য শিক্ষার্থী মৃত্যুর ভয় নিয়ে নামাজ আদায় করছে, কিন্তু প্রশাসন এখনো মেরামতের কোনও পদক্ষেপ নিচ্ছে না। অতিদ্রুত মসজিদটি সংস্কার করা হোক। এই বিষয়ে আমিও প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলবো।
ঝুঁকিপূর্ণ মসজিদ সম্পর্কে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি অতিদ্রুত মসজিদটির সংস্কার কাজের আশ্বাস দেন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আ ফ ম কামাল উদ্দিন হলের প্রাধ্যক্ষ ও প্রক্টর ফিরোজ উল হাসান বলেন, আমি নিজেই মসজিদটি সরেজমিনে ঘুরে দেখেছি। সত্যি মসজিদের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। ইতোমধ্যে নতুন বাজেটে মসজিদটি সংস্কারের জন্য আলোচনা চলছে। অতিদ্রুত কমিটি গঠন করে ইঞ্জিনিয়ার সেকশনের মাধ্যমে মসজিদটি ভেঙে নতুন করে মেরামত কাজ শুরু হবে।
এসএস
মন্তব্য করুন