গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রপতি ও সংবিধান অকার্যকর হয়ে গেছে: নাহিদ ইসলাম
তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেছেন, গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়েই রাষ্ট্রপতি ও সংবিধান অকার্যকর হয়ে গেছে। তখন রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার প্রয়োজনে আমরা এই রাষ্ট্রপতির কাছে শপথ গ্রহণ করেছি, তার অধীনে দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। প্রয়োজন হলে আমরা তা নতুন করে ভাবছি।
বুধবার (২৩ অক্টোবর) বিকেলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আয়োজনে ‘গণ-অভ্যুত্থানের সরকার: প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি’ শীর্ষক মুক্ত আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন।
উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, ১/১১ এরপর থেকে আওয়ামী লীগের বিরাজনীতির সূত্রপাত হয়। তারা আওয়ামী লীগকে বসিয়ে যায়। এরপর একের পর এক অবৈধ ভোট, মানবাধিকার লঙ্ঘন, আন্দোলনে দমন-পীড়নের ফলে ১৬ বছরের লড়াই-সংগ্রাম অভ্যুত্থানে চূড়ান্ত রূপ লাভ করেছে।
তিনি বলেন, রাজাকার বলায় শিক্ষার্থীদের মর্যাদায় লেগেছে। এটা আমাদের একটা মর্যাদার লড়াই। ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থায় মানবাধিকার, আইন-আদালত, গণমাধ্যম কারও কাছেই মানুষের নিরাপত্তা ছিল না। রাস্তায় নামা ছাড়া তাদের আর কোন উপায় ছিল না। শেখ হাসিনা তো নিয়ম অনুযায়ী পদত্যাগ করেননি, তার পতন হয়েছে, তাকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছে। ’৭২-এর সংবিধান একটা বাকশালী বন্দোবস্ত। এখানে কিছু মৌলিক সংস্কার আমাদের করতে হবে।
আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধের প্রশ্নে তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় একটি ফ্যাসিস্ট দলের রাজনীতি করার অধিকার থাকে না। ফ্যাসিস্ট বলে আওয়ামী লীগের আর রাজনীতি করার অধিকার থাকে না। সে যে মতাদর্শ দিয়ে রাজনীতি করেছে, তা কখনোই বৈধতা দেওয়ার সুযোগ নেই। যে মতাদর্শ দিয়ে তারা রাজনীতি করেছে; তারা যদি বাংলাদেশে কখনও আসে- তাহলে এই অভ্যুত্থান ও শহীদদের সঙ্গে প্রতারণা করা হবে। আমাদের জীবন থাকতে তা করতে দিবো না।
জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, সমাজের নিচুতলার মানুষ সংস্কার বোঝেন না; সচেতন মহলের উচিত সমাজের সবার কথা তুলে আনা। মুক্তিযুদ্ধের পর মুজিববাদকে ধারণ করে সংবিধান লিখিত হয়েছে। তারা গণতন্ত্রের কথা বলে ভোট চুরি করেছে, তারা সমাজতন্ত্রের কথা বলে মানুষকে শোষণ করেছে। মুজিববাদ, ব্যক্তি মুজিব থেকে আলাদা। ব্যক্তি মুজিবের ৭১ পূর্ববর্তী এবং ৭২ পরবর্তী ভূমিকায় আকাশ পাতাল পার্থক্য। তাই ভবিষ্যতের ফ্যাসিবাদকে রুখতে হলে মুজিববাদকে প্রতিহত করতে হবে।
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য ডা. জাহেদ উর রহমান বলেন, শেখ হাসিনাকে ফ্যাসিবাদী বললে তাকে সম্মানিত করা হয়। হিটলার-মুসোলিনির শাসনের দিকে তাকালে দেখা যাবে তারা দেশের জন্য কতটা ডেডিকেটেড ছিলেন। কিন্তু কেউ বলতে পারবে না, হিটলার ডাকাত ছিল, অল্প সময়ে এত টাকা কামিয়েছে। কিন্তু শেখ হাসিনা ছিল মাফিয়া। পঞ্চদশ সংশোধনীর পর থেকে তিনি ক্রিমিনাল হয়ে উঠেছেন। শেখ হাসিনার আমলে বিশেষ করে ১৪’র পর থেকে মাফিয়াতন্ত্র হিসেবে চিহ্নিত হবে। তারা স্বাধীনতা ও উন্নয়নের যে বয়ান সামনে এনেছিল- আওয়ামী লীগের লোকজনও তা বিশ্বাস করেনি।
এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসান, প্রো-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সোহেল আহমেদ, প্রো-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব আরিফ সোহেল উপস্থিত ছিলেন।
আরটিভি/এমএ
মন্তব্য করুন