রাবি শিক্ষকের অনিয়ম-দুর্নীতি
কমিটি গঠনের চার মাসেও জমা পড়েনি তদন্ত প্রতিবেদন
শিক্ষার্থীদের ২০০ পৃষ্ঠা লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) চিত্রকলা, প্রাচ্যকলা ও ছাপচিত্র বিভাগের ছাপচিত্র ডিসিপ্লিনের সহযোগী অধ্যাপক ড. সুজন সেনের অনিয়ম তদন্তে কমিটি গঠিত হয় গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর। দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা থাকলেও চারমাসেও জমা পড়েনি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, সকল প্রমাণাদি থাকর পরও একজন অযোগ্য, দুর্নীতিবাজ, দালালকে নিয়ে কেন এত কালক্ষেপণ! আমরা রাবি প্রশাসনের কাছে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে এই দুর্নীতিবাজের স্থায়ী বহিষ্কার চাই।
তদন্ত কমিটি বলছে, তদন্তের কাজ প্রায় শেষ। চলতি সপ্তাহেই প্রতিবেদন জমা দিবেন তারা।
এ বিষয়ে চিত্রকলা, প্রাচ্যকলা ও ছাপচিত্র বিভাগের ছাপচিত্র ডিসিপ্লিন চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আসাদ সাদিক রাফি আরটিভিকে বলেন, উপাচার্য আমাদের জানিয়েছিলেন এই তদন্ত প্রতিবেদন অতীতের ন্যায় হিমাগারে পড়ে থাকবে না। কিন্তু গত চার মাসেও তা আলোর মুখ দেখেনি। সকল প্রমাণাদি থাকা সত্ত্বেও একজন অযোগ্য, দুর্নীতিবাজ, দালাল শিক্ষকের তদন্ত নিয়ে কেন এত কালক্ষেপণ করা হচ্ছে! জুলাই বিপ্লবকে ধারণ করা বর্তমান বিপ্লবী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে এটা যায় না। আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে এই দুর্নীতিবাজের স্থায়ী বহিষ্কার চাই। তাছাড়া আমরা কঠোর কর্মসূচির দিকে আগাবো।
একই বর্ষের আরেক শিক্ষার্থী সরোয়ার জাহান আরটিভিকে বলেন, তিনি এতোই অযোগ্য শিক্ষক যে, যার কাছ থেকে আজ পর্যন্ত কোনো শিক্ষার্থী একটা ড্রইং পর্যন্ত দেখিয়ে নিতে পারেননি। কিছু না পারা সত্ত্বেও তিনি অন্যের শিল্পকর্ম চুরি করে দুর্নীতির মাধ্যমে শিক্ষক হয়ে গেছেন। শিক্ষার্থীদের কিছু শেখানো তো দূরের কথা, উল্টো ইচ্ছাকৃত নম্বর কম দিয়ে অনেক শিক্ষার্থীর জীবন ধ্বংস করেছেন এই দুর্নীতিবাজ শিক্ষক। জিয়া হলের প্রাধ্যক্ষ থাকাকালে তার লাখ লাখ টাকার দুর্নীতি রয়েছে। তিনি কেমন মানুষ তা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী জানেন।
তিনি আরও বলেন, শিক্ষক নামের কলঙ্ক এমন একজনের তদন্ত নিয়ে প্রশাসনের এত গড়িমসি কেন তা আমাদের বোধগম্য নয়। আমরা ইতোমধ্যে তাকে একটি মানববন্ধনে ছবি আঁকার চ্যালেঞ্জ ছুঁড়েছি। তদন্ত কমিটি চাইলে সেটিও করে দেখতে পারে। এই অযোগ্য, দুর্নীতিবাজ এতদিন শিক্ষকের মুখোশ ধারণ করে মাসের পর মাস বেতন নিয়ে জনগণের টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এখনও তিনি ঘরে বসেই নিয়মিত বেতন পাচ্ছেন। এই তদন্ত নিয়ে আমরা আর তালবাহানা চাইনা। দ্রুত সময়ের মধ্যে তার স্থায়ী বহিষ্কার চাই।
এদিকে তদন্ত কমিটি দীর্ঘ চারমাস পরে প্রতিবেদনের জন্য সভাপতির সাক্ষাৎকার নিতে চেয়েছেন বলে জানিয়েছেন বিভাগটির সভাপতি অধ্যাপক ড. বনি আদম।
জানতে চাইলে অধ্যাপক ড. বনি আদম আরটিভিকে বলেন, গত সপ্তাহে আমার তদন্ত কমিটির আহ্বায়কের সঙ্গে দেখা হয়েছে। আমি তিনদিনের ছুটিতে ছিলাম। তিনি আমার সঙ্গে রোববার (২৬ জানুয়ারি) বসবেন বলে জানিয়েছেন।
জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক মোজাফফর হোসেন আরটিভিকে বলেন, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন প্রস্তুত আছে। আমরা চলতি সপ্তাহেই তা জমা দিয়ে দিবো। বিভাগের সভাপতি ছুটিতে রাজশাহীর বাইরে থাকায় আমরা তার সাক্ষাৎকার নিতে পারিনি। তিনি আসলেই আমরা এই প্রতিবেদন জমা দিয়ে দেবো।
এর আগে, ড. সুজন সেনকে চলতি বছরের ২৫ আগস্ট অনিয়ম, আর্থিক দুর্নীতি, ক্লাসে অযোগ্যতাসহ কয়েকটি অভিযোগে বিভাগ থেকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন শিক্ষার্থীরা। গত ৮ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য, ছাত্র উপদেষ্টা ও বিভাগের সভাপতির কাছে প্রমাণসহ প্রায় ২০০ পৃষ্ঠার একটি লিখিত অভিযোগ জমা দেন তারা। অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ৯ সেপ্টেম্বর জরুরি সভায় সুজন সেনকে বিভাগের সব কার্যক্রম থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়। সেইসঙ্গে ১৮ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেয়।
আরটিভি/এএএ/এস
মন্তব্য করুন