হাঁস নাকি মুরগির ডিম, কোনটি বেশি পুষ্টিকর?
ডিম পুষ্টির একটি চমৎকার উৎস। মুরগি ও হাঁসের ডিম দুটিই জনপ্রিয় এবং পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ। তবে কোন ডিম আপনার জন্য ভালো, তা নির্ভর করে আপনার পুষ্টির চাহিদা, স্বাস্থ্যগত অবস্থা ও খাদ্যাভ্যাসের ওপর।
স্বাস্থ্য সচেতন মানুষদের জন্য ডিম খাদ্য তালিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। তবে প্রশ্ন থাকে, হাঁসের ডিম নাকি মুরগির ডিম—কোনটি বেশি পুষ্টিকর এবং স্বাস্থ্যকর? এ নিয়ে বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেছেন।
মুরগির ডিমের পুষ্টিগুণ
মুরগির ডিম বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়। এতে রয়েছে ভিটামিন এ, ডি, ই, বি১২, সেলেনিয়াম, জিঙ্ক, ফসফরাস ও আয়রনের মতো গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান। প্রতি ১০০ গ্রাম মুরগির ডিমে পাওয়া যায় প্রায় ১৭৩ ক্যালরি, ১৩.৩ গ্রাম প্রোটিন, এবং ১৩.৩ গ্রাম চর্বি, যার বেশিরভাগই স্বাস্থ্যকর ফ্যাট।
উপকারিতা: মুরগির ডিম সহজপাচ্য এবং অধিকাংশ মানুষের জন্য সাশ্রয়ী। এতে থাকা কোলিন মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ায়। এ ছাড়াও এতে থাকা ভিটামিন ডি হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
হাঁসের ডিমের পুষ্টিগুণ
হাঁসের ডিম তুলনামূলক বড় এবং এতে পুষ্টি উপাদানের মাত্রা বেশি। প্রতি ১০০ গ্রাম হাঁসের ডিমে প্রায় ১৮১ ক্যালরি, ১৩.৫ গ্রাম প্রোটিন, এবং ১৩.৭ গ্রাম চর্বি থাকে যা মুরগির ডিমের চেয়ে বেশি। এছাড়া হাঁসের ডিমে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, আয়রন, ভিটামিন এ, ডি, বি১২, আয়রন, জিঙ্ক ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বেশি থাকে। এটি শক্তি সরবরাহে কার্যকর এবং দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখতে সাহায্য করে।
উপকারিতা: হাঁসের ডিমের পুষ্টি বেশি, যা শারীরিক পরিশ্রম বা অতিরিক্ত শক্তির প্রয়োজনীয়তা পূরণে সহায়ক। উচ্চ শক্তি ও ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড-এর কারণে এটি হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
এছাড়া, প্রতি ১০০ গ্রাম মুরগির ডিমে স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে ৩.১ গ্রাম। অন্যদিকে, হাঁসের ডিমে মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাটের পরিমাণ মুরগির ডিমের তুলনায় ৫০ শতাংশ বেশি। অ্যামাইনো অ্যাসিডের পরিমাণেও হাঁসের ডিম মুরগির ডিমকে ছাড়িয়ে যায়। তবে মুরগির ডিমেও রয়েছে থ্রিয়োনিন, আইসোলিউসিন, ট্রিপটোফ্যান, লিউসিন, মিথায়োনিন, লাইসিন, কিস্টিন, টাইরোসিন, ভ্যালিন, সেরিন, গ্লাইসিন, প্রোলিন, অ্যাসপারটিক অ্যাসিড, হিস্টিডিন, অ্যালানিন এবং আর্জিনিনের মতো গুরুত্বপূর্ণ অ্যামাইনো অ্যাসিড।
স্বাদ ও ব্যবহার
স্বাদে হাঁসের ডিম কিছুটা কড়া এবং রান্নায় একটু ভিন্ন স্বাদ আনে। পেস্ট্রি, কেক, এবং রিচ ফ্লেভারের খাবারে হাঁসের ডিম ব্যবহার করা হয়। অন্যদিকে, মুরগির ডিম হালকা স্বাদের হওয়ায় প্রতিদিনের সাধারণ খাবারে উপযোগী।
কোনটি বেছে নেবেন?
পুষ্টিবিদদের মতে, পুষ্টিগুণের বিবেচনায় হাঁসের ডিম মুরগির ডিমের তুলনায় বেশি উপকারী। কারণ এতে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান বেশি পরিমাণে বিদ্যমান। তবে হাঁসের ডিমে কোলেস্টেরলের মাত্রা মুরগির ডিমের তুলনায় বেশি। প্রতি ১০০ গ্রাম হাঁসের ডিমে কোলেস্টেরল থাকে প্রায় ৮৮৪ মিলিগ্রাম, যেখানে মুরগির ডিমে কোলেস্টেরল মাত্র ৪২৫ মিলিগ্রাম। এই কারণে, হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের হাঁসের ডিম খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত।
এছাড়া, হাঁসের ডিম উচ্চ ক্যালরি এবং ফ্যাটযুক্ত, তাই এটি যারা শারীরিক পরিশ্রম বেশি করেন তাদের জন্য ভালো। অন্যদিকে, মুরগির ডিম কম ক্যালরি ও ফ্যাটযুক্ত হওয়ায় এটি সাধারণ ডায়েটের জন্য উপযুক্ত।
ওজন কমানোর জন্য মুরগির ডিম উত্তম। এটি কম ক্যালরি ও চর্বি সরবরাহ করে। যারা উচ্চ প্রোটিন ডায়েট অনুসরণ করছেন, তাদের ক্ষেত্রে হাঁসের ডিমের কেবল সাদা অংশ খাওয়া অধিকতর স্বাস্থ্যকর।
অন্তঃসত্ত্বা নারীদের জন্য দুই ধরনের ডিমই উপকারী, তবে হাঁসের ডিম পরিমিত পরিমাণে খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
হাঁসের ডিমে অ্যালার্জি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি, তাই সংবেদনশীল ব্যক্তিদের সতর্ক থাকা উচিত।
হাঁসের ডিম ও মুরগির ডিম উভয়ই পুষ্টিকর এবং স্বাস্থ্যকর। আপনার খাদ্যাভ্যাস, পুষ্টি চাহিদা এবং স্বাদ অনুযায়ী যে কোনো একটি বেছে নিতে পারেন। তবে, ডিম ভালোভাবে রান্না করে খাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি খাদ্যজনিত সংক্রমণ রোধে সহায়ক।
আরটিভি/জেএম
মন্তব্য করুন