মাসব্যাপী চলছে অমর একুশে বইমেলা। এরই মধ্যে মাসের অর্ধেক পেরিয়ে গেছে। দিন দিন জমেও উঠছে মেলা। যতই দিন যাচ্ছে বিক্রি বাড়ছে। প্রকাশকরাও পার করছেন ব্যস্ত সময়। হুমায়ূন আহমেদের প্রয়াণের প্রায় ১২ বছর পর মেলায় তার বইয়ের চাহিদা এবং পাঠকদের নানান বিষয়ে অন্যপ্রকাশের প্রকাশক মাজহারুল ইসলামের সঙ্গে কথা হয় আরটিভি নিউজের। আলাপচারিতার প্রথম অংশ পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো—
আরটিভি নিউজ : এই সময় এসেও হুমায়ূন আহমেদের বইগুলো পাঠকের কাছে কেমন আবেদন রাখছে?
মাজহারুল ইসলাম : একজন লেখকের প্রয়াণের প্রায় ১২ বছর পরও পাঠকরা তার বই একই রকম আগ্রহ নিয়ে পড়ছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায়, কোনো লেখকের মৃত্যুর ১০ বছর পরও পাঠকরা তার বই পড়ে, তাহলে ধরে নেওয়া হয় তার বইগুলো কালজয়ী হবে। আমরা মনে করি হুমায়ূন আহমেদ বাংলা সাহিত্যে ইতোমধ্যে কালজয়ী হিসেবে স্বীকৃতি হয়েছেন।
অন্যপ্রকাশের চিত্র দেখলেই বোঝা যায়, হুমায়ূন আহমেদের বইয়ের আবেদন কেমন। আর তার বইয়ের সংখ্যাতো অনেক। আগে যারা যে বইগুলো পড়েনি, এখন তারা সেগুলো পড়ছে। আবার প্রতিবছরই নতুন নতুন পাঠক তৈরি হচ্ছে। এই সবকিছু মিলিয়ে তার প্রতেকটি বই আবার নতুন করে ছাপা হয়ে পাঠকদের কাছে যাচ্ছে। এটা অনেক বড় একটি আনন্দের বিষয়। আমরা মনে করি, বাংলা সাহিত্যে এই রকম একটি লেখক পেয়েছি, যার প্রয়াণের ১২ বছর পরও তার বই একইরকমভাবে পঠিত হচ্ছে। আমি মনে করি, যতদিন পৃথিবীতে বাংলা ভাষা থাকবে, বাংলা ভাষায় মানুষ কথা বলবে, বাংলা ভাষা মানুষ পড়বে ততদিন হুমায়ূন আহমেদ পঠিত হবে।
আরটিভি নিউজ : এবারের বইমেলায় প্রবীণ লেখকদের সঙ্গে নতুন লেখকদের বই কেমন চলছে বা পাঠক কেমন গ্রহণ করছে?
মাজহারুল ইসলাম : আমরা প্রতিবছরই বেশকিছু নতুন লেখকের বই প্রকাশ করি। এমনও লেখক আছে, যাদের প্রথম বই অন্যপ্রকাশ থেকে বের হচ্ছে। তার লেখার সাহিত্য মান বিচার করেই সেগুলো করা হয়। তরুণদের মধ্যে এইরকম অনেক লেখক ভালো করছে। এমনও আছে যাদের বই মানুষ লাইন দিয়ে কিনছে। এই কিছুদিন আগে কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলা শেষ করে আসলাম। সেখানে আমাদের গৌরব সাদাত হোসাইনের বই দীর্ঘ লাইন ধরে মানুষ কিনছে।
কলকাতা বইমেলায় পাঁচ দিনব্যাপী বাংলাদেশের স্টলে ৪-৫ ঘণ্টা দীর্ঘ লাইন ধরে মানুষ বই কিনেছে। বাংলাদেশেও কিন্তু সাদাত হোসাইনের বই কিনতে দীর্ঘ লাইন হচ্ছে। এটা আমাদের বড় একটি প্রাপ্তি। আমরা আরেকজন পাঠকপ্রিয় বা নন্দিত লেখক পেয়েছি। এভাবেই কিন্তু আমাদের পাঠককে ধরে রাখতে হবে। যেভাবে হুমায়ূন আহমেদ দীর্ঘ প্রায় ৫০ বছর ধরে তার বই, নাটক, চলচিত্র, গানের মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষকে আনন্দ দিয়ে গেছেন।
আরটিভি নিউজ : হুমায়ূন আহমেদের অভাব অনুভব করছেন কেমন?
মাজহারুল ইসলাম : খুবই অল্প বয়সে হুমায়ূন আহমেদ প্রয়াত হন। যখন তিনি প্রয়াত হন, তখন তার প্রধান লেখাগুলো শুরু হয়েছিল। মধ্যাহ্ণ, জোছনা ও জননীর গল্প, বাদশাহ নামদার, দেয়াল, লীলাবতী এই লেখাগুলো মাত্র যখন শুরু হলো, সেই সময় তিনি প্রয়াত হন। আজকে যদি উনি আরও ১০ থেকে ২০ বছর থাকতেন তাহলে, বাংলা সাহিত্য আরও বেশি সমৃদ্ধ হতো। আরও অনেকগুলো ভালো লেখা আমরা তার কাছ থেকে পেতে পারতাম। সেই সুযোগ আর অনেক মিস করেছি।
তবে সৃষ্টিশীল মানুষেরা বেঁচে থাকে তাদের কাজের মধ্যে দিয়ে। হুমায়ূন আহমেদ নেই কিন্তু তার অসংখ্য ভক্ত-পাঠক রয়েছে। সেটা বইমেলার অন্যপ্রকাশের স্টলজুড়ে আছে। হুমায়ূন আহমেদ তার বই, নাটক, সিনেমা ও গানের মাধ্যমে পাঠকদের মাঝে বেঁচে আছেন এবং থাকবেন।