‘ঢাকায় নয়, রাজশাহীতেই প্রথম শহীদ মিনার’
বায়ান্ন'তে আবুল হোসেন তখন আঠারো বছরের টগবগে তরুণ। এখন চুরাশি। বয়সের কারণে সদা হাসোজ্জল এ মানুষটির শরীরে সেই টগবগে ভাব এখন আর নেই। শরীর অনেকটাই শীর্ণকায়। অবসরপ্রাপ্ত এই স্কুল শিক্ষক রাজশাহীর প্রগতিশীল যে কোনো আন্দোলন-সংগ্রামে এখনো সবার গুরুজন। তার উপস্থিতিতে যে কোনো প্রতিবাদ পায় নতুন মাত্রা। এ ভাষাসৈনিকের সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন আরটিভি অনলাইনকের প্রতিবেদক সিয়াম সারোয়ার জামিল।
বায়ান্ন'র ভাষা আন্দোলনে রাজশাহীর ভূমিকা কতটা?
বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে রাজশাহীর ঐতিহাসিক ভূমিকা ছিল। ভাষার জন্য প্রথম রক্ত ঝরে রাজশাহীতেই; ফায়ার ব্রিগেড মোড়ে। ৪৮’এর ১১ জানুয়ারি রাজশাহীতে হরতাল চলছিলো। হরতালের সমর্থনে মিছিল বের করলে সরকারের মদদপুষ্ট সন্ত্রাসীদের হামলায় রহমান ভাই, তোয়াব ভাই, প্রতীশ ঘোষ, লতিফ ভাইসহ আরো অনেক ছাত্রনেতার রক্তে রঞ্জিত হয় রাজশাহীর রাজপথ। ঘন্টা দুয়েক পরে সিলেটেও ভাষা দাবিতে রাজপথে নেমে আসা মানুষের মিছিলে হামলা চালায় মুসলিম লীগের গুন্ডা বাহিনী।
ঢাকায় হামলার খবর কীভাবে পেলেন?
তখন কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজের পরেই ছিল রাজশাহী কলেজের স্থান। পূর্ব পাকিস্তানের সব অঞ্চল থেকেই ছাত্ররা এ কলেজে পড়তে আসতেন। একুশে ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় টেলিফোনে খবর পাই ঢাকায় গুলি হয়েছে। সেসময় পত্রিকায় খবর আসতে দু’একদিন পার হয়ে যেতো। খবরটি রাজশাহী শহরে বিদ্যুৎবেগে ছড়িয়ে পড়ে। ছাত্র শহীদ হয়েছেন-এমন খবর শুনেই বিক্ষোভে ফেটে পড়ে ছাত্রসমাজও। মিছিলে-স্লোগানে প্রকম্পিত হয় রাজশাহীর রাজপথ। পরে গোপনে রাজশাহী কলেজে একটি শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়। এর নেতৃত্ব দেন টিপু ভাই, বাচ্চু ভাই, মানিক ভাইসহ আরো অনেকে। সবার নাম মনে নেই।
অনেকেই বলেন ঢাকায় প্রথম শহীদ মিনার হয়েছে, এটা কতটুকু সঠিক?
এটা একেবারেই ভুল তথ্য। ঢাকায় নয়, রাজশাহীতেই প্রথম শহীদ মিনার। আমরা তো একুশে ফেব্রুয়ারিতেই শহীদ মিনার বানালাম এখানে। ঢাকায় তো পরদিন হয়েছে। তাহলে ঢাকায় আগে কী করে হলো? এই ভুলটা অনেকেই করে, কেন করে, আমি জানি না। কিন্তু এটা শোধরানো উচিত। নতুন প্রজন্ম একটা ভুল তথ্য জেনে বড় হচ্ছে, এটা আমাদের জন্য লজ্জাজনক।
ভাষা আন্দোলন তৈরি হবার নেপথ্যে কী ছিল?
বাঙালিরা কখনই সাম্প্রদায়িক ছিল না। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর এ অঞ্চলের মানুষের স্বপ্নভঙ্গ হয়। আসলে ধর্মের ভিত্তিতে রাষ্ট্রভাগ স্বাভাবিক কারণেই তারা মেনে নিতে পারেনি। থেমেও থাকেনি। ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন চালিয়ে গেছে। তারই ফল হচ্ছে একুশে ফেব্রুয়ারি।
ভাষা আন্দোলনের যে স্বপ্ন ছিল, তার কতটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে?
বায়ান্নতে আমরা যে স্বপ্ন নিয়ে ভাষা আন্দোলন করেছিলাম, তার অনেক দাবি স্বাধীন বাংলাদেশ হবার পরেও পূর্ণ হয়নি। সর্বত্র বাংলা ভাষা আজও চালু হয়নি। কোর্টে তো এখনো ইংরেজিই চলছে। বিলবোর্ড-ব্যানার সব ইংরেজিতে হচ্ছে। পাহাড়িরা এখনো সবকিছু মাতৃভাষায় করার সুযোগ পায় না। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে শিক্ষার্থীদের মাতৃভাষায় সুশিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে।
এসজে
মন্তব্য করুন