বিদেশি চ্যানেলে বিজ্ঞাপন বন্ধে আইন কার্যকরে ভূমিকা
তথ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ টিভি সংশ্লিষ্টদের
দেশে প্রচারিত বিদেশি চ্যানেলে বিজ্ঞাপন বন্ধে কার্যক্রম শুরু হওয়ায় তথ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন টিভি চ্যানেল সংশ্লিষ্টরা। কোনও প্রকার অপপ্রচার ও বিভ্রান্তির ফাঁদে পা না দিয়ে দেশের স্বার্থে ক্যাবল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক আইন পুরোপুরি বাস্তবায়নের দাবি তাদের।
বিদেশি চ্যানেল প্রদর্শনের সময় বিজ্ঞাপন প্রচার নিষিদ্ধ রেখে ২০০৬ সালে ‘ক্যাবল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক আইন’ করে সরকার।
নিষিদ্ধ হওয়ার পরও ১৩ বছর ধরে তা মানা হচ্ছিল না। দেশের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে এ অপকর্ম করে আসছিল একটি চক্র। ফলে দেশের টেলিভিশন চ্যানেলগুলো অর্থিক ক্ষতির মুখোমুখি হওয়ার পাশাপাশি পাচার হচ্ছিলো মোটা অংকের অর্থ।
টিভি চ্যানেলগুলোর ক্রমাগত আপত্তির মুখে অবশেষে নড়েচড়ে বসে কর্তৃপক্ষ। শুরু হয় আইনের বাস্তবায়ন।
শুরুতে তথ্য মন্ত্রণালয় দুইটি পরিবেশক (ডিস্ট্রিবিউটর) সংস্থা ন্যাশনওয়াইড মিডিয়া লিমিটেড এবং জাদু ভিশন লিমিটেডকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠায়।
তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আইন মোতাবেক নোটিশ দিয়েছি। আমরা কোনও চ্যানেল বন্ধ করিনি।
বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়েছেন বেসরকারি টেলিভিশন সংশ্লিষ্টরা। এ নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরির কোনও সুযোগ নেই বলেও মত তাদের।
ডিবিসি নিউজের প্রধান সম্পাদক মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, আমি মনে করি, এই পদক্ষেপটি টেলিভিশন চ্যানেলের সুরক্ষার জন্য একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ।এজন্য অবশ্যই তথ্যমন্ত্রী ও তথ্য মন্ত্রণালয়কে ধন্যবাদ দিতে চাই।
সম্প্রচার সাংবাদিক কেন্দ্রের চেয়ারম্যান রেজোয়ানুল হক বলেন, এটি বহু আগে হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু হয় নাই। এটা এখন হয়েছে। বিষয়টিকে আমরা অভিনন্দন জানাচ্ছি। বাংলাদেশে টেলিভিশন খাতের স্বার্থে আইন অনেক আগেই কার্যকর হওয়ার দরকার ছিল।
এক্সপ্রেশান লিমিটেডের পরিচালক সৈয়দ আপন আহমেদ বলেন, ১৩ বছর পর আইনের কার্যকর হচ্ছে। এটাকে অবশ্যই সাধুবাদ জানাই। টেলিভিশন শিল্প খাতের সুরক্ষায় এটা অনেক বড় ভূমিকা পালন করবে।
এ ব্যাপারে আরটিভির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সৈয়দ আশিক রহমান বলেন, যখন দেশের বাইরে আমাদের টেলিভিশন প্রচার করছি, তখন ক্লিনফিড (বিজ্ঞাপন ছাড়া প্রোগ্রাম) ছাড়া আমরা একটি সেকেন্ডও প্রচার করতে পারি না। আমরা বিশাল একটি অসম প্রতিযোগিতার মধ্যে চলছি। আমাদের টিভি চ্যানেলগুলো আজ সিক (অসুস্থ) হয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, গত দেড় দশক আমরা প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিলাম। তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদকে আমাদের ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা- উনি ব্যবস্থা নিয়েছেন, আইনের প্রয়োগ করতে বলেছেন। উনি চিঠি দিয়েছেন। আমরা আশা করি এটা কার্যকর হবে।
আরটিভির প্রধান নির্বাহী আরও বলেন, বিভিন্ন প্রিন্ট মিডিয়ায় খবর এসেছে- বিদেশি চ্যানেলে বিজ্ঞাপন প্রচারে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। এই টাকাগুলো কিন্তু আমাদের- টেলিভিশন চ্যানেলের। যদি এই টাকাগুলো আমাদের দেশে ঢুকতো, তবে আজ এ দেশের কোনও টিভি চ্যানেলকে সিক (অসুস্থ) হয়ে থাকতে হয় না।
আইন বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেয়ায় তথ্যমন্ত্রীকে টেলিভিশন চ্যানেলের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং মিডিয়ার সকল সদস্যের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।
বিদেশি চ্যানেলে বিজ্ঞাপন প্রচার বন্ধ রাখা না গেলে দেশের টেলিভশন চ্যানেলগুলোর অস্তিত্বই হুমকির মুখে পড়ার শঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।
সম্প্রচার সাংবাদিক কেন্দ্রের চেয়ারম্যান রেজোয়ানুল হক বলেন, বিদেশি চ্যানেলে যে বিজ্ঞাপন প্রচার করা হয়, তার মাধ্যমে এ দেশ থেকে কোটি কোটি টাকা বিদেশে চলে যাচ্ছে। সেটি বন্ধ করার জন্য এবং টিভি শিল্পকে বাঁচানোর জন্যই সরকারের এই উদ্যোগ।
ডিবিসির নিউজের প্রধান সম্পাদক মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, ক্যাবল অপারেটরদের সঙ্গে আমাদের কোনও বিরোধ নেই। বিদেশি চ্যানেলগুলো যারা বাংলাদেশে নিয়ে আসে, তারা আরেকটা পক্ষ, তারা ক্যাবল অপারেটর না। সেই পক্ষ বাংলাদেশে বিদেশি চ্যানেল টাকা দিয়ে এনে প্রচার করছে। অথচ আমরা একশো-দেড়শো কোটি টাকা খরচ করে যে চ্যানেল প্রতিষ্ঠা করছি। বিদেশি চ্যানেলগুলো এখানে বিনামূল্যে প্রচার করছি।
এক্সপ্রেশান লিমিটেডের পরিচালক সৈয়দ আপন আহমেদ বলেন, সরকার কিন্তু একটি জায়গাও বলেনি চ্যানেল বন্ধ করতে। কিন্তু এক ধরনের চাপ প্রয়োগের অপকৌশল হিসেবে চ্যানেল বন্ধ করা হবে।
তিনি বলেন, আমি মনে করি দেশের স্বার্থে চ্যানেলগুলো বন্ধ করা হলেও কোনও ক্ষতি হবে না।
দেশের টেলিভিশন শিল্পকে রক্ষায়, সরকারকে আরও কঠোর হওয়ার আহবান গণমাধ্যম সংশ্লিষ্টদের।
এস/জেএইচ
মন্তব্য করুন