স্থায়ী জামিন পেলেন ফেনীর ৪ সাংবাদিক
ফেনীর সোনাগাজীর মাদরাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে প্রত্যাহার হওয়া পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম সরকারের রোষানলের শিকার ফেনীর চার সাংবাদিককে ৮টি মামলায় স্থায়ী জামিন দিয়েছেন জেলা ও দায়রা জজ আদালত।
জামিনপ্রাপ্ত চার সাংবাদিক হলেন দৈনিক ফেনীর সময় ও সাপ্তাহিক আলোকিত ফেনীর সম্পাদক মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন, দৈনিক অধিকার প্রতিনিধি ও অনলাইন পোর্টাল ফেনী রিপোর্ট’র সম্পাদক এসএম ইউসুফ আলী, বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমের স্টাফ করেসপন্ডেন্ট সোলায়মান হাজারী ডালিম এবং দৈনিক সময়ের আলো প্রতিনিধি ও দৈনিক স্টারলাইনের স্টাফ রিপোর্টার মাঈন উদ্দিন পাটোয়ারী।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বুধবার দুপুরে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করেন সাংবাদিকরা। জেলা ও দায়রা জজ সাঈদ আহম্মদ তাদের স্থায়ী জামিন আদেশ দেন। জামিন আবেদনের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট আক্রামুজ্জামান। এছাড়া সিনিয়র আইনজীবী আবু তাহের, লক্ষ্মণ বণিক, জাহিদ হোসেন খসরু, নুর হোসেন, নুরুল আমিন খান, আশ্রাফুল হক, শাহজাহান সাজু, মিজানুর রহমান সেলিম, গাজী তারেক আজিজ, এমদাদ হোসেন, এমদাদুল হক মাসুদ ও সিরাজুল ইসলাম মিন্টুসহ বিপুল সংখ্যক আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) হাফেজ আহম্মদ।
এর আগে ২ জুলাই হাইকোর্টের বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো. রিয়াজ উদ্দিন খানের বেঞ্চ চার সপ্তাহের জামিন দেন। আদালতে জামিন আবেদনের পক্ষে ছিলেন মোহাম্মদ কামাল হোসেন, মোহাম্মদ মহসিন কবির, আজিজুর রহমান ও এসএম সালেহ আহমেদ।
গত ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ-দৌলার হাতে যৌন নিপীড়নের শিকার হন ওই প্রতিষ্ঠানের আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত। সেদিনই স্থানীয় জনতা অধ্যক্ষকে ধরে পুলিশে সোপর্দ করে। এ ঘটনায় নুসরাতের মা শিরীন আক্তার বাদী হয়ে থানায় অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। তবে মামলা প্রত্যাহার করতে নুসরাত ও তার পরিবারকে হুমকি-ধমকি দেন অধ্যক্ষের সহযোগীরা। একপর্যায়ে ৬ এপ্রিল পরীক্ষার আগ মুহূর্তে মাদরাসার ছাদে ডেকে নিয়ে নুসরাতের শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পুলিশ তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১০ এপ্রিল মৃত্যু হয় নুসরাত জাহান রাফির।
প্রথমে ঘটনাটিকে ‘আত্মহত্যা’ বলে প্রচার করেন সোনাগাজী মডেল থানার প্রত্যাহার হওয়া ওসি (বর্তমানে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেপ্তার) মোয়াজ্জেম হোসেন। তার পক্ষে অবস্থান নেন পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম সরকার। ঘটনাটি নিয়ে যখন দেশ-বিদেশের গণমাধ্যম সরব হয়, এমনকি স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন নুসরাতের উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা ও ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তারে নির্দেশ দেন, তখনও বিস্ময়কর নির্লিপ্ততা দেখান এসপি জাহাঙ্গীর সরকার। সোনাগাজীতে পর্যন্ত যাননি তিনি।
মামলায় সিরাজ উদ-দৌলাসহ কয়েকজনকে আসামি করতে এসপি-ওসি টালবাহানা করেন বলে নুসরাতের পরিবারের পক্ষ থেকে তখন অভিযোগ ওঠে। শুধু তাই নয়, পুলিশ সদর দপ্তরেও তিনি (এসপি) ওসির পক্ষে সাফাই গেয়ে চিঠি লিখেন। তাদের পক্ষপাতমূলক ভূমিকা প্রকাশ পেলে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় ওঠে।
মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই) স্থানান্তরের পর ঘটনায় জড়িতরা একে একে গ্রেপ্তার হতে থাকেন। বেরিয়ে আসে ঘটনার মূল রহস্য। একপর্যায়ে পুলিশ সদরদপ্তরের তদন্তে এসপি-ওসিসহ চার পুলিশ কর্মকর্তা দোষী সাব্যস্ত হন। ওসি মোয়াজ্জেমকে বরখাস্ত করে রংপুর রেঞ্জে সংযুক্ত করা হয়। আর এসপি জাহাঙ্গীর সরকারকে প্রত্যাহার করে সংযুক্ত করা হয় পুলিশ সদরদপ্তরে। অপর দুইজনকেও প্রত্যাহার করে পার্বত্য এলাকায় সংযুক্ত করা হয়।
পি
মন্তব্য করুন