প্রবাসী শ্রমিকদের জন্য ‘২৪এশিয়া’ নামের প্ল্যাটফর্মে কাজ করছে এক ঝাঁক তরুণ
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ১ কোটি ২৫ লাখ বাংলাদেশি শ্রমিক আছেন। রেমিটেন্স যোদ্ধা হিসেবে এই শ্রমিকরাই নীরবেই দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রেখে যাচ্ছেন। বিদেশে কেউ অবৈধ অভিবাসী, আবার কেউ অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে চাইতে পারে না সহায়তা। অনেক প্রবাসীর ভুল ও অন্যায়ের কারণে বাংলাদেশের নামকে অনেকেই খাটো করার চেষ্টা করেন। স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বিশ্বের কাছে ইতিবাচকভাবে তুলতে কাজ করছেন অনেক তরুণ। তেমনই বাংলাদেশের এক তরুণ নাজমুল খান। কর্মসূত্রে সিঙ্গাপুরে বসবাস করলেও দেশের প্রতি কাজের ভীষণ আগ্রহ তার। প্রবাসী বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক নিরাপত্তার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন নাজমুল ও তার বন্ধুরা।
অনেক প্রবাসী শ্রমিক হয়রানির শিকার হন, নানাভাবে জেল-জরিমানার শিকার হন। তাদের কাছে এক ভরসার নাম নাজমুল। সবাইকে সহায়তা করতে এবং বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বাড়াতে ২০১৯ সালের জুন মাসে প্রতিষ্ঠা করেন ২৪এশিয়া নামের একটি সামাজিক প্ল্যাটফর্ম। তিনি আরেক সৃজনশীল তরুণ মামুন খানকে নিয়ে তৈরি করেন এই প্ল্যাটফর্ম। প্ল্যাটফর্ম তৈরির শুরু থেকেই কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও দুবাইয়ের বন্ধুদের পাশে নেন তিনি। তার ভাষ্যে, 'যেকোনো ক্ষেত্রে আমাদের এক হয়ে কাজ করতে হবে। অনেকে মিলে কাজ করলে একতাবদ্ধ হয়ে অনেক বড় বড় কাজ করা যায়। নানাভাবে জুলহাস জুবায়ের, জাব্বির, রাশেদ, মুমিন, রকি, নাসরিন ও সজীবসহ তাশরীফ, রুবেল, রিয়াজ, ওমর ফারুক নামের অনেক তরুণ যুক্ত হয় তাদের সঙ্গে।'
২৪ এশিয়া এর উদ্দেশ্য: প্রযুক্তির এই যুগে আমাদের ভাব প্রকাশের অনেক সহজ মাধ্যম আছে তার পরেও আমরা প্রবাসীরা কেমন যেন একটু আলাদা| আমরা দেশে রেমিটেন্স পাঠাই ঠিকই কিন্তু জ্ঞান বা শিক্ষা বিস্তারে এই রেমিটেন্স তেমনভাবে ব্যবহার হচ্ছে না।
২০১৯ এর প্রথম দিকে আমরা ২১ জন ভলান্টিয়ার উদ্যোগ নিলাম কিছু একটা করবো আমাদের প্রবাসীদের জন্য, আমাদের অভিবাসী জন্য, দেশের জন্য এবং দেশের মানুষের জন্য। আর সেই উদ্দেশ্য নিয়ে ২৪এশিয়ার জন্ম।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বাংলা ভাষাবাসী ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী, ছাত্র, শিক্ষক, বাবা-মা, ভাই-বোনদের এক প্লাটফর্মে কানেক্ট করে তাদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন, তাদের অভিজ্ঞতা উপস্থাপন, আইডিয়া, কাজের ক্ষেত্র শেয়ার করলে আমাদের অন্য দেশে বসবাস করা বাংলাদেশিদের উপকারে আসবে ও তাদের মধ্যে সেতু বন্ধন হবে।
আমরা বেশির ভাগ কাজ করেছি আমাদের অভিবাসী ভাইদের নিয়ে। আমরা কাজ করেছি তাদের ট্যালেন্টকে বিশ্বের কাছে উপস্থাপন করতে। কমিউনিটিতে তাদের ট্যালেন্ট উপস্থাপন করে তাদের জন্য একটা জায়গা তৈরি করতে। অন্যদের উৎসাহ যুগিয়েছি তাদের নিয়ে ভাবতে।
নাজমুলদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে বাংলাদেশকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরা, আর্থ-সামাজিক অবস্থা পরিবর্তনে বেকার সমস্যা দূর করা, রেমিটেন্স বৃদ্ধির জন্য কার্যকর কৌশল প্রণয়নে গবেষণা পর্যায়ে কাজ করা। বিদেশে কাজের অভিজ্ঞতা যেন বাংলাদেশের শ্রমিকেরা দেশে কাজে লাগাতে পারে। তার ভাষ্যে, আমাদের দেশের প্রায় ১ কোটি প্রবাসী নানা দেশে কাজ করেন। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত কিন্তু তার প্রবাসী শ্রমিক ও জনশক্তির বুদ্ধিবৃত্তিক জানাশোনা এবং কাজের অভিজ্ঞতা নিজ দেশে নানা ক্ষেত্রে কাজে লাগায়। আমাদের সেই সুযোগ কম। আমাদের প্রবাসী শ্রমিকদের সেই অভিজ্ঞতা আমাদের দেশে কাজে লাগানোর জন্য কাজ করছি আমরা।
'সিঙ্গাপুরে বসবাসকারী বাংলাদেশের দক্ষতা বিকাশে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। তাদের সৃজনশীলতা বিকাশের সুযোগ করে দিচ্ছেন তারা। প্রবাসী শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে বেশ সচেষ্ট নাজমুল।
অনেকে কিছু না জেনে বিদেশে চলে যান। তাদের পরামর্শক হিসেবে নাজমুল যেন এক ভরসা। যেসব শিক্ষার্থী ও তরুণ সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে পা রাখেন তাদের পড়াশোনা, ক্যারিয়ার, চাকরি-বাকরি, স্বাস্থ্যসেবা, বাসস্থানসহ বিভিন্ন বিষয়ে দিক নির্দেশনাসহ নানাভাবে সহায়তা করছেন নাজমুল। সিঙ্গাপুরের প্রশাসনের সঙ্গেও প্রবাসী শ্রমিক উন্নয়নে কাজ করছেন নাজমুল। সিঙ্গাপুরের সাংসদ লুইস অং সিঙ্গাপুর সংসদে অভিবাসীদের ডরমিটরি সুযোগ সুবিধা নিয়ে আলোচনা করেন। বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির ঘুরে যাওয়া এই সংসদ নাজমুলদের কাছে তার অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। সিঙ্গাপুরের নানা পেশার মানুষদের মধ্যে প্রবাসী শ্রমিকদের মর্যাদাবৃদ্ধিসহ সামাজিক সুযোগ সুবিধা বিকাশে অনন্য কাজ করছেন তিনি। বাংলাদেশের আলোচিত ব্যক্তিত্বদের প্রবাসী শ্রমিকদের উৎসাহ দেয়ার জন্য নানা সামাজিক অনুষ্ঠান আয়োজন করেছেন তিনি। চলচ্চিত্র অভিনেতা, লেখক, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, চিকিৎসকসহ নানা পেশার তারকা ও বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের প্রবাসীদের অনুপ্রেরণা দেয়ার মাধ্যমে ভিন্ন পথে চমক তৈরি করেছেন নাজমুল।
সিঙ্গাপুরে করোনায় বাঙালি অভিবাসীদের কাজ বন্ধে ও লকডাউনে আমাদের অভিবাসী কর্মীরা খুব উদ্বিগ্ন। তারা তাদেরকে মানসিক স্বাস্থ্যে সহায়তা, মেডিকেল, রেমিটেন্স, অ্যাডভাইস ও আনন্দ দিতে চেষ্টা করছি।
২৪এশিয়া নামে একটা ভলান্টারি প্লাটফর্ম থেকে তারা এই অনুষ্ঠানগুলো পরিচালনা করছে যা আমাদের অভিবাসী ভাইরা খুব আনন্দ ও উৎসাহ এর মাধ্যমে লকডাউন অবস্থায় উপভোগ করছে।
২৪এশিয়া এ পর্যন্ত ৪৫টি অনুষ্ঠান করেছে তার মধ্যে যে বিষয়গুলোর গুরুত্ব ছিল তা হলো- ১. মাইগ্রান্ট টক শো ২. মেন্টাল হেলথ ৩. রেমিটেন্স চ্যালেঞ্জ ৪. ডা. টক শো ৫. ক্যারিয়ার আপগ্রেড ৬. কবিতা উৎসব ৭. গ্লোবাল স্টুডেন্ট টক শো ৮. মাইগ্রান্ট মিউজিক শো ৯. গ্লোবাল বিজনেস ক্রাইসিস
এ পর্যন্ত ২২টি দেশে তাদের প্রতিনিধি আছে যেটা তারা খুব শিগগির ৫০টা দেশে উন্নত করতে কাজ করছি। সিঙ্গাপুরে ২০ জন কর্মী ও ৪২ জন স্বেচ্ছাসেবক আছেন, যারা নিজেদের কাজের সাথে সাথে আমাদের হয়ে কাজ করছে।
সি/
মন্তব্য করুন