মালয়েশিয়ায় অবৈধদের জরিমানা দিয়ে দেশে ফেরার সুযোগ
মালয়েশিয়ায় কর্মরত অবৈধ অভিবাসীদের জরিমানা দিয়ে নিজ নিজ দেশে ফেরার সুযোগ দিয়েছে দেশটির সরকার।
বুধবার (৫ আগস্ট) এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশনের ডিজি খায়রুল জায়মি দাউদ।
খায়রুল জায়মি দাউদ বলেন, অভিবাসীদের মধ্যে যাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে তারা জরিমানা দিয়ে নিজ নিজ দেশে ফিরে যেতে পারবেন। যারা ১ বছর পর্যন্ত অবৈধ তারা ১ হাজার রিঙ্গিত আর ১ বছরের বেশি অবৈধ হলে ৩ হাজার রিঙ্গিত জরিমানা দিয়ে ইমিগ্রেশন থেকে স্পেশাল পাস সংগ্রহ করতে হবে।
তবে লকডাউনের মধ্যে পর্যটক ভিসায় এসে যাদের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে তারা সরাসরি বিমান টিকিট কেটে দেশে যেতে পারবেন বলে মন্তব্য করেন দেশটির সিনিয়র মন্ত্রী সেরি ঈসমাইল সাবরি ইয়াকুব।
এসএস
মন্তব্য করুন
অভিনেতা ও লেখক রাজুব ভৌমিকের লেফটেন্যান্ট পদে পদোন্নতি
নিউইয়র্ক সিটি পুলিশ ডিপার্টমেন্ট (এনওয়াইপিডি)-এর সদর দপ্তরে এক বিশেষ অনুষ্ঠানে অভিনেতা ও লেখক রাজুব ভৌমিককে লেফটেন্যান্ট পদে পদোন্নতি প্রদান করা হয়েছে। বাংলাদেশের নোয়াখালীর জেলার সন্তান রাজুব ভৌমিক ২০১২ সালের জুলাই মাসে এনওয়াইপিডি-তে পুলিশ অফিসার হিসেবে যোগদান করেন। সন্ত্রাস দমন ইউনিটে কাজ শুরু করে তিনি অসামান্য দক্ষতা ও সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। তার কর্মজীবনের অধিকাংশ সময় তিনি নিউইর্য়কের ব্রঙ্কস এলাকায় জনগণের নিরাপত্তা রক্ষার জন্য দায়িত্ব পালন করেছেন।
রাজুব ভৌমিক ২০২১ সালে তার যোগ্যতা ও নিষ্ঠার কারণে সার্জেন্ট পদে পদোন্নতি পান। তার নেতৃত্বে পুলিশ অফিসাররা বিভিন্ন সময়ে চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতি দক্ষতার সঙ্গে মোকাবিলা করেছে। এনওয়াইপিডি-তে তার দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময়ের সেবায় তিনি পুলিশের প্রতি জনগণের আস্থা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
আজকের অনুষ্ঠানে লেফটেন্যান্ট রাজুব ভৌমিকের হাতে পদোন্নতির সনদ তুলে দেন এনওয়াইপিডি কমিশনার জেসিকা টিশ। কমিশনার টিশ তার বক্তব্যে আজকের পদোন্নতিপ্রাপ্তদের পেশাদারিত্ব, কঠোর পরিশ্রম এবং সম্প্রদায়ের প্রতি তার অবদানকে প্রশংসা করেন। পুলিশ বাহিনীতে তার এই নতুন দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে রাজুব ভৌমিক আরও বৃহত্তর পরিসরে জনগণের সেবা করবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন তার সহকর্মী ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
লেফটেন্যান্ট রাজুব ভৌমিক শুধু একজন দক্ষ পুলিশ কর্মকর্তা নন, তিনি একজন অভিনেতা ও লেখক হিসেবেও পরিচিত। তিনি পুলিশ বাহিনীর দায়িত্বপূর্ণ জীবনের পাশাপাশি সৃজনশীল জগতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। সম্প্রতি তার অভিনীত পাশা চলচ্চিত্র অ্যামজান প্রাইমে মুক্তি পায়। তার লেখা ‘যে ছায়ায় সূর্য হাসে’ কবিতার বইটি সম্প্রতি প্রকাশ হয়েছে। তিনি অভিনয়ে তার শৈল্পিক দক্ষতার মাধ্যমে দর্শকদের মন জয় করেছেন এবং লেখালেখির মাধ্যমে সমাজের বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরে পাঠকদের অনুপ্রাণিত করেছেন।
আমিরাতের ভিসা উন্মুক্ত হবে ফেব্রুয়ারিতে: ইউএই রাষ্ট্রদূত
সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) ট্যুরিস্ট ভিসা আগামী ফেব্রুয়ারি থেকে উন্মুক্ত হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূত আব্দুল্লাহ হামুদি।
সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) রাতে দুবাইয়ে বাংলাদেশ কমিউনিটির পক্ষ থেকে সিনিয়র সচিব পদমর্যাদায় নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনসারীকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। সেখানে উপস্থিত হয়ে তিনি এ কথা বলেন।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনসারী বলেন, জুলাই বিপ্লবে কিছু প্রবাসী নিজের ভাইয়ের, সন্তানের মৃত্যু ও গণহত্যা সহ্য করতে না পেরে নিজের ক্ষতি হবে জেনেও আমিরাতে বিক্ষোভ করেছেন। তাদের আত্মত্যাগকে কীভাবে শ্রদ্ধা জানাব তা আমার জানা নেই। তবে মনে রাখতে হবে নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে নিয়ম মেনে চলার বিষয়ে আমাদেরকে আরও স্বতঃস্ফূর্ত হতে হবে।
তিনি বলেন, সংযুক্ত আরব আমিরাতের সকল উন্নয়নে বাংলাদেশিদের অবদান অনস্বীকার্য। এ দেশের রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা আর উঁচু উঁচু দালান সবকিছুতেই বাংলাদেশি শ্রমিকদের ঘাম লেগে আছে। তাই আমরা আশা করতে চাই, সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকার বিভিন্ন পেশায় দক্ষ জনবল নিয়োগে আরও বেশি আন্তরিক হবেন। বাংলাদেশ থেকে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আইটি প্রফেশনাল এবং অদক্ষ শ্রমিকদের ভিসার বিষয়টি আরও গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করার আহ্বান জানাই।
তিনি আরও বলেন, ড. ইউনূস এমন এক ব্যক্তি, পৃথিবীব্যাপী তার প্রতি মানুষের সম্মান ও শ্রদ্ধাবোধ আকাশচুম্বী। পৃথিবীর কোনো রাষ্ট্রপ্রধান তার অনুরোধ ফেলতে পারেন না। আমিরাতের রাষ্ট্রপ্রধানও তার অনুরোধ ফেলতে পারেননি। বাংলাদেশের মানুষ আমিরাতের রাষ্ট্রপ্রধানের প্রতি এ জন্য আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবে। আমিরাতের সঙ্গে অচিরেই ভিসা জটিলতা কেটে যাবে। এ দেশের সঙ্গে আমাদের যে সুদৃঢ় বন্ধুত্ব রয়েছে, তাতে কখনও চিড় ধরার সম্ভাবনা নেই।
এ সময় সংযুক্ত আরব আমিরাতের ভিসা নিয়ে সুখবর দেন বাংলাদেশের নিযুক্ত সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূত আব্দুল্লাহ আলী আব্দুল্লাহ খাসিফ আল হামুদি। তিনি বলেন, আগামী জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশিদের জন্য আমিরাতের ভিসা জটিলতা দূর হবে। চালু হবে ভ্রমণ ভিসাসহ সব ধরনের ভিসা।
তিনি বলেন, বাংলাদেশসহ অসংখ্য দেশের জন্য আমিরাতে ভিসা বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। কয়েক বছর পূর্বে যেখানে আমিরাতে বাংলাদেশির সংখ্যা মাত্র সাত থেকে আট লাখের মধ্যে ছিল, সেখানে বর্তমানে বাংলাদেশির সংখ্যা ১২ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। যেটা অন্যান্য দেশের তুলনায় সর্বোচ্চ।
কর্মজীবন শেষে বাংলাদেশকে সেকেন্ড হোম হিসেবে বেছে নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে এ রাষ্ট্রদূত বলেন, মুশফিক আমার বন্ধু। বাংলাদেশের মানুষের জন্য তার লড়াই সংগ্রাম আমাকে উৎসাহিত করে। তার সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পেরে আমি আনন্দিত।
বিএনপি স্কটল্যান্ড শাখার বিজয় দিবস উদযাপন
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপি স্কটল্যান্ড শাখার সদ্য সাবেক আহবায়ক কমিটির উদ্যোগে বাংলাদেশের মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে এক আলোচনা সভার ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে।
গত সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) রাতে স্থানীয় ভোজন রেষ্টুরেন্টে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বিএনপি স্কটল্যান্ড শাখার সিনিয়র সদস্য সেলিম হায়দার। প্রধান অতিথি ছিলেন সদ্য সাবেক আহবায়ক কমিটি আহবায়ক আব্দুল মুহিত খান বাদশা। বিশেষ অতিথি ছিলেন সদ্য সাবেক যুগ্ম আহবায়ক আব্দুল মিয়া লিটন।
আলোচনা সভা পরিচালনা করেন সদ্য সাবেক সদস্য সচিব এডভোকেট মো মোস্তফা এবং এম এ ওয়াহাব ভুইয়া। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন দেলোয়ার হোসেন, তাজুল ইসলাম নান্না, খুরশেদ আলম, মনোয়ার পারভেজ জুয়েল, মাসুদ আহসান, মন্জু হায়দার, খালেদ হোসেন, খছরু মিয়া, মাসুম উদ্দিন প্রমুখ।
পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত এর মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয় এবং দলীয় সংগীতের (প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ) শেষ হয়।
সৌদি আরবে নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব গ্রহণ
সৌদি আরবে নবনিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. দেলোয়ার হোসেন সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান আল সৌদের কাছে পরিচয়পত্র পেশ করেছেন।
বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পক্ষে মহাপরিচালক (প্রটোকল) আলী আস সাহরী রিয়াদে পরিচয়পত্রের কপি গ্রহণ করেন।
রাষ্ট্রদূত তাকে সৌদি আরবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে গ্রহণ করায় সৌদি বাদশাহ এবং সৌদি যুবরাজের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। মহাপরিচালক (প্রটোকল) রাষ্ট্রদূতকে সাদরে গ্রহণ করেন এবং রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন। রাষ্ট্রদূত ও ভবিষ্যতে বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যকার সম্পর্ক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
পরে রাষ্ট্রদূত দূতাবাসের কর্মকর্তা কর্মচারীদের সাথে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে মিলিত হন, যেখানে তিনি সবাইকে হাসিমুখে ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে দূতাবাসের সেবা প্রত্যাশীদের সেবা প্রদান করার জন্য নির্দেশনা প্রদান করেন।
রাষ্ট্রদূত কর্মকর্তা কর্মচারীদের সাথে মতবিনিময় সভার শুরুতেই স্মরণ করেন মুক্তিযুদ্ধের লাখো লাখো শহীদ এবং গত জুলাই-আগস্ট মাসে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে নিহত শহীদদেরকে। তিনি এই পরিবর্তিত বাংলাদেশে জন আকাঙ্ক্ষার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দূতাবাসের কাজে আত্মনিয়োগ ও এর গুনগত মান উন্নয়নের আহ্বান জানান।
রাষ্ট্রদূত মো. দেলোয়ার হোসেন সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের ১৬তম রাষ্ট্রদূত। উল্লেখ্য রিয়াদ দূতাবাসে দায়িত্ব গ্রহনের পূর্বে তিনি দক্ষিণ কোরিয়াতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
মেয়েদের বাঁচাতে গিয়ে প্রবাসী বাংলাদেশি দম্পতির মৃত্যু
সমুদ্র সৈকতে দুই মেয়েকে বাঁচাতে গিয়ে অস্ট্রেলিয়ার বাংলাদেশি প্রবাসী দম্পতি মারা গেছেন। দুজনই খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাবেক শিক্ষার্থী।
শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) দেশটির ওয়ালপোল নামক স্থানে সমুদ্র সৈকত থেকে তাদের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
জানা গেছে, বড়দিনের ছুটিতে পরিবারের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার ওয়ালপোল পশ্চিম শহরে সমুদ্রে সৈকতে ঘুরতে গিয়েছিলেন শহিদুল হাসান স্বপন ও সাবরিনা আহমেদ পাপড়ি। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও গ্রামীণ পরিকল্পনা (ইউআরপি) ডিসিপ্লিনের ৯৭ ব্যাচের সাবেক শিক্ষার্থী ছিলেন স্বপন, তার স্ত্রী পাপড়ি একই ডিসিপ্লিনের ৩ ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। অস্ট্রেলিয়ার কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন স্বপন। এদিন সৈকতে নেমে তাদের দুই মেয়ে সমুদ্রের পানির ভাটার টানে ডুবে যাচ্ছিলেন। দ্রুত তাদের বাঁচাতে সমুদ্রে নেমে পড়েন বাবা-মা। মেয়েদের জীবিত উদ্ধার করতে পারলেও তারা দুইজন ডুবে যান। এ ঘটনায় তাদের দুই মেয়ে সুস্থ রয়েছে।
স্বপন-পাপড়ি দম্পতির এমন মৃত্যুতে অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশি কমিউনিটি ও পরিবারে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
এদিকে তাদের মৃত্যুতে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন (কুআ), বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় প্ল্যানার্স অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন ও অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) গভীর শোক ও সমবেদনা জানিয়েছেন।
আরটিভি/এসএপি/এস
নাহিদের হাত ধরেই ইউরোপে প্রথম বাংলাদেশি রেস্টুরেন্ট
উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন নিয়ে ৯০ দশকে সুইডেনে পাড়ি জমান নাহিদ হাসান। এরপর জীবনে এসেছে নানা প্রতিকূলতা। তবুও হার মানেননি। বারবার বলেছেন, আমি পারবো। শেষ পর্যন্ত তিনি পেরেছেন। ইউরোপের বুকে লাল-সবুজের বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করে প্রতিষ্ঠা করেছেন প্রথম বাংলাদেশি রেস্টুরেন্ট। যেখানে মেলে নিহারি থেকে বিরিয়ানি, সবই।
তবে তার পথচলাটা সুখকর ছিল না। শুরুতে এমনও হয়েছে তান্দুরির ওভেন চালানোর পয়সাটাও ছিল না তার পকেটে। আরটিভি অনলাইনকে শোনালেন সে গল্প।
নাহিদ হাসান বলেন, অন্যান্য দু-চারজনের মতো আমিও ইউরোপে এসেছিলাম পড়াশোনার জন্য। কিন্তু খরচে পেরে না ওঠায় একটি রেস্টুরেন্টে পার্টটাইম কাজ শুরু করি। ভেবেছিলাম অবস্থার একটু পরিবর্তন হলে ছেড়ে দেব। কিন্তু হলো উল্টোটা। দিনদিন আমার রান্নার প্রতি আগ্রহটা বাড়তে থাকল।
তিনি বলেন, ফ্যাশন ডিজাইনে পড়াকালে যখন আমি এই পার্টটাইম কাজটা শুরু করি, তখন স্টকহোমে মাত্র তিনটি ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্ট ছিল। এর মধ্যে একদিন আমার এক ছোট ভাই বলল, টাকা জমিয়ে দুজনে মিলে একটা রেস্টুরেন্ট দিলে কেমন হয়? আমি বললাম, মন্দ হয় না। এরপর ইরাকে যুদ্ধকালে (২০০০ সাল পরবর্তী সময়ে) সেই সুযোগ আসে। সস্তায় আমরা একটা রেস্টুরেন্ট পেয়ে যাই। চিন্তা করলাম যুদ্ধ-বিগ্রহ যেহেতু ভালো লাগে না, সেহেতু রেস্টুরেন্টের নাম দিই ‘শান্তি’। ব্যস্, এভাবেই শুরু।
কিন্তু নাহিদের এরপরের গল্পটা মন খারাপের। কারণ, প্রথম ছয় মাস খুব খারাপ সময় পার করেছেন তিনি। কোনো কাস্টমারই পাননি। সে সময় তার সঙ্গী ছিলেন নিজের প্রিয়তমা স্ত্রী। যিনি তাকে সার্বক্ষণিক কাজে সহায়তার পাশাপাশি বারবার সান্ত্বনা দিয়ে বলতেন, একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে। পরে হলোও তাই।
সুইডেনের প্রভাবশালী একটি দৈনিক নাহিদের রেস্টুরেন্টের ইতিবাচক রিভিউ প্রকাশ করলো। এর পরদিন থেকেই বদলে গেল চিত্র। ভোজনরসিকদের ভিড় বাড়তে থাকল। সাফল্যের গল্পটা শুরু সেখান থেকেই।
এর ধারাবাহিকতায় নাহিদ হাসান খুললেন দ্বিতীয় রেস্টুরেন্ট, নাম ‘শান্তি সফট কর্নার’। খাবারের মান ও স্বাদ ভালো থাকায় এই রেস্টুরেন্টটাও সেখানকার মানুষ ভালোভাবে গ্রহণ করলো। নাম ছড়িয়ে যেতে থাকলো চারদিকে।
এ অবস্থায় একদিন লন্ডন থেকে কিছু লোক সেখানে খেতে আসেন। পরে খাবারের স্বাদ পরখ করে তারা বলেন, নাহিদ আপনার রান্না ভালো। লন্ডনে আসেন, আমরা রান্নার প্রতিযোগিতা করি। সেখানে আপনি অংশ নেবেন। তাদের কথা শুনে নাহিদ ভাবেন, রান্না দিয়েই একদিন তিনি দেশকে বহির্বিশ্বের কাছে উপস্থাপন করবেন।
জার্নিটা এভাবেই চলছিল। এর মধ্যে নাহিদ পিতৃত্বের স্বাদ পান, মেয়ে স্কুলে ভর্তি হয়। পরে একদিন তার মেয়ে স্কুল থেকে ফিরে বলে, তার বান্ধবী জানিয়েছে, তোমরা বাংলাদেশি হয়েও কেন ইন্ডিয়ান নাম দিয়ে রেস্টুরেন্ট চালাচ্ছো? বাংলাদেশি নাম কেন দিচ্ছো না?
মেয়ের বান্ধবীর কথাটা ভালো লেগে যায় নাহিদের। সিদ্ধান্ত নেন আর ইন্ডিয়ান নাম নয়, এখন থেকে বাংলা নামেই রেস্টুরেন্ট চালাবো। এরপর খুলে ফেলেন ‘টাচ অব বেঙ্গল’ নামে নিজ মালিকানার তৃতীয় রেস্টুরেন্ট।
বলে রাখা ভালো, এই ‘টাচ অব বেঙ্গল’-ই ইউরোপের প্রথম বাংলাদেশি রেস্টুরেন্ট। যার নাম ও মালিক দুই-ই বাংলাদেশি। এর আগে, সেখানে বাঙালি মালিকরা রেস্টুরেন্ট দিলেও চলেছেন ইন্ডিয়ান নাম দিয়ে।
সিজলার, ডাল, শাক-সবজি, পালক পনির, নিহারি, বিরিয়ানি থেকে শুরু করে ফিস ভুনাও পাওয়া যায় নাহিদের রেস্টুরেন্টে। আর সেসব মনভরে খান সেখানকার মানুষ। এতে তৃপ্তি পান নাহিদ।
আরটিভি অনলাইনকে তিনি বলেন, রান্না একটা আর্ট। ডাক্তার যেমন চান রোগীকে সেবা দিয়ে ভালো করতে, আমিও তেমনি চেয়েছিলাম কাস্টমারকে মজাদার খাবার উপহার উপহার দিয়ে সন্তুষ্ট করতে। কিন্তু এটা দিয়ে অনেক উপার্জন হবে, এমনটি কখনও ভাবিনি।
নাহিদ আরও বলেন, বিক্রি বাড়াতে কখনও কারও খাবারের মেন্যু কপি করিনি। নিজে যা পেরেছি, নিত্যনতুন খাবার মানুষকে উপহার দিয়েছি। এমনকি এখনও সেই চেষ্টা অব্যাহত আছে। ভবিষ্যতেও থাকবে।
প্রথম তিনটি রেস্টুরেন্টের সাফল্যের ধারাবাহিকতায় চতুর্থ রেস্টুরেন্ট খোলার সিদ্ধান্ত নেন নাহিদ হাসান। পরে ‘উলটিমথস’ নামে আরও একটি বাংলাদেশি খাবারের রেস্টুরেন্ট খোলেন। এরপর ‘গসিপ’ নামে শুরু করেন নিজের পঞ্চম রেস্টুরেন্ট। সেখানে ফুচকা, চটপটি, খিচুড়ি, গরুর মাংস, চাসহ মেলে রকমারি আরও সব স্ট্রিট ফুড।
কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশের অ্যাম্বাসেডর নাহিদকে পুরস্কৃত করেছেন। এ ছাড়া তিনবার পেয়েছেন লন্ডনের বেস্ট শেফের পুরস্কার। এর বাইরে ‘রেস্টুরেন্ট হিসেবে’ চারবার লন্ডনের এশিয়ান কারি অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে তার মালিকানাধীন রেস্টুরেন্ট।
শুধু তাই নয়, ২০২৪ সালেও পার্লামেন্ট থেকে নাহিদকে ‘বেস্ট শেফ ইন ইউরোপ’ পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।
সাধারণ মানুষের পাশাপাশি ইউরোপের বিশিষ্টজনদের জন্যও রান্না করেন নাহিদ। গত দুই বছর আগে রান্না করেছেন সুইডেশ অ্যাম্বাসিতে। সেখানে চারশো ডিপ্লোম্যাটের খাবারের আয়োজন ছিল।
আলাপচারিতার ফাঁকে নাহিদ বলেন, আমার রেস্টুরেন্টে বাংলাদেশের অ্যাম্বাসেডর, ডিপ্লোম্যাট সবাই-ই খায়। এ ছাড়া এ দেশের রাজা, রাজার ছেলে, ইন্ডিয়ান সেলিব্রেটিদের মধ্যে অনুপম খেরও এসেছেন, খেয়েছেন তৃপ্তিভরে।
তিনি বলেন, কাজ করতে করতে রান্না শিখলেও আরও কীভাবে ভালো করা যায়, সেই চেষ্টা আমার মধ্যে শুরু থেকেই ছিল। এ জন্য ১ বছর সুইডিশ কুকিংয়ের ওপর ক্লাসও করি।
অনেক সাহস করেই নিজের এগিয়ে যাওয়া উল্লেখ করে সফল এই উদ্যোক্তা বলেন, বাংলাদেশকে আগে সেভাবে কেউ চিনতো না। বাংলাদেশ বলতেই ইউরোপের মানুষ বুঝতো বন্যা আক্রান্ত ও দরিদ্র দেশ হিসেবেই। তারা যে ভালো কিছু, উদ্ভাবনী কিছু করতে পারে তা তারা চিন্তাই করতে পারতো না। তবে এখন সবাই বাংলাদেশকে ভালো চোখে দেখে।
দিনে দিনে ইউরোপে নিজের ব্যবসা বিস্তৃত করছেন নাহিদ। রেস্টুরেন্ট ব্যবসার পাশাপাশি সেখানে তার ‘শান্তি’ নামে ওয়াইনও আছে। আছে একই নামে দুটো বেয়ারও।
রান্না নিয়ে এ পর্যন্ত নাহিদ সুইডেশ টিভিসহ বাংলাদেশি বিভিন্ন টেলিভিশনে ইন্টারভিউ দিয়েছেন। তুলে ধরেছেন নিজের অভিজ্ঞতা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা।
আরটিভি অনলাইনকেও শোনালেন সে গল্প। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আমি একটি বই লিখেছি। যা সুইডিশ, জার্মানি ও হল্যান্ডের ভাষায় তিন দেশে বিক্রি হচ্ছে। আরেকটি বই লেখার কাজ চলছে। এ ছাড়া আমি কুকিং ক্লাসও করাচ্ছি। বাকিটা জীবন চাই এই সেক্টরে ভালো কিছু করতে। যাতে বাংলাদেশের নাম আরও উজ্জ্বল হয়।
দেশে ব্যবসার কোনো পরিকল্পনা আছে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে নাহিদ হাসান বলেন, ৩৫ বছর আমি দেশের বাইরে। তবুও চাই বাংলাদেশে আমার সিগনেচার ডিশ দিয়ে একটা রেস্টুরেন্ট হোক। ভবিষ্যতে এটা করেও ফেলবো ইনশাআল্লাহ্। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন।
আরটিভি/আইএম/এআর
যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ প্রেসক্লাব ইউকে’র যাত্রা শুরু
যুক্তরাজ্যে প্রবাসী গণমাধ্যম কর্মীদের নিয়ে বাংলাদেশ প্রেসক্লাব ইউকে নামে নতুন একটি সংগঠনের যাত্রা শুরু হয়েছে।
মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) পূর্ব লন্ডনের মাইক্রো বিজনেস পার্কের কমিউনিটি হলে কেক কেটে এর শুভ উদ্বোধন করেন রাষ্ট্রপতির সাবেক উপদেষ্টা, বাংলাদেশ ওয়ার্ডওয়াইল্ডের প্রধান সম্পাদক ও ক্লাবের চীফ পেট্রোন মোখলেসুর রহমান চৌধুরী। এ সময় ক্লাবের ওয়েবসাইটও উন্মোচন করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে লন্ডন নিউহ্যাম কাউন্সিলের চেয়ার ও কাউন্সিল রহিমা রহমান, এনফিল্ড কাউন্সিলের মেয়র আমিরুল ইসলাম, টাওয়ার হেমলেটস কাউন্সিলের সাবেক ডেপুটি মেয়র মতিন উজ জামান, টাওয়ার হেমলেটস কাউন্সিলের সাবেক স্পিকার আহবাব হোসেন, কাউন্সিলর মজিবুর রহমান, সাপ্তাহিক জনমত পত্রিকার সহকারী সম্পাদক মুসলেহ উদ্দিন, সেন্টার ফর ডেমোক্রেসি এন্ড গুড গভর্নেন্সের চেয়ারম্যান সোয়ালেহীন করীম চৌধুরী, বেস্ট চারিটির চেয়ারম্যান ও কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব এডভোকেট আব্দুল হালিম হাওলাদার, কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব মোয়াজ্জেম হোসেন সোহরাব, ব্যারিস্টার ও সলিসিটর মাহাবুবুর রহমান, চার্টার্ড একাউটেন্ট মো. কায়কোবাদ, কমনওয়েলথ সলিসিটর লিমিটেডের প্রিন্সিপাল ব্যারিস্টার মুফতি নাফিস, একাউটেন্ট অ্যান্ড ট্যাক্স এডভাইজর এমডি এমএ খান, লন্ডন লায়ন্স স্পোর্টস ক্লাবের প্রেসিডেন্ট এনামুল হক, ক্লাব ফাউন্ডার জুবায়ের আহমেদসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।
এ ছাড়া মিডিয়া ব্যক্তিত্ব আজমীর হাসান কনকের উপস্থাপনায় ক্লাব মেম্বার আব্দুল বাসিত, মাহবুব তোহা, সোহেল সাদ, কামরুল আই রাসেল, আশরাফুর রহমান, জাহাঙ্গীর হোসেন, আবু বকর সিদ্দিক, শাকিল আহমেদ সোহাগ, সোহেল আহমেদ পাপ্পু, শাহ শরীফ উদ্দিন, এমকে জিলানী, মনির উদ্দিন, জাহান চৌধুরী বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠান শেষে উপস্থিত সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে শাকির হোসাইনকে আহ্বায়ক ও জুনায়েত রিয়াজকে সদস্য সচিব করে ৩১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়।
আরটিভি/আরএ