ইভ্যালির রাসেলের পরিচয়
অনলাইন বাজার বা ই-বাণিজ্য মার্কেটপ্লেস ইভ্যালির যাত্রা শুরু ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে। প্রতিষ্ঠানটির যাত্রাকালেই গ্রাহকদের বিভিন্ন অফার দিকে আকৃষ্ট করেন ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ রাসেল। অল্প দিনের মধ্যেই সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে ইভ্যালির নাম। সেই নাম আর বেশিদিন ধরে রাখতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি।
ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি ডটকম লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ রাসেল আর তার স্ত্রী শামীমা নাসরিনকে প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান বানানো হয়। লোভনীয় অফার দিয়ে তারা ক্রেতা টানার কৌশল মানুষের মাঝে উদ্দীপনা সৃষ্টি করার পাশাপাশি অনেক সমালোচনারও সৃষ্টি করেছে।
বৃহস্পতিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিকাল ৪টা মোহাম্মদপুরের নিলয় কমপ্রিহেনসিভ হোল্ডিংয়ের বাসায় (হাউজ ৫/৫এ, স্যার সৈয়দ রোড) অভিযান চালিয়ে রাসেল ও তার স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-২।
জানা গেছে, ইভ্যালির রাসেল ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পাশ করেন। এরপর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিসংখ্যানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর ২০১১ সালে ঢাকা ব্যাংকে চাকরি নেন তিনি। চাকরির পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ করেন রাসেল। ৬ বছর পর ঢাকা ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে অনলাইনে পণ্য বেচাকেনার ব্যবসা শুরু করেন।
ইভ্যালি মোটরসাইকেল, গাড়ি, মোবাইল ফোন, ঘরের সরঞ্জাম এবং আসবাবপত্রের মতো ইত্যাদি উচ্চমূল্যের পণ্যে লোভনীয় ছাড় দেয়। প্রতিষ্ঠার শুরুতে ‘সাইক্লোন’ (ঘূর্ণিঝড়), আর্থকুয়েক’ (ভূমিকম্প) ইত্যাদি নামে তারা ক্রেতাদের ১০০ থেকে ১৫০ শতাংশ ক্যাশব্যাকের মতো অত্যন্ত লোভনীয় অফার দেয়। তাদের ব্যবসার এই কৌশলের ফলে মানুষের মাঝে উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়। তবে সেই সাইক্লোন বেশিদিন স্থায়ী থাকেনি।
২০১৬ সালে প্রথমে অনলাইনে ডায়াপার বিক্রি দিয়ে যাত্রা শুরু করেন রাসেল। ২০১৭ সালে এই ব্যবসা করতে গিয়ে বড় একটি অনলাইন প্লাটফর্মের কথা চিন্তা করেন তিনি। সেই চিন্তা থেকেই প্রতিষ্ঠা করেন দেশীয় ই-কমার্স কোম্পানি ‘ইভ্যালি’। প্রায় ১৭ লাখ নিয়মিত ক্রেতা, ২০ হাজারের বেশি বিক্রেতা নিয়ে বাংলাদেশের ই-কমার্স খাতে স্বল্প সময়ে প্রথম সারিতে উঠে আসে ‘ইভ্যালি’।
এশিয়ার মধ্যে স্বল্প সময়ে দ্রুতবর্ধনশীল ই-কমার্স স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি ও বিজনেস লিডার হিসেবে অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেন মোহাম্মদ রাসেল।
ইভ্যালির ‘সম্পদের চেয়ে ছয় গুণ বেশি দেনা’ বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে তথ্য উঠে আসে। প্রতিবেদনে উঠে আসে ইভ্যালির মোট দায় ৪০৭ কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকের কাছ থেকে অগ্রিম নিয়েছে ২১৪ কোটি টাকা, আর মার্চেন্টদের কাছ থেকে বাকিতে পণ্য নিয়েছে ১৯০ কোটি টাকার। স্বাভাবিক নিয়মে প্রতিষ্ঠানটির কাছে কমপক্ষে ৪০৪ কোটি টাকার চলতি সম্পদ থাকার কথা। কিন্তু সম্পদ আছে মাত্র ৬৫ কোটি টাকার।
এছাড়া গ্রাহক ও মার্চেন্টদের কাছ থেকে গত ১৪ মার্চ পর্যন্ত ইভ্যালির নেওয়া অগ্রিম ৩৩৯ কোটি টাকার কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। এ টাকা আত্মসাৎ বা অবৈধভাবে অন্যত্র সরিয়ে ফেলার আশঙ্কা রয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।।
এফএ
মন্তব্য করুন