কুষ্টিয়ায় করোনা রোগীদের পাশে ছাত্রলীগ (ভিডিও)
সাম্প্রতিক নানা কর্মকাণ্ডে ছাত্রলীগকে নিয়ে যখন প্রশ্ন উঠেছে, ঠিক সে সময়ে কুষ্টিয়ায় একদল ছাত্রলীগকর্মী ঝুঁকি নিয়ে নিঃস্বার্থভাবে করোনা রোগীদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। করোনা রোগীদের পাশে যখন নিকটাত্মীয়দেরও পাওয়া যায়নি তখন সাহসিকতার সঙ্গে হাসপাতাল থেকে বাসা-বাড়ি সবজায়গায় সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করা এসব কর্মীরা। পরিবারের অনীহা থাকা ১২ জনের মরদেহও দাফন করেছে সম্মুখসারির এ যোদ্ধারা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ২৫০ শয্যার কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে সম্মুখসারির যোদ্ধা হিসেবে করোনা রোগীর পাশে দেখা যায় ছাত্রলীগকর্মীদের। অনেকটা চাকরির ডিউটি ভাগ করে নেবার মতো, একেকটি দলে ভাগ হয়ে অসহায় করোনা রোগীদের সহায়তায় কাজ করছেন তারা। করোনা পরীক্ষা করতে আসা অনেকেই জানেন না কি করতে হবে। এমন দিশেহারা অবস্থায় দেবদূতের মতো তাদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন তারা। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে রোগীদের টিকিট কাটা, ডাক্তার দেখানো, প্রয়োজন হলে নমুনা নেওয়ার পাশাপাশি এসব রোগীদের মানসিক শক্তি যোগানোর কাজ করে যাচ্ছেন তারা। চিকিৎসাধীন করোনা আক্রান্ত রোগীদেরও সার্বিক দেখাশোনার দায়িত্ব নিয়েছেন তারা। এমনকি হোম আইসোলেশনেও রোগীর সেবা করছেন।
স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করা ছাত্রলীগকর্মী রিফাত বলেন, ৬৫ জন ছাত্রলীগকর্মী শিফট ভাগ করে আমরা করোনা ওয়ার্ডে রোগীদের সেবায় কাজ করছি। কোনো রোগী যদি হোম আইসোলেশনে থেকেও প্রয়োজনে ডাক দেয় তবে আমরা সেখানেও সেবা দিয়ে থাকি। কেউ মারা গেলে তার পরিবার যদি অনীহা প্রকাশ করে তবে সেই লাশও আমরা দাফন করে দিই।
আরেক কর্মী জানান, সেবা দিতে গিয়ে এ পর্যন্ত আমরা ১০ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছি। এর মধ্যে ৮ জন সুস্থ হয়েছে। বাকি দুইজন এখনও চিকিৎসাধীন। গত দুই ঈদেও আমরা কেউ নিজেদের বাড়ি যাইনি। ঈদের দিনও হাসপাতালে রোগীদের সাথে থেকেছি। তারপরেও আমরা খুশি। কারণ আমরা মানুষের সেবা করছি। এটাই ছাত্রলীগের আদর্শ।
রোগীর অভিভাবক তানিয়া বলেন, আমাদের রোগীর কাছে যেতে ভয় লাগে। যা কিছু প্রয়োজন সবই ছাত্রলীগের কর্মীরা করে দেয়। ওষুধ, খাবার যা লাগে কর্মীদের কাছে দিলেই তা রোগীর কাছে পৌছে যায়। ওরা যা করছে সেটা আমরা রোগীর নিকটজন হয়েও করছি না। তাই ওদেরকে অশেষ ধন্যবাদ।
এভাবেই টানা ৭ মাস ধরে বিনা পারিশ্রমিকে করোনা রোগীদের সেবায় কাজ করে যাচ্ছেন ৬৫ জন ছাত্রলীগকর্মী। ঝুঁকি নিয়ে এসব করতে গিয়ে এদের নেতা আব্দুল হাফিজ (শেখ চ্যালেঞ্জ) নিজেও করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। করোনায় মারা যাওয়া যেসব রোগীর স্বজনরা দাফনে অনীহা প্রকাশ করেছে, এ পর্যন্ত এমন ১২ মরদেহ দাফন করেছেন ছাত্রলীগ কর্মীরা।
ছাত্রলীগ নেতা আব্দুল হাফিজ (শেখ চ্যালেঞ্জ) বলেন, শেখ হাসিনার পরামর্শ ও মাহবুব-উল আলম হানিফের নির্দেশে আমরা এই কাজ করছি। দেশের ক্রান্তিকালে নিজেদের সর্বোচ্চটা দিয়ে মানুষের সেবা করাই রাজনীতি। তার নির্দেশে আমরা ২০০ দিন ধরে এই কাজ করে যাচ্ছি। এর জন্য হানিফ ভাই নিয়মিত খোঁজ-খবর নেন। এসব কর্মীদের থাকা-খাওয়া ও অন্যান্য কাজে সকল অর্থনৈতিক সাপোর্টও দেন তিনি। আমার বাবা একজন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা। সে দেশের জন্য যুদ্ধ করেছে। আমিও দেশের জন্য কিছু করতে পেরে খুশি।
কুষ্টিয়ায় শেষ ১৫ দিন গড়ে ৮ জনের মতো করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে। এ পর্যন্ত জেলায় মোট করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৩৩৪২ জন, সুস্থ হয়েছেন ৩০৯৩ জন। আর এ পর্যন্ত জেলায় করোনায় মারা গেছে ৭৩ জন।
২৫০ শয্যার কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোছাঃ নূরুন-নাহার বেগম বলেন, করোনার শুরু থেকেই ছাত্রলীগ কর্মীরা ঝুঁকি নিয়ে এগিয়ে আসায় হাসপাতালের আতঙ্কিত কর্মীদের উৎসাহ বাড়ে। কাজে গতি আসে। ওদেরকে ধন্যবাদ না দিলেই নয়।
পি
মন্তব্য করুন