মাঠে বন্ধ থাকলেও ফেসবুকে থেমে নেই প্রচার
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে প্রচারের সময় শেষ হয়েছে গতকাল। ভোট চেয়ে আর কোনো কর্মসূচি পালনের সুযোগ নেই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের। তবে ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণের সুযোগ শেষ হয়নি এখনও। আছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, বিশেষ করে ফেসবুক।
শুধু নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী দল কিংবা তাদের প্রার্থীরাই নয়, ফেসবুকে ব্যাপক সরব নির্বাচন বর্জনকারী বিএনপি ও তার সমমনা দলগুলো এবং তাদের নেতারাও। সাধারণ প্রচারমূলক পোস্ট ছাড়াও বিজ্ঞাপনেও বেশ খরচ করছে রাজনৈতিক দলগুলো।
-
আরও পড়ুন : শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে রক্তাক্ত, ২ শিক্ষক আটক
ফেসবুকের মালিক প্রতিষ্ঠান মেটার অ্যাড লাইব্রেরিতে পাওয়া গেছে গত ১৫ মাসে রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন বাবদ বাংলাদেশ থেকে তাদের আয়ের হিসাব। ২০২২ সালের ৭ সেপ্টেম্বর থেকে ২ জানুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশে রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন বাবদ অর্থ আয়ের হিসাব দিচ্ছে মেটা। যেখানে শুধু সর্বশেষ ৭ দিনেই তাদের প্রায় ৪৫ হাজার মার্কিন ডলার আয় হয়েছে বলে জানা গেছে। প্রার্থীরা নিজেরা যেমন ব্যয় করেছেন তেমনি খরচ করা হয়েছে বিভিন্ন দল, সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের ফেসবুক পেজ থেকে।
মেটার গত ১৫ মাসের হিসাবে রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন বাবদ ব্যয়ের ক্ষেত্রে সবার ওপরের নামটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের। এরপর রয়েছেন তথ্য ও যোগযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এবং আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনাবিষয়ক উপকমিটির সদস্য এম এ রাজ্জাক খান।
গত এক মাস ধরে ফেসবুকে রাজনৈতিক বিজ্ঞাপনের পেছনে প্রথম স্থান ধরে রেখেছেন জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান সালমা ইসলাম। তালিকার দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান যথাক্রমে সালমান এফ রহমান ও জুনাইদ আহমেদ পলকের। এই সময়ে ফেসবুকে রাজনৈতিক বিজ্ঞাপনের পেছনে বাংলাদেশ থেকে মোট ব্যয় হয়েছে ১ লাখ ২৭ হাজার ডলার বা ১ কোটি ৪১ লাখ টাকা।
-
আরও পড়ুন : অগ্নিদগ্ধ ৮ জনের অবস্থাই আশঙ্কাজনক
মেটার সর্বশেষ ৭ দিনের হিসেবে রাজনৈতিক বিজ্ঞাপনে প্রায় পাঁচ হাজার ডলার খরচ করে সালমা ইসলামের অবস্থান একই থাকলেও দুই নাম্বারে উঠে এসেছেন এম এ রাজ্জাক খান। ২৭ ডিসেম্বর থেকে ২ জানুয়ারি পর্যন্ত তিনি ফেসবুকে খরচ করেছেন প্রায় দুই হাজার ডলার। এবারের নির্বাচনে চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী তিনি। আর এক হাজার ৭০০ ডলার ব্যয় করে এই এক সপ্তাহের হিসাবে তালিকার তৃতীয় অবস্থানে আছেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জামালপুর-২ আসনে দলের প্রার্থী মোস্তফা আল মাহমুদ।
এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের ফেসবুক পেজ থেকে সারা বছরই বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। তিনি ঢাকা-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী। সাত দিনে তার নামের পেজ থেকে ব্যয় করা হয়েছে ৯৪১ ডলার।
মেটার হিসাব বলছে, ডিজিটাল রাজনৈতিক প্রচারণার ক্ষেত্রে, ২০২২ সাল থেকে এক হাজার ৬৫৩টি বিজ্ঞাপনভিত্তিক পোস্টে বিনিয়োগ করেছে আওয়ামী লীগ। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ২০২৩ সালে এই প্রবণতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিদায়ী বছরে এক হাজার ৪৫০টি বিজ্ঞাপনভিত্তিক পোস্ট অন্তর্ভুক্ত করেছে তারা। শুধুমাত্র ডিসেম্বর মাসেই ৮৪টি পোস্ট করেছে ক্ষমতাসীন দলটি, গড় হিসেবে প্রতিদিন করা হয়েছে পাঁচটি করে পোস্ট।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবস্থাপনার পোল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান নেপোলিয়নক্যাটের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ফেসুবক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৬ কোটির কিছু বেশি। আর মেটার হিসাবে, বাংলাদেশে রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন বেশি দেওয়া হয়েছে ঢাকা বিভাগকে কেন্দ্র করে।
-
আরও পড়ুন : সড়কে গাড়ি কম, ভোগান্তিতে যাত্রীরা
ফেসবুকে রাজনৈতিক বিজ্ঞাপনদাতা প্রার্থীদের মধ্যে আরও রয়েছেন ঢাকা-৯ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাবের হোসেন চৌধুরী, জামালপুর-৫ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. আবুল কালাম আজাদ, নোয়াখালী-২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোরশেদ আলম, ঢাকা-১৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী খসরু চৌধুরী, গাইবান্ধা-৫ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাহমুদ হোসেন, ঢাকা-৪ আসনে কল্যাণ পার্টির প্রার্থী ইয়াসিন পাভেল, নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী গোলাম দস্তগীর গাজী প্রমুখ।
অবশ্য তথ্যব্যবস্থায় প্রযুক্তির প্রভাব নিয়ে গবেষণাকারী প্রতিষ্ঠান ডিজিটালি রাইট লিমিটেড (ডিআরএল) গত মাসে এক গবেষণায় জানায়, অনেক ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন শনাক্তে ভুল করে মেটা। অর্থাৎ মেটা যে তথ্য দিচ্ছে, তার বাইরেও অনেকভাবেই রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন দেওয়া হচ্ছে। তাই প্রকৃত ব্যয়ের অঙ্ক আরও বেশি হতে পারে বলেই অনুমান প্রতিষ্ঠানটির।
মন্তব্য করুন