মামলা দিয়ে জাতীয় পার্টিকে নির্যাতন করেছে আ.লীগ ও বিএনপি: জি এম কাদের
মামলা দিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি জাতীয় পার্টিকে নির্যাতন করেছে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের।
রোববার (১ সেপ্টেম্বর) জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের বনানীস্থ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
জিএম কাদের বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছে তাদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন করতে হবে। যারা আহত হয়েছে তাদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে এবং ভবিষ্যতে তারা যেন হারিয়ে না যায়, সে জন্য রাষ্ট্রকে ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রশাসনকে দলীয়করণ মুক্ত করতে হবে। প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার করতে হবে। ট্রুথ কমিশন গঠন করে স্বীকৃত দুর্নীতিবাজদের অর্থ সরকারী কোষাগারে ফেরত দেয়ার সুযোগ দেয়া যেতে পারে।
তিনি বলেন, আমরা চাই, সরকার রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয় সংস্কার করে নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা করবে। সাধারণ মানুষের ধারণা, নির্বাচিত সরকারের চেয়ে অনির্বাচিত সরকার বেশি সুশাসন দিতে পারে। আমরা মনে করি, দ্রুত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে হবে। পুলিশের ভয়ভীতি দূর করে তাদের মাধ্যমে মানুষের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখতে হবে। সাধারণ মানুষের যদি পেটের ভাত ও জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয় তাহলে, তারা নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সময় দিতে রাজি আছে। সরকার যেভাবে চাইবে আমরা সংস্কারের জন্য সহায়তা দিতে প্রস্তুত আছে।
এক প্রশ্নের জবাবে জি এম কাদের বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন জুলাই মাসের ১ তারিখে শুরু হয়েছে। ৩ তারিখে সংসদ অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে আমি জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান হিসেবে কোটার বিরোধিতা করে বক্তৃতা করেছি। আমরা সবসময় বলেছি, কোটা পদ্ধতি হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা যুদ্ধের চেতনা পরিপন্থি। আমরা বলেছি, বৈষম্যবিরোধী যেকোনো আন্দোলনে দেশের মানুষ সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করতে পারে। কোটা পদ্ধতি ছিল সংবিধান পরিপন্থি। কারণ, সংবিধানে অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্য কোটা বরাদ্দের কথা আছে কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের কথা নেই।
তিনি বলেন, গত ৬ জুলাই গাজীপুর জাতীয় পার্টির সম্মেলনে আমি ছাত্রদের উদ্দেশে বলেছি, তোমরা শহীদ মিনারে যাও, শহীদ মিনার হচ্ছে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের উজ্জ্বল প্রতীক। এ ছাড়া প্রতিদিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমর্থনে বক্তৃতা ও বিবৃতি দিয়েছি। ছাত্র ও ছাত্রীদের ওপর পুলিশ ও সন্ত্রাসীদের হামলার নিন্দা জানিয়েছি প্রতিদিন। আন্দোলন চলাকালে ছাত্র হত্যার প্রতিবাদে এবং উপযুক্ত বিচার চেয়ে বক্তৃতা ও বিবৃতি দিয়েছি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের যখন আটকে রাখা হয়েছিল আমরা তাদের মুক্তির জন্য কথা বলেছি। আওয়ামী লীগ সব সেক্টরেই বৈষম্য সৃষ্টি করেছিল। যেহেতু বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ছাত্ররা আমাদের ব্যানারে সমর্থন চায়নি তাই, আমাদের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেওয়া ছিল তারা যেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সামিল হয়। রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও রংপুর সহ সারাদেশে আমাদের নেতাকর্মীরা সক্রিয়ভাবে আন্দোলনে অংশ নিয়েছে। এই আন্দোলনে রংপুরে আমাদের নেতাকর্মীরা অনেকেই কারাবরণ করেছে এবং অনেকেই আহত হয়েছে। আমরা সংসদে সত্যিকারের বিরোধীদলের ভূমিকা পালন করেছি।
তিনি আরও বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনে আমরা অংশ নেয়নি। ৩০০ প্রার্থীর মধ্যে ২৭০ জন প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছে। আমি সরকারের মন্ত্রী থেকেও নির্বাচন বর্জন করেছিলাম। বিএনপি’র দায়ের করা একটি মামলা ব্যবহার করে আওয়ামী লীগ হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে নির্বাচনে যেতে বাধ্য করেছে। আমার ভাবিকে (রওশন এরশাদ) দিয়ে সরকার জাতীয় পার্টির মধ্যে একটি বিভাজন সৃষ্টি করেছিল। জাতীয় পার্টির সকল সিদ্ধান্ত অমান্য করে তিনি জাতীয় পার্টিকে নির্বাচনে নিয়েছে।
জিএম কাদের বলেন, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নির্দেশ অনুযায়ী আমি সংবাদ সম্মেলন করে ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন করেছিলাম। মামলা দিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি জাতীয় পার্টিকে নির্যাতন করেছে। মঞ্জুর হত্যা মামলা দিয়ে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে ফাঁসির ভয় দেখানো হয়েছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি সহ সব দলই অংশ নিয়েছিল। আমরাও নির্বাচনে ছিলাম। ২০২৪ সালের নির্বাচন থেকে আমরা বার বার চলে আসতে চেষ্টা করেছি। আমাদের দেশের মিডিয়া এবং সচেতন মানুষ জানে জাতীয় পার্টির গলায় ফাঁস লাগিয়ে নির্বাচনে নিয়েছে আওয়ামী লীগ। আমাদের দলের রাজনীতি করতে দেয়নি স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ।
তিনি বলেন, ২০১৪ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত আমরা আওয়ামী লীগের হাতে নির্যাতিত হয়েছি। ২০২৪ সালের নির্বাচনে না যাওয়া ছাড়া আমাদের সামনে আর কোন অপশন ছিল না। আমাদের দল হয়তো কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কিন্তু দলটি বেঁচে গেছে। দল না থাকলে আমাদের রাজনীতি থাকবে না। তাই, দল বাঁচানো আমাদের কাছে জরুরি ছিল। নির্বাচনের দিন ও নির্বাচনের পরেও আমরা বলেছি, নির্বাচন সঠিক হয়নি। কোন কোন আসনে সরকার কোন হস্তক্ষেপ করেনি। যেমন আমার নির্বাচনী এলাকায়। কোথাও কোথাও সরকারের নির্দেশনা ছিল যে যেভাবে পারো জিতে আসো। সেখানে কালো টাকা বা পেশি শক্তি কোন বিষয় ছিল না। তৃতীয় নির্দেশনা ছিল নির্বাচনে যে যাই করুক তাদের তালিকা অনুযায়ী বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচনের পর বক্তৃতা ও প্রবন্ধে আমরা প্রমাণ করেছি, ওই সময়ে কোনভাবেই এতো ভোট কাউন্ট হওয়া অসম্ভব। সংসদে এবং সংসদের বাইরে আমরা এসব কথা বলেছি। আমাদের দল ও সংসদীয় দলকে সবসময় আওয়ামী লীগ ডিস্টার্ব করেছে। ২০২৪ সালের নির্বাচন বর্জনের জন্য সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছিল। কিন্তু সরকারের বিভিন্ন সংস্থা আমাদের সেই সংবাদ সম্মেলনে অংশ নিতে দেয়নি। মূল জাতীয় পার্টি সবসময় জনগণের সাথে ছিল, জনগণের সাথে থাকবে। আমরা নির্বাচনে না গেলেও নির্বাচন হতো। আওয়ামী লীগের পতন হয়েছে আওয়ামী লীগের দুর্নীতি ও দুঃশাসনের জন্য।
মন্তব্য করুন