রেললাইনটা এমনভাবে তৈরি করতে হবে যাতে নির্বাচনী ট্রেন সঠিক গন্তব্যে যায়: অধ্যাপক ওয়াহিদুজ্জামান
ঢাকা নতুন রূপে আবির্ভূত হয়েছে, যেন একেবারে নতুন রঙের প্রলেপ লেগেছে। তবে এটি কোনো সাধারণ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ নয়। আগস্টের ছাত্র আন্দোলনে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার খুশিতে বাংলাদেশের রাজধানীকে সাজানো হয়েছে জমকালো রাজনৈতিক ম্যুরাল দিয়ে। কংক্রিটের দেয়ালে আঁকা হয়েছে পতিত স্বৈরাচারের প্রতিকৃতি, লেখা হয়েছে সমাজ বদলের নানা শ্লোগান। । ‘জেন-জেড, প্রকৃত নায়ক’, ‘সমাজ থেকে শোষকদের দূর করো’, ‘বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ চাই।’
৮৪ বছর বয়সী নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনুসের সামনে এই শ্লোগানগুলো এখন বড় চ্যালেঞ্জ।
‘তরুণ প্রজন্মের অনেক ধারণা, উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং আশা এইসব দেওয়ালচিত্রে তুলে ধরা হয়েছে’, মুখে প্রশস্ত হাসি টেনে ড. ইউনুস টাইম ম্যাগাজিনকে কথাগুলো বলছিলেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের ‘প্রধান উপদেষ্টা’ হিসাবে এই উচ্চাকাঙ্ক্ষাগুলো বাস্তবে রূপান্তর করার দায়িত্ব এখন ড. ইউনুসের উপর।কার্যত তিনি বাংলাদেশের নতুন নেতা। তার কাজ হলো; দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির ১৭০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষের দেশকে পুনর্গঠন করা এবং ছাত্র নেতা, সামরিক জেনারেল, ইসলামপন্থী ও বিরোধী রাজনীতিকদের একত্রিত করে একটি নতুন নির্বাচনের পথে পরিচালিত করা।
এরই মধ্যে ছয় দফা সংস্কার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, যা নির্বাচন ব্যবস্থা, পুলিশ প্রশাসন, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন, জনপ্রশাসন এবং জাতীয় সংবিধান নিয়ে কাজ করছে। ড. ইউনুস বলেন, ‘পূর্ববর্তী সরকার চুড়ান্ত নিপীড়ন চালিয়েছিলো, সবকিছুর অস্বীকার করেছিলো, মানুষ হত্যা, গুম করা থেকে শুরু করে প্রতিটি প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করার পরিবেশ তৈরি করেছিল। এটি ছিল একটি ফ্যাসিস্ট শাসন।’
জুলাই এবং আগস্ট মাসে বিক্ষোভকারীদের সাথে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষে ১,৫০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত এবং আরও অনেক আহত হয়। (ড. ইউনুস দাবি করেছেন, হাসিনার ১৫ বছরের শাসনকালে অতিরিক্ত ৩,৫০০ জন মানুষ গুম হয়েছেন)।
এই বিদ্রোহ শুরু হয়েছিল সরকারের অনুগতদের জন্য চাকরির কোটার বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের মাধ্যমে। কিন্তু কঠোর দমন নীতির ফলে অসমতা এবং রাজনৈতিক নিপীড়নের বিরুদ্ধে ব্যাপক ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে, যা আপামর জনগনকে ঐক্যবদ্ধভাবে রাস্তায় নামতে বাধ্য করে। যখন বিক্ষোভকারীরা ঢাকায় তার সরকারি বাসভবন ঘিরে ফেলে, তখন হাসিনা সামরিক হেলিকপ্টারে চেপে ভারতে পালিয়ে যান। সেখান থেকে তিনি এবং তার ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টারা এখনো তার অপসারণের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।
ড. ইউনুস জানান যে, তিনি হাসিনার প্রত্যর্পণ চাইবেন, কারণ সহিংসতার জন্য তার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট ইস্যু করা হয়েছে। তবে কেউই মনে করেন না যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এটি মেনে নেবেন। ‘তিনি শুধু ভারতে অবস্থান করছে তা-ই নয়, সবচেয়ে খারাপ হলো, তিনি কথা বলছেন, যা আমাদের জন্য অনেক সমস্যা তৈরি করছে,’ বলেন ইউনুস।
‘এই কণ্ঠ শুনে মানুষ খুবই বিরক্ত হয়। এটি এমন কিছু যা আমাদের সমাধান করতে হবে।’
সত্তরের দশকে দারিদ্র্য দূরীকরণের জন্য মাইক্রোক্রেডিট ব্যবস্থা প্রবর্তনের মাধ্যমে ইউনুস বিশ্বব্যাপী পরিচিতি লাভ করেন। এটি শুরু হয়েছিল তার নিজ শহর চট্টগ্রামের একজন নারীকে পাঁচ ডলার ঋণ প্রদানের মাধ্যমে, যিনি বাঁশের চেয়ার বুনতেন। সেই উদ্যোগ এখন ১০০টিরও বেশি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। চার দশকে ড. ইউনুসের গ্রামীণ ব্যাংক ৩৭ বিলিয়ন ডলারের বেশি জামানতবিহীন ঋণ বিতরণ করেছে, যা বিশ্বের দরিদ্রতম ১০ মিলিয়ন মানুষের কাছে পৌঁছেছে।
বিশ্বব্যাপী ঋণগুলোর ৯৪%-এর বেশি গেছে নারীদের কাছে, যারা পুরুষদের তুলনায় দারিদ্রতা বেশি ভোগ করে এবং যেখানে তাদের উপার্জন পরিবারের কল্যাণে ব্যবহারের প্রবণতা বেশি। এই জীবনের কাজ তাকে ‘গরিবদের ব্যাংকার’ খেতাব এনে দিয়েছে এবং ২০০৬ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার, ২০০৯ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্টের স্বাধীনতা পদক এবং এক বছর পরে কংগ্রেশনাল গোল্ড মেডেল জিতিয়েছে।
কিন্তু ড. ইউনুসের এই বিশ্বব্যাপী খ্যাতি হাসিনার জন্য অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। হাসিনা তাকে ‘রক্তচোষা’ বলে কটাক্ষ করেছিলেন এবং তার বিরুদ্ধে ২০০টিরও বেশি মামলা দায়ের করেছিলেন, যার মধ্যে জালিয়াতি, অর্থ পাচার এবং তহবিল তছরূপের অভিযোগ অন্তর্ভুক্ত ছিল।
টাইম ম্যাগাজিনের সাথে জুন মাসে শেষবার কথা বলার সময় ড. ইউনুস একটি ভুয়া মামলায় ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিলো। তবে হাসিনার অপসারণ তার আইনগত সমস্যা দূর করেছে এবং তাকে তার নির্যাতকের উত্তরসূরি হিসাবে দায়িত্ব পালনের সুযোগ এনে দিয়েছে।
ড. ইউনুস বলেন, ‘প্রথমে আমি এই দায়িত্ব এড়ানোর চেষ্টা করেছিলাম। আমি বলেছিলাম, ‘অন্য কাউকে খুঁজে নাও।’ তবে পরে বললাম, ‘তোমরা নিজেদের জীবন দিয়েছেন, তোমাদের বন্ধুরা নিজেদের জীবন দিয়েছে, তাই আমি যা পারি তা করব।’
আজ, এই ৮৪ বছরের বৃদ্ধ ব্যক্তি আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানে ভাষণ দেওয়ার পরিবর্তে ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মিটিং নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। তবু তার মুখে থাকে প্রশান্তির হাসি।
তবে হাসিনার আকস্মিক পলায়নের ফলে রাজনৈতিক এবং নিরাপত্তা শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে, কারণ আওয়ামী লীগ অনুগতদের সরকারের সবস্তর থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। দলটির প্রভাবশালী সদস্যদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কার্যত প্রতিটি সরকারি প্রতিষ্ঠানই রাজনীতিকরণ করা হয়েছিল, যা জনমনে সেনাবাহিনী, আদালত, সিভিল সার্ভিস এবং বিশেষত নিরাপত্তা বাহিনীর প্রতি গভীর অবিশ্বাস সৃষ্টি করেছিল।
হাজার হাজার পুলিশ সদস্য পালিয়ে গেছেন, যাতে তারা প্রতিশোধমূলক হামলার লক্ষ্যবস্তু না হন (কমপক্ষে ৪৪ জন কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন)। দেশের মৌলিক কার্যক্রমগুলো থমকে গেছে। পরিবর্তে, বিরোধী দল এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের বেসরকারি নাগরিকদের তাৎক্ষণিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, যা পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এনেছে, কারণ আগের সরকারবিরোধী আন্দোলনকারীরাই রাতারাতি নতুন শাসক শ্রেণীতে পরিণত হয়েছে।
এই নতুন কর্মকর্তারা প্রায়ই এমন একটি প্রশাসনিক জটিলতার সম্মুখীন হচ্ছেন যেখানে একটি ইমেইল পাঠানোর জন্য প্রায় ছয়টি অনুমোদনের প্রয়োজন হয়। কয়েক দিন ধরে বাংলাদেশের নতুন শাসকরা সবচেয়ে মৌলিক সুবিধাগুলোও পায়নি। ড. ইউনুসের জাতির উদ্দেশ্যে প্রথম ভাষণ এক সহকারীর আইফোনে লেখা হয়েছিল।
অন্তর্বর্তী সরকারের অস্পষ্ট বৈধতার কারণে মার্কিন সমর্থন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সেপ্টেম্বরে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সাথে ইউনুসের বৈঠক দেখিয়েছে যে আইএমএফ এবং বিশ্বব্যাংকের মতো প্রতিষ্ঠানের সম্পৃক্ততা বজায় রাখতে মার্কিন সমর্থন প্রয়োজন। তবে জানুয়ারিতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসে প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনা গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
হাসিনার অপসারণের পর হিন্দু এবং অন্যান্য সংখ্যালঘুদের উপর বিক্ষিপ্ত কিছু হামলা হয়েছিল, আওয়ামী লীগ এগুলোকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে তুলে ধরে দাবি করেছিল যে উগ্রপন্থী ইসলামপন্থীরা ক্ষমতা দখল করেছে।
গত ৩১ অক্টোবর নির্বাচনের আগে ডোনাল্ড ট্রাম্প এক্স-এ পোস্ট করেছিলেন, ‘বাংলাদেশে হিন্দু, খ্রিস্টান এবং অন্যান্য সংখ্যালঘুদের উপর হামলা এবং লুটপাটের ঘটনাগুলো বর্বর সহিংসতা এবং একেবারে অরাজক অবস্থার পরিচায়ক।’
আওয়ামী লীগ এবং প্রভাবশালী ভারতীয়-আমেরিকানরা ট্রাম্পের উপর চাপ সৃষ্টি করছে যাতে বাংলাদেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়, যেহেতু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের শীর্ষ রপ্তানি গন্তব্য।
ড. ইউনুস আত্মবিশ্বাসী যে তিনি নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টের সাথে কাজ করতে পারবেন, যদিও তাদের বিশ্বদর্শন ভিন্ন। তিনি বলেন, ‘ট্রাম্প একজন ব্যবসায়ী। আমরাও ব্যবসায় লেনদেনে বিশ্বাসী। আমরা কোনো সংকট থেকে উদ্ধার পেতে নয়, একজন ব্যবসায়িক অংশীদার হিসেবে তাকে পাশে চাই’
বিশ্বব্যাপী কোম্পানিগুলোকে আশ্বস্ত করা যে বাংলাদেশ ব্যবসার জন্য উন্মুক্ত রয়েছে, এটি একটি শীর্ষ অগ্রাধিকার। তবে ধীর সংস্কার প্রক্রিয়া সন্দেহ উত্থাপন করছে। একটি নতুন সংবিধান তৈরি হচ্ছে, তবে বাংলাদেশ প্রেসিডেন্সিয়াল বা সংসদীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে কিনা, একক পরিষদ বা দ্বি-কক্ষীয় হবে কিনা, তা এখনও সিদ্ধান্ত নেওয়া বাকি।
ছোট দলগুলো আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের জন্য চাপ দিচ্ছে, তবে ধর্মনিরপেক্ষরা আশঙ্কা করছেন যে এটি ধর্মীয় চরমপন্থীদের প্রভাব বাড়াতে পারে। এর পাশাপাশি, নতুন সংবিধানকে বৈধ করার জন্য এটি গণভোটে অনুমোদিত হওয়া প্রয়োজন কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এবং উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, বাংলাদেশের বিদ্যমান কোনো রাজনীতিবিদ এই প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত হননি।
বিএনপির তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক এ কে এম ওয়াহিদুজ্জামান চান, নির্বাচনের পরিকল্পনা এবং রোডম্যাপ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ঘোষণা করা হোক। তবে ইউনূস সরকার নির্বাচন নিয়ে তাড়াহুড়ো করতে চান না। এ বিষয়ে তিনি বলেন, আমার কোনো তারিখ দিইনি। রেললাইনটা এমনভাবে তৈরি করতে হবে যাতে নির্বাচনী ট্রেন সঠিক গন্তব্যে যায়।
জাতীয় নির্বাচন সম্ভবত আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ ছাড়া সম্ভব নয়, যারা একসময় অন্তত উল্লেখযোগ্য জনসমর্থন পেয়েছিল। আওয়ামী লীগের সদস্যরা মনে করছেন, তাদের সম্মিলিত শাস্তির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। গত জানুয়ারি পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করা সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানান, তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের জবাব দিতে আদালতে আত্মসমর্পণ করতে সাহস পাচ্ছেন না। জাহিদ মালেকের দাবি, তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত এবং আত্মসমর্পন করলে তিনি জামিন পাবেন না। আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় টাইমকে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, ‘আমার পাসপোর্ট বাতিল করা হয়েছে, আমার পরিবারের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা হয়েছে। আমি একজন অসুস্থ মানুষ। আমি চার মাস ধরে আমার পরিবারকে দেখিনি।’
এ অবস্থা শুধু দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। আওয়ামী লীগের সঙ্গে জড়িত পুরো দেশ দাপিয়ে বেড়ানো নেতারাও এমনটাই মনে করছেন।
এদিকে মানবাধিকার সংস্থাগুলো সাংবাদিকদের নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, যারা হাসিনার প্রতি সহানুভূতিশীল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেন। তাদের মধ্যে অন্তত ২৫ জনকে সহিংসতার সাথে সম্পর্কিত মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
‘মিডিয়া পেশাজীবীরা প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপের মূল শিকার হচ্ছেন’, রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্সের অ্যাডভোকেসি এবং সহায়তার পরিচালক অঁতোয়ান বার্নার্ড এক বিবৃতিতে বলেছেন। ‘অন্তর্বর্তী সরকারকে এই নিষ্ঠুর প্রক্রিয়া বন্ধ করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করতে হবে।’
ড. ইউনুস জোর দিয়ে বলেছেন যে, সবাই একটি ন্যায্য বিচারের অধিকার পাবেন এবং আওয়ামী লীগকে নির্বাচন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে স্বাগত জানানো হবে, তবে তাদের আগে হত্যাকাণ্ড এবং নির্যাতনের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহি করতে হবে। ‘তারা অন্য সবার মতোই অংশগ্রহণের জন্য মুক্ত, তিনি বলেন। ‘আমরা তাদের রাজনৈতিক ময়দানে মোকাবিলা করব।’
ড. ইউনুস আওয়ামী লীগ আমলে দেশের বাইরে পাচার করা শত শত কোটি টাকা পুনরুদ্ধার করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তিনি জানান, ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেয়েন এই অর্থ পুনরুদ্ধারে সহযোগিতা করার প্রস্তাব দিয়েছেন। ‘আমরা যেই দেশের সাথে কথা বলছি, তারাই সাহায্যের প্রস্তাব দিচ্ছে, এই অর্থ পুনরুদ্ধার করতে,’ ইউনুস বলেন। ‘তারা আগেও অন্যান্য পরিস্থিতিতে এটি করেছে।’
তবে মানবাধিকার কর্মীরা বিশ্বাস করেন যে, অন্তর্বর্তী প্রশাসনে ইসলামপন্থী উপাদানগুলোর অন্তর্ভুক্তি সংখ্যালঘুদের জন্য জায়গা কমিয়ে দিচ্ছে। হাসিনা সরকার তার সমস্ত দোষত্রুটি সত্ত্বেও চরমপন্থাকে নিয়ন্ত্রণে রেখেছিল এবং এমনকি একটি ট্রান্সজেন্ডার সুরক্ষা আইন প্রবর্তনের প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার প্রথম যে কাজগুলোর একটি করেছে তা হলো বাংলাদেশের প্রধান ইসলামপন্থী দল, জামাত-ই-ইসলামীর উপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার।
ঢাকাভিত্তিক নার্স এবং ট্রান্সজেন্ডার অধিকার কর্মী, হো চি মিন ইসলাম বলেন যে ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে থাকা ধর্মীয় চরমপন্থীদের কারণে তাদের অনেকেই এখন নিজেদের নিরাপত্তার বিষয়ে শঙ্কিত। ‘অন্তর্বর্তী সরকারের ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিরা আমাদের সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন,’ তিনি টাইম-কে বলেন। ‘আমরা কেবল নিরাপত্তা এবং সুরক্ষা চাই।’
বিদ্রোহে নারীরা সামনের সারিতে ছিল, তবে অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বে তাদের উপস্থিতি খুবই কম। সংস্কারের জন্য গঠিত ছয়টি কমিশনের নেতৃত্বে সবাই পুরুষ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের স্নাতক এবং বিক্ষোভের একজন প্রধান নেত্রী সামান্থা শারমিন বলেন, ‘আমি হতাশ, আমি ক্ষুব্ধ। আমি জানি না কী হয়েছে। নারীরা এই আন্দোলনকে বিপ্লবে পরিণত করার মূল চালিকাশক্তি ছিল। আমরা চাই রাজনীতিতে নারীরা এবং তরুণরা কেন্দ্রীয় ভূমিকা নিক।’
নির্বাচনের জন্য তীব্র চাপে পড়ার আগেই অর্থপূর্ণ সংস্কার বাস্তবায়ন করার একটি প্রক্রিয়া চলছে। সেপ্টেম্বরে, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং সাম্প্রতিক বিধ্বংসী বন্যার কারণে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ৬.৬% থেকে ৫.১%-এ নামিয়ে এনেছে।
বিএনপিকে আপাতত ক্ষমতা যাওয়ার অপেক্ষায় থাকা দল হিসেবে দেখা হচ্ছে, দুর্নীতি এবং প্রতিশোধমূলক রাজনীতির জন্য আওয়ামী লীগের মতোই তাদের দলেরও কিছু দুর্নাম রয়েছে। (ওয়াহিদুজ্জামান জোর দিয়ে বলেন যে, তাদের দলের দুর্নীতি শুধুমাত্র খুবই ক্ষুদ্র সংখ্যায় সীমাবদ্ধ এবং অপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি করা হয়।) যদি অস্থিরতা এবং অচলাবস্থা চলতে থাকে, তবে ক্লান্ত জনগণ হাসিনার শাসনের দিকে আরও ইতিবাচক দৃষ্টিতে তাকাতে পারে।
এ কে এম ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা না করেই অন্তর্বর্তী সরকার ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। এটি একটি খারাপ এবং স্বৈরাচারী সরকারের লক্ষণ। এজন্য তিনি দ্রুত নির্বাচনের জন্য একটি সময়সীমা এবং রোডম্যাপ প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন।
গত দশকে বাংলাদেশ এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি ছিল, যেখানে ২০০৬ সালে জিডিপি ছিল ৭১ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২২ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৬০ বিলিয়ন ডলারে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, রাষ্ট্র সংস্কারের কার্যক্রমের সঙ্গে মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করাই একমাত্র স্বৈরাচারের ফিরে আসাকে রুখে দিতে পারে। সংস্কারই পুরো বিপ্লবের মূল। এ কারণেই আমরা বিপ্লব পরবর্তী একে আমরা বাংলাদেশ ২.০ বলছি।
(টাইম থেকে বাংলায় অনুবাদ করা)
আরটিভি/ ডিসিএনই
মন্তব্য করুন