দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন জিয়াউর রহমান: ফখরুল
সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৮৯তম জন্মবার্ষিকী রোববার (১৯ জানুয়ারি)। এ উপলক্ষে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাণী দিয়েছেন।
বাণীতে তিনি বলেন, মহান স্বাধীনতার ঘোষক, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক, মুক্তিযুদ্ধে জেড ফোর্সের অধিনায়ক, বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী দর্শনের প্রবক্তা ক্ষণজন্মা রাষ্ট্রনায়ক শহীদ জিয়াউর রহমান বীর উত্তমের ৮৯তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে তার প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধা। তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করি।
তার জীবদ্দশায় দেশের সব ক্রান্তিকাল উত্তরণে শহীদ জিয়া ছিলেন জাতির দিশারী। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তান সামরিক বাহিনী বাংলাদেশের জনগণের ওপর আক্রমণ করার পর তিনি পাকিস্তানি অধিনায়ককে বন্দি করে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। ২৬ মার্চ তিনি চট্টগ্রাম কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।
স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ শুরু করেন অসীম বীরত্বে। সেদিন থেকেই দেশবাসী তার অসাধারণ নেতৃতেৃর পরিচয় পায়। স্বাধীনতাত্তোর দুঃসহ স্বৈরাচারী দুঃশাসনে চরম হতাশায় দেশ যখন নিপতিত, জাতি হিসেবে আমাদের এগিয়ে যাওয়া যখন বাধাগ্রস্ত হয় ঠিক সেই সংকটের একপর্যায়ে জিয়াউর রহমান জনগণের নেতৃত্বভার গ্রহণ করেন।
মিথ্যা প্রতিশ্রুতির অপরাজনীতি দ্বারা জনগণকে প্রতারিত করে স্বাধীনতাত্তোর ক্ষমতাসীন মহল যখন মানুষের বাক-ব্যক্তি ও মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে হরণ করে গণতন্ত্রকে মাটিচাপা দিয়েছিল, দেশকে ঠেলে দিয়েছিল দুর্ভিক্ষের এক সীমাহীন নৈরাজ্যের মধ্যে, বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ির আন্তর্জাতিক খেতাবপ্রাপ্ত হতে হয়, জাতির এ রকম এক মহাসংকটকালে ৭ নভেম্বর সৈনিক জনতার ঐতিহাসিক বিপ্লবে শহীদ জিয়া রাষ্ট্রক্ষমতার হাল ধরেন। একজন সৈনিক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করলেও তার জীবনের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে দেশের সকল সংকটে তিনি ত্রাণকর্তা হিসেবে বারবার অবতীর্ণ হয়েছেন। ক্ষমতায় এসেই তিনি বিচার বিভাগ ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিয়ে বহুদলীয় গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন। তিনি শুরু করেছিলেন উৎপাদনের রাজনীতি, দেশকে স্বনির্ভর করে গড়ে তুলতে তিনি কৃষি বিপ্লব, গণশিক্ষা বিপ্লব ও শিল্প উৎপাদনে বিপ্লব, সেচ ব্যবস্থা আধুনিকীকরণ ও সম্প্রসারণের লক্ষ্যে স্বেচ্ছাশ্রম ও সরকারি সহায়তার সমন্বয় ঘটিয়ে ১৪শ খাল খনন ও পুনর্খনন করেন। গণশিক্ষা কার্যক্রম প্রবর্তন করে অতি অল্প সময়ে ৪০ লক্ষ মানুষকে অক্ষর দান করেন।
এ ছাড়া গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী গঠন করে গ্রামাঞ্চলে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার ব্যবস্থা করেন। তিনি পল্লী চিকিৎসক ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন, ফলে তার আমলে ২৭ হাজার ৫০০ পল্লী চিকিৎসক নিয়োগপ্রাপ্ত হয় এবং তাতে গ্রামীণ জনগণের চিকিৎসার সুযোগ বৃদ্ধি হয়। জাতীয়তাবাদী নেতা হিসেবে শহীদ জিয়া ছিলেন সকল প্রকার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে এক আপসহীন, নির্ভিক যোদ্ধা।
তাই সকল আগ্রাসী শক্তির চাপকে অগ্রাহ্য করে স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করেন। শহীদ জিয়ার পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে অবিস্মরণীয় অবদান হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়া আঞ্চলিক জোট ‘সার্ক’ গঠন করা। দেশের স্বাধীনতা সুরক্ষা ও সার্বভৌমত্ব শক্তিশালী করে জাতির মর্যাদাকেও বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত করেছেন তার শাসনামলে। তাই দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রকারীরা নিজেদের নীলনক্শা বাস্তবায়নের কাঁটা ভেবে জিয়াকে নির্মমভাবে হত্যা করে। কিন্তু তার এই আত্মত্যাগে জনগণের মধ্যে গড়ে উঠে দেশবিরোধী চক্রান্তকারীদের বিরুদ্ধে এক ইস্পাতকঠিন গণঐক্য।
অসাধারণ দেশপ্রেমিক অসম সাহসিকতা, সততা-নিষ্ঠা ও সহজ-সরল ব্যক্তিত্বের প্রতীক জিয়াউর রহমানের অবদান দেশের জন্য অসামান্য। শহীদ জিয়ার বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদী দর্শনেই আমাদের জাতিসত্তার সঠিক স্বরূপটি ফুটে ওঠে-যা আমাদের ভৌগলিক জাতিসত্তার সুনির্দিষ্ট পরিচয় দান করে। ‘বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ’ আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব টিকিয়ে রাখারও অবিনাশী দর্শন। আমি এই মহান রাষ্ট্রনায়কের জন্মবার্ষিকীতে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা; গণতন্ত্র, মানুষের ভোটাধিকার, মানবিক সাম্য, ন্যায়-বিচার ফিরিয়ে আনা এবং মানুষের হারানো মৌলিক ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানাই। আল্লাহ হাফেজ। বাংলাদেশ জিন্দাবাদ।
আরটিভি/এআর-টি
মন্তব্য করুন