ভারতীয় এনআরসি নিয়ে বাংলাদেশ সরকার নির্বিকার কেন, প্রশ্ন ফখরুলের
ভারতের এনআরসি নিয়ে বাংলাদেশের সরকার নির্বিকার কেন, এমন প্রশ্ন তুলেছেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এনআরসি নিয়েে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে সরকার অবস্থান নিয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি।
রোববার বিকেলে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, মূলত মিয়ানমার থেকে আগত রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং ভারত থেকে সীমান্ত দিয়ে জোরপূর্বক ঢুকিয়ে দেয়া সংখ্যালঘু ভারতীয় মুসলিমদের মধ্যে কোনো মৌলিক ব্যবধান নেই। এমনিতেই ১১ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা শরণার্থী নিয়ে বাংলাদেশ ভারাক্রান্ত, তার ওপর এনআরসি উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সরকার তাদের ব্যর্থ পররাষ্ট্রনীতির প্রমাণ হিসেবে যেভাবে নির্বিকার রয়েছে, তা স্পষ্টতই আমাদের জনগণ, সার্বভৌমত্ব ও রাষ্ট্রবিরোধী অবস্থান।
ফখরুল বলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিভিন্ন সময় সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এনআরসি বিষয়ে আমাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। অথচ বর্তমান অবৈধ সরকার বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও জনগণের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অন্য সকল বিষয়ের মতো এ বিষয়ক যারপরনাই উদাসীন কিংবা দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্য প্রদান বা তৎপরতা চালাচ্ছে।
তিনি বলেন, সরকারের প্রধানমন্ত্রীসহ দায়িত্বশীল মন্ত্রীরা ঢালাওভাবে এনআরসি সমস্যা কে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে পাশ কাটিয়ে গিয়েছেন এবং এখনও যাচ্ছেন। ভারতের দায়িত্বশীল মন্ত্রীরা এনআরসির মাধ্যমে বাদ পড়া মুসলিম নাগরিকদের বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়ার সুস্পষ্ট ঘোষণা দেয়ার পরও বাংলাদেশের বর্তমান অনির্বাচিত সরকার নিরন্তরভাবে নির্বিকার ও নিলিপ্ত হয়ে আছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, এমনকি প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক ভারত সফরেও এনআরসি বিষয়টি সরকারের এজেন্ডাভুক্ত করতে পারেনি। আমরা সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই, এ ধরনের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে শেখ হাসিনা সরকারের এহেন নতজানু দায়িত্বজ্ঞানহীন ও উদাসীন আচরণের ফলে মূলত আজকে প্রতিবেশী ভারতের পার্লামেন্টে সংখ্যালঘু নির্যাতন সম্পর্কিত আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি এবং বিএনপি সম্পর্কে মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দায় চাপানোর সুযোগ তৈরি হয়েছে।
ফখরুল বলেন, ভারত সম্প্রতি তাদের আইনসভায় নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাস করেছে। যা ইতোমধ্যে আইনে পরিণত হয়েছে। বিতর্কিত এ বিলের পক্ষে যুক্তি দিতে গিয়ে অমিত শাহ বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতন এখনও অব্যাহত আছে এবং সে কারণেই এ বিল আনয়ন করা হয়েছে বলে ভারতীয় পার্লামেন্টের মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তথ্য উপস্থাপন করেছেন।
তিনি বলেন, বিএনপির দৃঢ়ভাবে মনে করে যে, বিজেপির সভাপতি ও ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রাবিশ কুমার বক্তব্যই দুঃখজনকভাবে অসত্য অপব্যাখ্যামূলক একপাক্ষিক বৈষম্যমূলক বিভ্রান্তিকর এবং চরমভাবে প্রশ্নবিদ্ধ। ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের বক্তব্য আমরা দৃঢ়তার সাথে প্রত্যাখ্যান করছি।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা আশা করি, দু’দেশের জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) সম্পর্কে ভারতীয় পার্লামেন্টের যে অসত্য বক্তব্য দেয়া হয়েছে ভারত সরকার তা অবিলম্বে প্রত্যাহার করে নেবেন এবং ভবিষ্যৎ সহযোগিতা ও সহমর্মিতা ধরনের বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য প্রদানে বিরত থাকবেন।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ড. আব্দুল মঈন খান, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বেগম সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইং সদস্য শামসুদ্দিন দিদার ও শায়রুল কবির খান উপস্থিত ছিলেন।
এসজে
মন্তব্য করুন