পাঁচ আসনের উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বিতরণ শুরু
ঢাকা-১০, গাইবান্ধা-৩ এবং বাগেরহাট-৪, যশোর-৬, বগুড়া-১ আসনের উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বিতরণ চলছে। তৃতীয় দিন দুপুর পর্যন্ত ১৩ জন ফরম সংগ্রহ করেছেন।
এদিকে আজ থেকে শুরু হয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফরম বিতরণ।
ইতোমধ্যে একজন মেয়র প্রার্থী এবং ৩৫ জন কাউন্সিলর প্রার্থী ফরম সংগ্রহ করেছেন। সকাল ১১টা থেকে শুরু হয়ে বিকাল ৫টা পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে দলীয় আবেদনপত্র সংগ্রহ এবং জমা নেওয়া হবে।
মনোনয়ন বিতরণ ও জমা নেওয়া চলবে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
শূন্য হওয়া ঢাকা-১০, গাইবান্ধা-৩ ও বাগেরহাট-৪ সংসদীয় আসনে উপ-নির্বাচন মার্চ মাসের ২১ তারিখে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
বগুড়া-১ ও যশোর-৬ আসন এবং চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়নি।
এসজে
মন্তব্য করুন
আমু গ্রেপ্তারের পর আলোচনায় পালিত মেয়ে, কে এই সুমাইয়া
হত্যা মামলায় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমুকে বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) ৬ দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত। এরই মধ্যে আলোচনায় উঠে এসেছে তার পালিত মেয়ে সুমাইয়া হোসেন।
জানা গেছে, অনেক বছর আগে শ্যালিকা মেরী আক্তারের মেয়ে সুমাইয়া হোসেনকে দত্তক নেন নিঃসন্তান আমির হোসেন আমু। সুমাইয়ার আসল পিতা কিরন। তিনি সর্বশেষ শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ হুমায়ুনের আপন ছোট ভাই ও শিল্পমন্ত্রী থাকাকালে আমুর এপিএস ছিলেন।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা জানিয়েছেন, নরসিংদীতে বাড়ি হলেও কিরন থাকতেন আমির হোসেন আমুর নির্বাচনী এলাকা ঝালকাঠিতে। সেখানে শুধু সম্পদ ভাণ্ডারের দেখাশোনা আর পার্সেন্টেজ আদায় নয়, নির্বাচনী এলাকায় আমুর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডও দেখাশোনা করতেন তিনি। কিরনের মাধ্যমেই নির্বাচনি এলাকা থেকে অবৈধ পথে শত শত কোটি টাকা আয় করেছেন আমু।
যার প্রায় পুরোটাই এখন দুবাইতে আমুর পালিত মেয়ে সুমাইয়ার কাছে। হুন্ডির মাধ্যমে তার কাছে শতকোটি টাকা পাঠয়েছেন আমু। দুবাইয়ে বসবাসকারী সুমাইয়া সেখানে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীকে বিয়ে করেছেন।
আরটিভি/এসএপি/এআর
আ.লীগের কার্যালয় ঘিরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার পাহারা
শহীদ নূর হোসেন দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের কর্মসূচি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে রাজধানীতে। জুলাই বিপ্লবের প্রেক্ষাপটে সদ্য ক্ষমতাচ্যুত দলটির কর্মসূচি প্রতিহত করতে গুলিস্তানের জিরো পয়েন্টের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের কার্যালয়ও পাহারা দিচ্ছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা।
রোববার (১০ নভেম্বর) সকাল থেকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ঘিরে তাদের অবস্থান দেখা গেছে। বিএনপির নেতাকর্মীরাও জড়ো হচ্ছেন সেখানে।
পূর্ব ঘোষিত এ কর্মসূচি ঘিরে বিশৃঙ্খলা এড়াতে গুলিস্তানে নূর হোসেন চত্বর ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সতর্ক অবস্থান নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী। এ ছাড়াও রাজধানীর বিভিন্ন সড়কের মোড়ে অন্যান্য দিনের তুলনায় পুলিশের সদস্যদের বাড়তি উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে।
এর আগে, গতকাল শনিবার (৯ নভেম্বর) আওয়ামী লীগের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে পোস্ট ১০ নভেম্বর বিকেলে ৩টার দিকে বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দেওয়া হয়। গুলিস্তানের জিরো পয়েন্টে নেতাকর্মীদের জড়ো হওয়ার আহ্বান জানায় দলটি।
এ কর্মসূচি প্রতিহত করতে গুলিস্তানে শনিবার (৯ নভেম্বর) সন্ধ্যার পর থেকেই অবস্থান নেয় বিএনপি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠন। রাতে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ কর্মী সন্দেহে দুজনকে মারধরের পর দেওয়া হয় পুলিশে।
এদিকে রোববার (১০ নভেম্বর) সকাল ৮টার দিকে শহীদ নূর হোসেন দিবস উপলক্ষে জিরো পয়েন্টে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন তার পরিবারের সদস্যরা। এরপর বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষও সেখানে শ্রদ্ধা জানাতে শুরু করেছেন।
আরটিভি/এসএইচএম/এআর
যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সোহাগ গ্রেপ্তার
রাজধানীর বনানী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হয়েছেন যুবলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ড. শামীম আল সাইফুল সোহাগ।
সোমবার (১১ নভেম্বর) রাজধানীর বনানীর ২৭ নম্বর সড়ক থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে বনানী থানা পুলিশ।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রাসেল সরোয়ার। তিনি বলেন, গত ১২ সেপ্টেম্বর বনানী থানায় করা একটি হত্যাচেষ্টার মামলায় সোহাগকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
দ্বাদশ সংসদীয় নির্বাচনে পটুয়াখালী-৪ (কলাপাড়া-রাঙ্গাবালী) আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন শামীম আল সাইফুল সোহাগ। সেসময় নৌকার টিকিট না পাওয়ায় উপজেলা চেয়ারম্যান পদে তিনি নির্বাচন করেন।
আরটিভি/এসএপি
সাবেক এমপি সিরাজুল ইসলাম গ্রেপ্তার
রাজধানীর আসাদ গেট এলাকা নরসিংদী-৩ আসনের সাবেক এমপি ও যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মো. সিরাজুল ইসলাম মোল্লাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সোমবার (১১ নভেম্বর) সন্ধ্যায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলী ইফতেখার হাসান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, মো. সিরাজুল ইসলাম মোল্লার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র হত্যার একাধিক মামলা রয়েছে। সেসব মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, সিরাজুল ইসলাম একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ারম্যান। তিনি ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গেলে শিক্ষার্থীরা তাকে আটক করে সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেয়। সেনাবাহিনী তাকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।
ওসি মো. আলী ইফতেখার হাসান জানান, সিরাজুল ইসলাম মোল্লার বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জে একাধিক হত্যা মামলা আছে। তাকে নারায়ণগঞ্জ পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
আরটিভি/এসএপি
ভারতে শেখ হাসিনার ১০০ দিন: কীভাবে রয়েছেন, সামনেই বা কী?
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। এরপর থেকে সেখানেই আছেন তিনি। তবে কীভাবে রয়েছেন, তা অনেকেরই অজানা। বিষয়টি নিয়ে ‘বিবিসি বাংলা’ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
আরটিভি অনলাইনের পাঠকদের জন্য প্রতিবেদনটি হুবহু তুলে ধরা হলো-
ভারতের রাজধানী দিল্লির কেন্দ্রস্থলকে চক্রাকারে ঘিরে রয়েছে যে ইনার রিং রোড, তার ঠিক ওপরেই চারতলা পেল্লায় বাড়িটা। ডাক বিভাগের রেকর্ড অনুযায়ী ঠিকানা ৫৬ রিং রোড, লাজপত নগর, দিল্লি ১১০০২৪।
শহরের দক্ষিণপ্রান্তে পাঞ্জাবি অধ্যুষিত ওই এলাকায় এই বাড়িটার আলাদা করে কোনো বিশেষত্ব চোখে পড়ার কোনও কারণ নেই! কিন্তু আসলে ক’জনই বা জানেন প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে স্বামী ও সন্তানদের নিয়ে শেখ হাসিনা যখন প্রথম ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলেন তার ঠিকানা ছিল রিং রোডের ওপরের এই ভবনটাই?
আসলে তখন ৫৬ রিং রোড ছিল ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের একটি ‘সেফ হাউজ’ বা গোপন অতিথিশালা। শেখ মুজিবুর রহমান আততায়ীদের হাতে নিহত হওয়ার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী যখন তার কন্যাকে সপরিবারে ভারতে আশ্রয় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন, দেশের নিরাপত্তা সংস্থাগুলো প্রথমে তার থাকার ব্যবস্থা করেছিল এই বাড়িতেই। পরে একাধিকবার হাতবদল হয়ে ওই ভবনটি এখন শহরের একটি ছিমছাম চারতারা হোটেলে রূপ নিয়েছে। নাম ‘হোটেল ডিপ্লোম্যাট রেসিডেন্সি’।
মজার ব্যাপার হলো, লাজপত নগরের ওই এলাকাটি এখন দিল্লির আইভিএফ চিকিৎসার প্রধান হাবে পরিণত; যার সুবাদে বাংলাদেশসহ বিশ্বের নানা দেশ থেকে হাজার হাজার নিঃসন্তান দম্পতি ওখানে আসেন এবং দিনের পর দিন ওখানকার হোটেল ও গেস্ট হাউসগুলোতে থাকেন।
কিন্তু বাংলাদেশের এই মেডিকেল ট্যুরিস্টদের যারা ওই বিশেষ হোটেলটিতে ওঠেন, তাদের হয়তো কারও জানা নেই তাদের দেশের সবচেয়ে বেশি সময় প্রধানমন্ত্রী থাকা শেখ হাসিনাও তার জীবনের চরম সঙ্কটের মুহূর্তে ওই একই ভবনে আশ্রয় পেয়েছিলেন!
লাজপত নগরের ওই ঠিকানায় অবশ্য শেখ হাসিনা বা তার পরিবারকে খুব বেশিদিন থাকতে হয়নি।
শহরের ব্যস্ততম রাস্তার ওপর একজন গুরুত্বপূর্ণ অতিথিকে দীর্ঘ সময় রাখাটা নিরাপদ নয় বিধায় তাদের সরিয়ে নেওয়া হয় দিল্লির কেন্দ্রস্থলে অভিজাত পান্ডারা রোডের একটি সরকারি ফ্ল্যাটে, যার বাইরে ঝোলানো থাকত ভিন্ন নামের নেমপ্লেট। দীর্ঘ প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর সেখানেই ছিলেন তারা।
লাজপত নগরের সেই ভবনে এসে ওঠার ঠিক ৪৯ বছর বাদে বাংলাদেশ থেকে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে শেখ হাসিনা যখন আরও একবার ভারতে এসে আশ্রয় নিলেন, তখনও কিন্তু শহরে তার প্রথম ঠিকানায় তিনি থিতু হননি।
আসলে আজ থেকে ঠিক একশো দিন আগে ৫ আগস্টের চরম নাটকীয় পরিস্থিতিতে শেখ হাসিনা যখন ভারতে পা রাখেন, দিল্লির বিশ্বাস ছিল তার এই আসাটা একেবারেই সাময়িক; ইউরোপ বা মধ্যপ্রাচ্যের কোনো দেশে যাওয়ার আগে এটা একটা সংক্ষিপ্ত যাত্রাবিরতির বেশি কিছু নয়!
যে কোনো মুহূর্তে তৃতীয় কোনো দেশের উদ্দেশে তিনি রওনা হয়ে যাবেন, এই ধারণা থেকেই প্রথম দুই-চারদিন তাকে ও তার বোন শেখ রেহানাকে রাখা হয়েছিল দিল্লির উপকন্ঠে গাজিয়াবাদের হিন্ডন বিমানঘাঁটির টার্মিনাল বিল্ডিংয়েই, যেটির নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনার ভার দেশের বিমান বাহিনীর।
কিন্তু চট করে শেখ হাসিনার তৃতীয় কোনো দেশে পাড়ি দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না, এটা স্পষ্ট হয়ে ওঠার পর ভারত সরকার তাকে হিন্ডন থেকে সরিয়ে আনে দিল্লির কোনো গোপন ঠিকানায়। পরে তাকে হয়তো দিল্লির কাছাকাছি অন্য কোনো সুরক্ষিত ডেরাতে সরিয়েও নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এ ব্যাপারে ভারত সরকার আজ পর্যন্ত কোনো তথ্যই প্রকাশ করেনি।
কিন্তু ‘লোকেশন’ যাই হোক, ভারতে তার পদার্পণের একশো দিনের মাথায় এসে এই প্রশ্নটা ওঠা খুব স্বাভাবিক যে, এখন শেখ হাসিনাকে কীভাবে ও কী ধরনের নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে? আর সেটার পেছনে কারণটাই বা কী?
পাশাপাশি এই ‘এক্সট্রাঅর্ডিনারি সিচুয়েশন’ বা চরম অস্বাভাবিক একটা পরিস্থিতিতে তিনি স্বাধীনভাবে কতটা কী করতে পারছেন? কিংবা ‘হোস্ট কান্ট্রি’ হিসেবে ভারত কি তাকে কোনো কোনো কাজ না-করারও অনুরোধ জানিয়েছে?
দিল্লিতে একাধিক মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তা ও ওয়াকিবহাল মহলের সঙ্গে কথাবার্তা বলে বিবিসি বাংলা এসব প্রশ্নের যে উত্তর পেয়েছে, প্রতিবেদনে থাকছে তারই সারাংশ।
নিরাপত্তা প্রোটোকলটা ঠিক কী রকম?
সরকারি পদমর্যাদা ও নিরাপত্তাগত ঝুঁকি বিবেচনায় ভারতের ভিভিআইপিরা বিভিন্ন ক্যাটাগরির নিরাপত্তা পেয়ে থাকেন। যার মধ্যে ‘জেড প্লাস প্লাস’-কেই সর্বোচ্চ বলে ধরা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতির নিরাপত্তা অবশ্য সম্পূর্ণ আলাদা মানদণ্ডে আয়োজন করা হয়। ‘স্পেশাল প্রোটেকশন গ্রুপ’ বা এসপিজি কমান্ডোরা সচরাচর বিভিন্ন নিরাপত্তা সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় রেখে তাদের নিরাপত্তার দায়িত্ব সামলান।
যে ভিভিআইপিদের নিয়মিত প্রকাশ্যে আসতে হয়, আর যাদের লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকলেও চলে– অবশ্যই তাদের ক্ষেত্রে নিরাপত্তার আয়োজনও হয় কিছুটা ভিন্ন ধাঁচের।
তাহলে ‘অপ্রত্যাশিত অথচ অতি গুরুত্বপূর্ণ’ অতিথি শেখ হাসিনার জন্য ভারত এখন ঠিক কোন ধরনের নিরাপত্তা প্রোটোকল অনুসরণ করছে? হুবহু এই প্রশ্নটাই করা হয় ভারতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাকে, যিনি গত একশোদিন ধরে ভারতে শেখ হাসিনার প্রতিটি পদক্ষেপের বিষয়ে সম্পূর্ণ অবগত।
ক্ষুদে বার্তায় তিনি ছোট ছোট তিনটি বাক্যে এই প্রশ্নের যে উত্তর দিলেন, তা এমন-
১. ‘বেয়ার মিনিমাম, প্লেইন ক্লোদস, নো প্যারাফারনেলিয়া!’
যার অর্থ হল, যেটুকু নাহলে নয় শেখ হাসিনাকে সেটুকু নিরাপত্তাই দেওয়া হয়েছে। সাদা পোশাকের রক্ষীরাই তার চারপাশে ঘিরে রয়েছেন (জলপাই-রঙা পোশাকের কমান্ডো বা সেনাসদস্যরা নন)। আর গোটা বিষয়টার মধ্যে কোনো আতিশয্যর বালাই রাখা হয়নি! মানে ঢাকঢোল পিটিয়ে বা ঘটা করে তাকে কোনো নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে না। বরং পুরো জিনিসটাকে খুব নিচু তারে বেঁধে রাখা হয়েছে।
২. ‘ইন হার কেস, সিক্রেসি ইজ দ্য সিকিওরিটি!’
সোজা কথায়, তার বেলায় গোপনীয়তাই হল নিরাপত্তা! এটারও অর্থ খুব সহজ– শেখ হাসিনার অবস্থানের ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে গোপনীয়তা রক্ষার ওপর। কারণ তিনি কোথায়, কীভাবে আছেন এটা যত গোপন রাখা সম্ভব হবে, ততই তার নিরাপত্তা নিশ্ছিদ্র করা সহজ হবে।
৩. ‘মুভমেন্টস অ্যান্ড ভিজিটস– অ্যাজ লিটল অ্যাজ পসিবল!’
ওই কর্মকর্তা তার তৃতীয় বাক্যে জানাচ্ছেন, শেখ হাসিনাকে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় নিয়ে যাওয়া, কিংবা তার সঙ্গে অন্যদের দেখা করানোর ব্যবস্থা– এটাও যতটা সম্ভব এড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে শেখ হাসিনার মুভমেন্টস বা ভিজিটস যে পুরোপুরি বন্ধ নয়, তার কথায় সে ইঙ্গিতও ছিল!
ওই কর্মকর্তার কথা থেকে স্পষ্ট, শেখ হাসিনার জন্য কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকলেও সেটা খুব বিশেষ এক ধরনের আয়োজন– মানে ধরা যেতে পারে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর জন্য যে ধরনের নিরাপত্তা থাকে তার সঙ্গে সেটা মাত্রায় তুলনীয় হলেও আয়োজনে একেবারেই অন্য রকম!
শেখ হাসিনাকে যাতে কোনোভাবেই প্রকাশ্যে না আসতে হয়, এই প্রোটোকলে সেই চেষ্টাও বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়। ফলে দিল্লির মর্নিং ওয়াকারদের স্বর্গ লোদি গার্ডেনে তিনি এসে মাঝেমাঝে হাঁটাহাঁটি করে যাচ্ছেন কিংবা ইচ্ছে করলে নিজামুদ্দিন আউলিয়ার দরগায় বৃহস্পতিবারের সন্ধ্যায় কাওয়ালি শুনে আসছেন– এই ধরনের যাবতীয় জল্পনা হেসেই উড়িয়ে দিচ্ছেন ভারতের সংশ্লিষ্ট মহলের কর্মকর্তারা!
সেই সঙ্গে তারা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, শেখ হাসিনাকে ভারত আশ্রয় দিয়েছে, এর অর্থ হলো তার সম্পূর্ণ নিরাপত্তা ও সুরক্ষার দায়িত্বও কিন্তু এখন ভারতেরই কাঁধে। সেখানে সামান্য কোনো ভুল হলেও তার দায় ভারতের কাঁধেই আসবে এবং সেটা দিল্লির জন্য অত্যন্ত বিব্রতকর হবে।
ফলে সেই নিরাপত্তার প্রশ্নে কোনও আপস করা যাবে না এবং তার জীবনকে সামান্যতম ঝুঁকিতেও ফেলা যাবে না। আর পাশাপাশি পুরো বিষয়টা অত্যন্ত গোপন রাখতে হবে– এগুলো বিবেচনায় নিয়েই সাজানো হয়েছে তার নিরাপত্তা প্রোটোকল!
ঘনিষ্ঠজনদের সঙ্গে মেলামেশা?
গত ৫ আগস্ট যখন শেখ হাসিনা দিল্লিতে এসে নামেন, সে দিনই সন্ধ্যায় দিল্লিতে কংগ্রেসের একদা মুখপাত্র শর্মিষ্ঠা মুখার্জি নিজের এক্স হ্যান্ডল থেকে একটি টুইট করেন। তিনি লেখেন, ‘স্টে সেফ অ্যান্ড স্ট্রং, হাসিনা আন্টি। টুমরো ইজ অ্যানাদার ডে, মাই প্রেয়ার্স আর উইথ ইউ!’
শেখ হাসিনাকে ‘আন্টি’ বলে ডাকতে পারেন, দিল্লিতে শর্মিষ্ঠা মুখার্জি ছাড়া এমন আর দ্বিতীয় কেউ আছেন কিনা বলা খুব মুশকিল! সেই প্রিয় আন্টিকে মনোবল শক্ত রাখার কথা বলতে তিনি কিন্তু এক মুহূর্তও দেরি করেননি।
আসলে শর্মিষ্ঠা মুখার্জির আরেকটা পরিচয় হলো, তিনি ভারতের প্রয়াত সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির কন্যা। খুব ছোটবেলায় শেখ হাসিনার পরিবারের সঙ্গে তার যে নিবিড় ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়েছিল, তা আজও এতটুকু ম্লান হয়নি বলেই তিনি ওই কথাগুলো সেদিন বলতে পেরেছিলেন।
পঁচাত্তরে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী শেখ হাসিনাকে দিল্লিতে আশ্রয় দেওয়ার পর তাদের ‘স্থানীয় অভিভাবক’ হিসেবে সবকিছু দেখাশুনার ভার ছেড়ে দিয়েছিলেন তার আস্থাভাজন বাঙালি কংগ্রেস নেতা প্রণব মুখার্জির ওপর। হিন্দি ও পাঞ্জাবিভাষীদের শহর দিল্লিতে নির্ভেজাল বাংলায় কথা বলতে পারাটাও তখন শেখ হাসিনা ও তার স্বামী-সন্তানদের জন্য ছিল বিরাট একটা ব্যাপার!
প্রণব মুখার্জির স্ত্রী শুভ্রা মুখার্জির সঙ্গেও নিবিড় পারিবারিক বন্ধন গড়ে উঠেছিল শেখ হাসিনার। আর শেখ হাসিনার মেয়ে পুতুল ও প্রণববাবুর কন্যা শর্মিষ্ঠা ছিল প্রায় সমবয়সী। দুটি বাচ্চা মেয়ে প্রায়ই পান্ডারা রোড থেকে হাঁটাপথের দূরত্বে ইন্ডিয়া গেটের প্রশস্ত লনে খেলতে চলে যেত!
প্রণব মুখার্জি নিজে একবার এই প্রতিবেদককে হাসতে হাসতে গল্পচ্ছলে বলেছিলেন, ‘নিজের ছেলেমেয়েদের কখনও সেভাবে সময় দিতে পারিনি, কিন্তু মিসেস গান্ধীর নির্দেশে আমি শেখ হাসিনার ছেলে-মেয়ে, জয় আর পুতুলকে নিয়ে হরিয়ানার দমদমা লেকে বোটিং পর্যন্ত করিয়েছি!’
ফলে প্রণব মুখার্জির গোটা পরিবারের সঙ্গে শেখ হাসিনার পরিবারের সবার কেন নিবিড় আত্মীয়তার সম্পর্ক তৈরি হয়ে গিয়েছিল, তা বোঝা মোটেই শক্ত নয়।
প্রয়াত পিতাকে নিয়ে শর্মিষ্ঠা মুখার্জি গত বছর ‘প্রণব মাই ফাদার’ নামে যে স্মৃতিচারণাটি লিখেছেন তাতেও তিনি লিখেছেন, শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীনও দিল্লিতে হুটহাট প্রণব মুখার্জির কাছে তার ফোন আসত!
প্রণব মুখার্জি হয়তো তখন দেশের অর্থ, প্রতিরক্ষা বা পররাষ্ট্রমন্ত্রী, তিনি শেখ হাসিনাকে মনে করিয়ে দিতেন এভাবে একজন প্রধানমন্ত্রীর অন্য দেশের ক্যাবিনেট মন্ত্রীকে সরাসরি ফোন করাটা ঠিক বিধিসম্মত নয়!
শর্মিষ্ঠা মুখার্জি জানাচ্ছেন, তখনই হাসিনা তার স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে বলে উঠতেন, ‘আরে রাখেন তো আপনার প্রোটোকল! শোনেন, যে জন্য ফোন করলাম ...’
ওপরের এতগুলো কথা এই জন্যই বলা যে, দিল্লিতেও এমন কেউ কেউ আছেন রাজনীতি বা কূটনীতির ঊর্ধ্বে উঠে শেখ হাসিনা যাদের ‘ফ্যামিলি’ বলে ভরসা করতে পারেন। দিল্লিতে সে সময় বহুদিন থাকার সুবাদে তার নিজস্ব পরিচিতিরও একটা বলয় গড়ে উঠেছিল, যাদের মধ্যে কেউ কেউ এখনও জীবিত বা সক্রিয় আছেন। কিংবা দিল্লিতে আজও আছেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর সাবেক কর্নেল অশোক তারার মতো কেউ, যিনি একাত্তরের ১৭ ডিসেম্বর সকালে ধানমন্ডিতে পাকিস্তানি সেনাদের পাহারায় থাকা শেখ হাসিনাসহ মুজিব পরিবারের সদস্যদের প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন। আজও অশোক তারা ও তার স্ত্রী, দুজনের সঙ্গেই শেখ হাসিনার দারুণ সুসম্পর্ক!
এমনকি ঢাকাতে কূটনীতিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে গেছেন, এমন অনেক সাবেক ভারতীয় কর্মকর্তার সঙ্গেও ব্যক্তিগত পর্যায়ে শেখ হাসিনার সৌহার্দ আছে।
বিবিসি বাংলা জানতে পেরেছে, গত একশো দিনের ভেতর তার পুরনো পরিচিত এই ঘনিষ্ঠজনদের মধ্যে কেউ কেউ শেখ হাসিনার সঙ্গে সামনাসামনি দেখা করারও সুযোগ পেয়েছেন। তবে এই ধরনের ভিজিটের সংখ্যা হাতেগোনা হতে পারে। ভারত সরকারও সচেতনভাবে তার ক্ষেত্রে এই ধরনের কিছু দেখা-সাক্ষাতের অনুমতি দিয়েছে, যাতে তাদের ভিভিআইপি অতিথি মানসিকভাবেও চাঙ্গা থাকেন!
রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড কতটা অবাধ?
গত তিন মাসে শেখ হাসিনার সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কথিত ফোনালাপের বেশ কিছু অডিও ‘ভাইরাল’ হয়েছে – যাতে একপক্ষের কণ্ঠস্বর হুবহু শেখ হাসিনার মতোই শোনাচ্ছে। ভারত যদিও এই সব ‘ফাঁস’ হওয়া অডিও নিয়ে সরকারিভাবে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে একাধিক পদস্থ সূত্র একান্ত আলোচনায় স্বীকার করেছেন এগুলো বাস্তবিকই শেখ হাসিনার কণ্ঠস্বর!
দিল্লির নর্থ ব্লকের একজন কর্মকর্তা আবার বলছেন, ‘আমি জানি না এটা এআই দিয়ে বানানো হয়েছে নাকি শেখ হাসিনার নিজেরই গলা। তবে তার তো পরিচিতদের সঙ্গে কথাবার্তা বলায় কোনো বিধিনিষেধ নেই। এখন কেউ যদি সেই আলাপ রেকর্ড করে লিক করে দেয়, তাতে আমাদের কী করার আছে?’
ভারতে কোনো কোনো পর্যবেক্ষক আবার ধারণা করছেন, শেখ হাসিনা যাতে নিজের দলের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়ে তাদের মনোবল ধরে রাখতে পারেন– সে জন্য দিল্লিই এসব কথাবার্তা হতে দিচ্ছে এবং পরে সুযোগ বুঝে তা লিকও করে দিচ্ছে, যাতে তা যত বেশি সম্ভব লোকের কাছে পৌঁছতে পারে!
এর আসল কারণটা যাই হোক, বাস্তবতা হলো শেখ হাসিনা ভারতে কোনো গৃহবন্দিও নন বা রাজনৈতিক বন্দিও নন। ফলে দেশে-বিদেশে তার পরিচিতদের সঙ্গে কথাবার্তা বলার সুযোগ তিনি পাচ্ছেন।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘ভারতে যখন কোনো রাজনৈতিক নেতা গৃহবন্দি হন, তার বাইরের দুনিয়ার সঙ্গে যোগযোগের অধিকারও কার্যত কেড়ে নেওয়া হয়! যেমন ধরুন পাঁচ বছর আগে কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বিলোপ করার পর ওমর আবদুল্লা বা মেহবুবা মুফতিদের যখন গৃহবন্দি করা হয়, তারা কিন্তু দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে দেখা করা তো দূরস্থান– মোবাইল বা ইন্টারনেট সংযোগও পাননি!’
সুতরাং শেখ হাসিনা যে ভারতে মোটেই গৃহবন্দি নন– তার প্রমাণ তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়মিতই কথাবার্তা বলতে পারছেন। দিল্লিতে থাকা মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ বা ভার্জিনিয়াতে থাকা ছেলে সজীব ওয়াজেদের সঙ্গেও তার প্রায় রোজই যোগাযোগ হচ্ছে। নিউজ চ্যানেল, খবরের কাগজ বা ইন্টারনেটেও তার সম্পূর্ণ অ্যাকসেস আছে। তবে ৫ আগস্টের পর থেকে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের যে নেতাকর্মীরা পালিয়ে ভারতে চলে এসেছেন তাদের কারও কারও সঙ্গে শেখ হাসিনার যোগাযোগ হলেও তারা কেউই সশরীরে দলনেত্রীর সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাননি। আর ভারতের মাটিতে বসে শেখ হাসিনা যাতে এখনই নিজের বয়ানে কোনো প্রকাশ্য রাজনৈতিক বিবৃতি না দেন, সে জন্যও তাকে ভারতের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে বলে বিবিসি জানতে পেরেছে।
আসলে শেখ হাসিনাকে ভারতে আশ্রয় দিয়ে তারপর তার মাধ্যমে ভারত বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে উসকানি দিতে চাইছে– এটা যাতে কেউ বলতে না পারে, সে জন্যই দিল্লির এই সতর্ক অবস্থান! আর যেহেতু শেখ হাসিনার নিজস্ব কোনো ভেরিফায়েড ফেসবুক বা এক্স অ্যাকাউন্টও নেই – ফলে এটাও দিল্লির স্বস্তির একটি কারণ যে, সেখানেও তার কোনো পোস্ট আসছে না!
কিন্তু বাংলাদেশে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক পুনর্বাসন কি আদৌ সম্ভব? এই অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয়টা নিয়ে দিল্লি কী ভাবছে?
ভারত এ নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে একটি কথাও বলছে না সঙ্গত কারণেই। তবে ঢাকায় ভারতের সাবেক হাই কমিশনার পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, এই কাজটা শুধু কঠিন নয়, খুবই কঠিন! এখনও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে বিক্ষোভ চলছে। তাদের দলীয় সংগঠনও ছত্রভঙ্গ!
তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনার বয়স আজকের চেয়ে দশটা বছর কম হলেও ধরে নেওয়া যেত, তিনি দেশে ফিরে দলের হাল ধরবেন। কিন্তু এই মুহূর্তে সেটা প্রায় অসম্ভব বলেই মনে হচ্ছে।
কিছুদিন আগে ফাঁস হওয়া একটি অডিওতে শেখ হাসিনার মতো কণ্ঠস্বরে একজনকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি (বাংলাদেশের) খুব কাছাকাছিই আছি, যাতে চট করে ঢুকে পড়তে পারি!’ গত সপ্তাহে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প বিজয়ী হওয়ার পর আওয়ামী লীগের বহু নেতাকর্মীও হয়তো ভাবছেন, তাদের নেত্রীর দেশে ফেরা এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা! তবে শেখ হাসিনা এই মুহূর্তে যে দেশের আতিথেয়তায় আছেন তারা কিন্তু এখনই অতটা আগ বাড়িয়ে ভাবতে রাজি নয়!
সাউথ ব্লকের একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তার কথায়, ‘পিচ এখনও প্রতিকূল, বল উল্টাপাল্টা লাফাচ্ছে। এ রকম সময় চালিয়ে খেলতে গেলে হিতে বিপরীত হতে পারে! এখন বরং ধৈর্য দেখানোর সময়। ফলে প্রতিপক্ষের লুজ বলের জন্য অপেক্ষা করাটাই শ্রেয়।
রাজনীতির উইকেটে পোড় খাওয়া ব্যাটার শেখ হাসিনাও নিশ্চয় এটা জানেন এবং সেই অনুযায়ী উপযুক্ত সুযোগ এলে তবেই সেটা কাজে লাগাবেন– একশো দিনের মাথায় ভারতও আপাতত এটুকুতেই তাদের ভাবনা সীমিত রাখছে!
আরটিভি/আইএম
শেখ হাসিনার সঙ্গে কথোপকথন, সেই যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার
ভারতে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ফোনে কথা বলে ভাইরাল হওয়া যুবলীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলমকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গোবিন্দগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. বুলবুল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, বিএনপি অফিস ভাঙচুরসহ বিভিন্ন অভিযোগে শুক্রবার ভোরে নওগাঁ জেলার মান্দা এলাকা থেকে জাহাঙ্গীরকে গ্রেপ্তার করে গোবিন্দগঞ্জ থানা পুলিশ।
বুলবুল ইসলাম বলেন, জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে গোবিন্দগঞ্জ থানায় মামলা রয়েছে। কোর্টের মাধ্যমে শনিবার তাকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ৩ আগস্ট জাহাঙ্গীরসহ তার সহযোগীরা গোবিন্দগঞ্জের বিএনপি অফিসে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করে দুর্বৃত্তরা। ওই দিন থেকে তিনিসহ তার লোকজন আত্মগোপনে চলে যান। এর মধ্যেই শেখ হাসিনার সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন জাহাঙ্গীর। সেই কথোপকথন সোশ্যাল মিডিয়া ভাইরাল হয়। তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে।
আরটিভি/আরএ
কারাগারে যেভাবে দিন পার করছেন ব্যারিস্টার সুমন
কারাগারে বদলে গেছে সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের জীবন। সেখানে তিনি ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়া শুরু করেছেন পাশাপাশি পত্রিকার খুঁটিনাটি পড়ে দিন কাটাচ্ছেন।
সম্প্রতি ব্যারিস্টার সুমনের সঙ্গে কারাগারে দেখা করতে যান তার দীর্ঘদিনের সহকর্মী ও চেম্বার পার্টনার এম লিটন আহমেদ। তিনি ব্যারিস্টার সুমনের সঙ্গে দেখা করে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, পুরাই বদলে গেছেন ব্যারিস্টার সুমন। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ছেন। কারাগারে ঘুম থেকে ওঠেন ফজরের আজানের আগেই।
আইনজীবী লিটন আহমেদ আরও বলেন, ব্যারিস্টার সুমনের জেল সঙ্গী হলেন সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুখ্য সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান। এদের দুজনের সঙ্গে একই রুম শেয়ার করতে হয় ব্যারিস্টার সুমনকে। সাথে রয়েছেন এক সাবেক পুলিশ কর্মকর্তাও।
লিটন আহমেদ জানান, জেলে ডিভিশন পেয়েছেন ব্যারিস্টার সুমন। তবুও তিনি কষ্টে আছেন তার সঙ্গে মোবাইল ফোন না থাকায়। কারণ আগে সার্বক্ষণিক মোবাইলে নিজের একাউন্টে যেতেন এখন যেটি পুরোপুরিই বন্ধ।
আইনজীবী লিটন আহমেদ বলেন, কারাগারে সুমনকে দুটি জাতীয় পত্রিকা দেওয়া হয়, যার খুঁটিনাটি পড়ে দিন কাটান তিনি।
তবে ব্যারিস্টার সুমন তার সহকর্মীকে লিটনকে জানান, যেদিন আদালতে তোলা হয় সেদিন মন খারাপ থাকে। কারণ তার হাতে হাতকড়া পড়িয়ে কোর্টে নেওয়া হয়, সেখানে অন্য সহকর্মীদের দেখে আবেগী হয়ে পড়েন তিনি।
ব্যারিস্টার সুমন তার চেম্বার পার্টনার লিটনকে আরও জানান, জেল জীবন কষ্টের কারণ সন্ধ্যা নামার মুখেই কারা সেলে ঢুকতে হয়, খাবার খেতে হয়। এটা স্বাভাবিক জীবনে মানা কষ্টের। বাইরের খাবার তেমন একটা পান না।
এম লিটন আহমেদ আরও জানান, কারাগারে থেকে পরিবারকে অনেক মিস করেন ব্যারিস্টার সুমন। কারণ সপ্তাহে মাত্র একবার পরিবারের সঙ্গে ফোনে কথা বলার সুযোগ দেওয়া হয়।
সারাদিন কি করেন ব্যারিস্টার সুমন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, হাটাহাটি করেন। কখনো সকালে, কখনো বিকেলে। তবে সেখানেও তাকে দেখলে অন্য কয়েদিরা ‘সুমন ভাই’ ‘সুমন ভাই’ ডাক শুরু করেন। এতে কখনো কখনো বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। এ কারণে সেলের বাইরে হাটাতেও কিছু বেগ পেতে হয় তাকে।
উল্লেখ্য, ৫ অগাস্টের আগে-পরে যে কয়েকজন এমপি-মন্ত্রীর দেশ ছাড়ার খবর বেরিয়েছিল তার মধ্যে ব্যারিস্টার সুমনের নামও ছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগের সরকার পতনের প্রায় আড়াই মাস পর ২১ অক্টোবর গভীর রাতে ঢাকার মিরপুর এলাকা থেকে সুমনকে গ্রেপ্তার করার কথা জানায় পুলিশ। এরপর সেই মামলায় রিমান্ডে নেওয়া হয় তাকে। এখন পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে ৬ মামলা হয়েছে।
আরটিভি/একে