মো. হেদায়তুল আজিজ মুন্না। একসময় সুস্থ জীবনে থাকলেও মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় স্পাইনাল কর্ড ইনজুরিতে পঙ্গুত্ববরণ করেন। তখন থেকেই তার সঙ্গী হয় হুইলচেয়ার। তাকে দেখে অনেকেই হয়তো ভেবেছিলেন— জীবন শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু অদম্য মুন্না থেমে থাকেননি। ভাগ্যের পরিহাসকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়ে তৈরি করেছেন নতুন এক গল্প। যে গল্প এখন অনেকের প্রেরণা ও সাহসের উৎস। সেই মুন্নাকে সম্মাননা দিয়েছে দেশের প্রথম সারির টেলিভিশন চ্যানেল আরটিভি।
রোববার (৩ ডিসেম্বর) ৩২তম আন্তর্জাতিক ও ২৫তম জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবস উপলক্ষে আরটিভি আয়োজন করে ‘আরটিভি অদম্য সম্মাননা ২০২৩।’ এ অনুষ্ঠানে তাকে সম্মাননা প্রদান করা হয়। আরটিভির তেজগাঁও মাল্টিমিডিয়া স্টুডিওতে এ সম্মাননা অনুষ্ঠিত হয়।
ঘুরে দাঁড়ানো মুন্নার জীবনের গল্প নিয়ে কিছু কথা—
ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ডিপ্লোমা ইন হোমিওপ্যাথিক মেডিসিন অ্যান্ড সার্জারিতে শিক্ষা সম্পন্ন করেন মো. হেদায়তুল আজিজ মুন্না। একই সঙ্গে সিআরপির সহযোগিতায় কানাডা কুইন্স ইউনিভার্সিটির অধীনস্ত প্রতিবন্ধিতা ও প্রতিবন্ধকতার ওপর একটি সর্ট গ্রাজুয়েট কোর্স করেন।
প্রতিবন্ধী মানুষের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ড্রিম ফর ডিস অ্যাবিলিটি ফাউন্ডেশন। যেখানে দেশের মেধাবী প্রতিবন্ধী খেলোয়াড়দের নিয়ে ক্রিকেট দল গঠন করেন।
এ ছাড়া সফলভাবে আয়োজন করতে থাকেন বিভিন্ন ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট টুর্নামেন্ট। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদেরকে স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন কর্মসংস্থানমূলক প্রতিষ্ঠান এবং নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেন তিনি। শুধু তাই নয়, করোনা অতিমারির সময় প্রায় তিন হাজার ৬৯২ জন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের মাঝে খাদ্য ও ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেন।
হেদায়তুল আজিজ মুন্না ২০১৯ সালে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস উপলক্ষে সফল প্রতিবন্ধী ব্যক্তি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেন। এ ছাড়া যুব পুরস্কার, মানবাধিকার সেবা পুরস্কার, অশোকা অ্যাওয়ার্ডসহ অসংখ্য সম্মাননা পেয়েছেন তিনি।
মুন্নার মতো এ বছর আরটিভি অদম্য সম্মাননা পেয়েছেন- প্রতিবন্ধিতা জয়ী শিক্ষার্থী সোনিয়া আক্তার, প্রতিবন্ধিতা উত্তরণে সহায়ক গণমাধ্যমকর্মী নীলিমা জাহান (দ্য ডেইলি স্টার), প্রতিবন্ধিতা উত্তরণে সহায়ক বিদেশি প্রতিষ্ঠান সিবিএম, বাংলাদেশ ও প্রতিবন্ধিতা উত্তরণে সহায়ক দেশীয় প্রতিষ্ঠান নেত্রকোণার কামরুন্নেছা আশরাফ বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ও অটিজম বিদ্যালয়।
‘আরটিভি অদম্য সম্মাননা ২০২৩’ অনুষ্ঠানটির পরিকল্পনা, পরিচালনা ও সঞ্চালনা করেন সৈয়দা মুনিরা ইসলাম। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, সাবেক শিক্ষা সচিব নজরুল ইসলাম খান, ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, বিএসএমএমই উপচার্য ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ ও আরটিভির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ আশিক রহমান, ফাউন্ডিং মেম্বার অব বাংলাদেশ ভেলোরি টেলর ও ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ডিসঅ্যাবিলিটি কনসালটেন্স জুলিয়ান ফ্রান্সিস।
আরটিভির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ আশিক রহমান বলেন, দেশে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সংখ্যা ৪৬ লাখের বেশি। যদিও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে এই সংখ্যা আরও অনেক বেশি। বিপুল এই জনগোষ্ঠীর সামাজিক ও অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তি ছাড়া দেশের টেকসই উন্নয়ন কোনোভাবেই সম্ভব না। দেশে এমন অনেক প্রতিবন্ধী ব্যক্তি আছেন, যারা তাদের শারীরিক কিংবা মানসিক প্রতিবন্ধিতাকে জয় করে সমাজে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কেউ কেউ আছেন যারা শুধু নিজেরাই নয়, সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষের উন্নয়নে অনুসরণীয় অবদান রেখে চলেছেন। আবার এমন অনেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যারা প্রতিবন্ধী জনগণের উন্নয়নে নীরবে কাজ করে যাচ্ছেন।
তিনি আরও বলেন, আরটিভি মনে করে, প্রতিবন্ধিতা বিজয়ী এসব মানুষ এবং প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর কল্যাণে কাজ করে যাওয়া প্রচারবিমুখ মহান ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের অবদান জাতির সামনে তুলে ধরলে একদিকে যেমন ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টি হবে, তেমনি প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর কল্যাণে কাজ করতে আরও অনেকে আত্মনিয়োগ করবে।