মঙ্গল গ্রহে ৫০ মাইল জুড়ে বরফপূর্ণ গর্ত
মঙ্গল গ্রহের এই ছবিকে বরফের সুন্দর একটি স্তূপ মনে হতে পারে। বৃহস্পতিবার ‘মার্স এক্সপ্রেস’ মিশনের মাধ্যমে তোলা এই ছবিটি প্রকাশ করে ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি। এতে দেখা যায়, আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখের মতো বৃত্তাকার গর্তটি বরফ পানি দিয়ে পূর্ণ।
মঙ্গলের শীতকালীন আবহাওয়ার জন্য গর্তটি শুধু বরফ পূর্ণই নয় বরং এখানে ৫ হাজার ৯০৫ ফুট পুরুত্বের বরফ থাকে সারাবছর। এই গর্তকে করোলেভ ক্রাটার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
সিএনএনের প্রতিবেদন বলছে, এটা ৫০ দশমিক ১ মাইল জুড়ে বিস্তৃত। মঙ্গল গ্রহের উত্তরে নিম্নাঞ্চলের এই জায়গাটি অলিম্পিয়া আনডে হিসেবেও পরিচিত। বরফ দিয়ে পূর্ণ এই গর্তের গভীর অংশটি ‘কোল্ড ট্র্যাপ’ হিসেবে ভূমিকা পালন করে। এই বরফের ওপর দিয়ে যাওয়ার সময় বাতাস ঠাণ্ডা হয় এবং বরফের ওপরে ঠাণ্ডা বাতাসের একটি স্তর তৈরি করে। মূলত এ কারণেই বরফ গলে না।
এই গর্তের নাম করোলেভ রাখা হয়েছে সার্গেই করোলেভের নামানুসারে যিনি একজন শীর্ষ রকেট ইঞ্জিনিয়ার এবং স্পেসক্র্যাফট ডিজাইনার। তাকে সোভিয়েত স্পেস টেকনোলজির জনক বলা হয়। সার্গেই করোলেভ স্পুটনিক প্রোগ্রামে কাজ করেছেন। এছাড়া ভোস্টক প্রোগ্রামেও তিনি কাজ করেছেন যা মানুষকে প্রথম মহাশূন্যে নিয়ে যায়।
মঙ্গল গ্রহের এই গর্তটির ছবি তোলা হয়েছে মার্স এক্সপ্রেস হাই রেজুলেশন স্টেরিও ক্যামেরা দিয়ে। ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি তাদের মার্স এক্সপ্রেস মিশনের ১৫ বছর পূর্তি পালন করছে। এই মিশন চালু হয় ২০০৩ সালের জুনে এবং মঙ্গলের কক্ষপথে প্রবেশ করে ২০০৩ সালের ২৫ ডিসেম্বর।
ইনসাইটের কার্যক্রম
কিছুদিন আগে নাসার যান ইনসাইট মঙ্গলে সফলভাবে অবতরণ করেছে। ২৬ নভেম্বর মঙ্গলের মাটিতে পৌঁছানোর পর থেকে ছবি তোলার পাশাপাশি আশেপাশের পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করছে ইনসাইট।
বুধবার প্রথমবারের মতো এর যন্ত্রাংশ মঙ্গলের মাটিতে স্থাপন করা হয়। সিসমোমিটার নামের ভূমির অবস্থা পর্যবেক্ষণের যন্ত্রটি এই প্রথম অন্য কোনও গ্রহের মাটিতে স্থাপন করা হলো। ইনসাইটে সংযুক্ত হাত যন্ত্রটি থেকে ৫ দশমিক ৩ ফুট দূরত্বে পৌঁছাতে পারে। ফলে ইনসাইট থেকে এই পরিমাণ দূরত্বে সিসমোমিটারটি স্থাপন করা হয়েছে।
এ সম্পর্কে ইনসাইটের প্রিন্সিপাল ইনভেস্টিগেটর ব্রুস বানেড বলেন, সিসমোমিটার স্থাপন মঙ্গলে ইনসাইট অবতরণের মতোই গুরুত্বপূর্ণ। ইনসাইটের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ হলো সিসমোমিটার। আমাদের উদ্দেশ্য পূরণে এই যন্ত্রাংশ প্রয়োজন।
ইনসাইট প্রোজেক্ট ম্যানেজার টম হফম্যান বলেন, ইনসাইট আমাদের আশার চেয়েও ভালো কাজ করছে। সিসমোমিটারকে ভূমিতে স্থাপন করতে পারা বড়দিনের দারুণ একটি উপহার।
সিসমোমিটারটির সাহায্যে বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারবেন, মঙ্গলের ভূমির নিচ্ছে কী হচ্ছে। এছাড়া এর সাহায্যে সেখানকার ভূমিকম্পের অবস্থা সম্পর্কেও ধারণা পাওয়া যাবে।
এ সম্পর্কে সিসমোমিটারটির প্রিন্সিপাল ইনভেস্টিগেটর ফিলিপে লগনন্নে বলেন, এটা ভূমিতে রাখা মানে কানের কাছে একটি ফোন ধরে রাখা। আমরা খুবই উত্তেজিত যে, আমরা মঙ্গলের মাটির নিচে কী হচ্ছে তা শোনার জন্য ভালো অবস্থায় আছি।
সিসমোমিটারটি কী তথ্য পাঠায় তা পাওয়ার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে বিজ্ঞানীরা। এ সম্পর্কে এক বিজ্ঞানী বলেন, ইনসাইটের ওই সিসমোমিটার থেকে যখন তথ্য পাওয়া শুরু করবো তখন আমরা শ্যাম্পেইনের মাধ্যমে তা উদযাপন করবো। এজন্য আমার নিজের একবোতল শ্যাম্পেইন রাখা আছে।
ডি/পি
মন্তব্য করুন