কে এই টিপু সুলতান?
টাক মাথায় ফর্সা মুখে লম্বা সাদা সাদা দাড়ি, হাতে বই নিয়ে ঘুরে বেড়ান দেশের বিভিন্ন স্থানে। পূর্বে উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের রেলে ট্রেনে ফেরি করে বই বিক্রি করতে তিনি। তবে এবার অমর একুশে বইমেলায় ফেরি করে বই বিক্রি করে আলোচনায় আসেন টিপু সুলতান। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার বহু ভিডিও, ছবি এবং মিম ছড়িয়ে পড়েছে। সেগুলোতে, শুধু ইংরেজি ভাষা এবং নিজের বই নিয়েই নয়, বিভিন্ন ইস্যুতে তাকে কথা বলতে দেখা যায়।
১৯৭১ সালের ২৩ মে টিপু সুলতানের জন্ম হয় কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর উপজেলার বোয়লিয়া ইউনিয়নের সরিষাডুলী গ্রামে। বাবা-মায়ের চার সন্তানের মধ্যে সবার ছোট তিনি। বর্তমানে দুই সন্তানসহ স্ত্রীকে নিয়ে রাজধানীতে বসবাস করছেন। তিনি কুষ্টিয়ার শ্যামপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, চুয়াডাঙ্গা পৌর কলেজ থেকে এইচএসসি এবং মিরপুর উপজেলার আমলা সরকারি কলেজ থেকে স্নাতক পাস করেন।
এরপর ১৯৯৪ সালে চাকরি করতে ঢাকায় আসেন টিপু সুলতান। নিউ ইস্কাটন রোডে একটি কোম্পানিতে চাকরি শুরু করেন তিনি। এরপর সেতু অ্যাসোসিয়েটস নামে একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করে সিসিটিভি ও টেলিকমিউনিকেশনের ব্যবসা শুরু করেন। ব্যবসায়ীক ব্যস্ততার মাঝেই ২০১৭ সালে প্রকাশিত হয় তার প্রথম বই ‘রেলপথে বাংলাদেশ’। এই ভ্রমণ গাইডটির ১ লাখ ২৩ হাজার কপি বিক্রীত হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
২০২০ সালে প্রকাশিত হয় তার ‘বোনাস’ নামে আরেকটি বই। সেই সঙ্গে আটটি মানচিত্র তৈরি করেছেন তিনি। তার কুষ্টিয়া জেলা এবং মেহেরপুর জেলার মানচিত্রতে প্রতিটি ইউনিয়নের পৃথক ভৌগোলিক এলাকা ও গ্রামের সঠিক অবস্থান তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়া দেশের প্রতিটি উপজেলার পৃথক ভৌগোলিক এলাকা ও ইউনিয়নের সঠিক অবস্থান তুলে তিনি তৈরি করেছেন ‘বাংলাদেশ প্রশাসনিক মানচিত্র’। বাংলাদেশের ৪০৫টি নদীর গতিপথসহ নদ-নদীর মানচিত্র, ৪৬৬টি স্টেশনের নামসহ ‘রেলপথে বাংলাদেশ মানচিত্র’, গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও ভবনের নামসহ ‘ঢাকা সিটির মানচিত্র’, ভারতের প্রতিটি প্রদেশের পৃথক ভৌগোলিক এলাকা, বিভিন্ন রাজ্যের রাজধানী, গুরুত্বপূর্ণ শহর, হাসপাতালের নাম, ঠিকানা, ই-মেইল ও টেলিফোন নম্বরসহ ‘ভারতের চিকিৎসা ব্যবস্থার মানচিত্র’, পৃথিবীর প্রতিটি দেশের পৃথক ভৌগোলিক এলাকা, রাজধানী ও প্রধান প্রধান শহরের নামসহ ‘পৃথিবীর মানচিত্র’ তৈরি করেছেন তিনি।
ফেরি করে বই বিক্রির বিষয়ে টিপু সুলতান জানান, ২০১৭ সালে ‘রেলপথে বাংলাদেশ’ বইটি ১০ হাজার কপি প্রিন্ট করেন। বিভিন্ন রকমের লিফলেট বিতরণ করেও তার বই বিক্রি হয়নি। বই বিক্রি করে দেওয়ার জন্য কোনো হকার খুঁজে না পেয়ে পরে বইগুলো বাসায় এনে রেখে দিই।
তিনি বলেন, আমি লেখাপড়া শিখেছি, ঠিকাদার মানুষ। আমার বংশ মর্যাদা আছে, অর্থ আছে; আমি ফেরি করবো সেটা কি শোভা পায়? আমি তখন একটা সেনটেন্স (বাক্য) বললে তাকিয়ে দেখতাম কেউ দেখে ফেললো কি না। দেখে ফেললে আমার নিজেরই লজ্জা লাগতো।
তবে টিপু সুলতানকে নিয়ে অনলাইন মাধ্যমগুলোতে ব্যাপক নেতিবাচক সমালোচনাও আছে। বইমেলায় ঘুরতে আসা ছাত্র-ছাত্রীদের ইংরেজি শব্দের বানান এবং বাংলা অর্থ জিজ্ঞাসা করে আলোচিত-সমালোচিত হন তিনি। অনেকের অভিযোগ, এর মাধ্যমে তিনি শিক্ষার্থীদের বিব্রত এবং হেয় করছেন।
তবে তিনি এসব অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, অনেক আগে থেকেই আমি এরকম কুইজ দেয়। কুইজের সঠিক উত্তর দিতে পারলে ফ্রিতে বই দিই। বইমেলায়ও এরকমটা করেছেন। কাউকে হেয় করার জন্য আমি এমনটি করিনি।
আমি হয়তো অনেক জানি না কিন্তু যে পদ্ধতি তৈরি করেছি সেটার কারণে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় প্রফেসর আমাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন, যোগ করেন টিপু সুলতান।
মন্তব্য করুন