শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানো কে এই আইনজীবী
কোটা সংস্কার আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের পক্ষে আদালতে আইনি লড়াই করে ভাইরাল হয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মানজুর আল মতিন পীতম। এরই মধ্যে দেশজুড়ে প্রশংসায় ভাসছেন তিনি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম হাজার হাজার ফেসবুক ব্যবহারকারী পীতমের ছবি শেয়ার করে তাকে ‘রিয়েল হিরো’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
বুধবার (৩১ জুলাই) মানজুর আল মতিন পীতমকে নিয়ে করা কয়েকটি পোস্ট ভাইরাল হয়েছে; যা ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপ, পেজ ও ব্যবহারকারীদের টাইমলাইনে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
পাঠকদের জন্য পোস্টগুলো হুবহু তুলে ধরা হলো, ‘অনেক বাংলা সিনেমা দেখেছি, যেখানে সাবানা হুট করে আইনজীবী হয়ে যায় সন্তান বা স্বামীর প্রয়োজনে। মানজুর আল মাতিনকে মূলত সবাই চেনে নিউজ প্রেজেন্টার বা উপস্থাপক হিসেবে। অথচ যখন দেশের প্রয়োজন হলো, নিজের আইনি পোশাকটা লাগিয়ে তিনি দাঁড়িয়ে গেলেন স্টুডেন্টদের পক্ষে, দেশের পক্ষে! যারা তাকে নিউজ প্রেজেন্টার হিসেবে দেখে অভ্যস্ত, সবার কাছে ব্যাপারটা বাংলা সিনেমার মতোই মনে হওয়ার কথা! জীবনের গল্প মাঝেমধ্যে সিনেমার গল্পকেও হার মানায়। মানজুর আমাদের সেটিই দেখিয়ে দিলেন।
পীতমকে নিয়ে লেখা ভাইরাল হওয়া আরেকটি পোস্ট হলো, ‘হিন্দি সিরিয়ালের ভার্চুয়াল আদালতের উকিল সাহেবের কাজ দেখে যারা ইমপ্রেসড, তারা দেখে নিতে পারেন বাস্তব দুনিয়ার এই আইনজীবীকে। যিনি বিবেকের তাড়নায় চুপ থাকতে পারেননি। কালো গাউন গায়ে দিয়ে এজলাস কক্ষের পাশাপাশি আজ রাস্তায় দাঁড়িয়েছেন ছাত্রদের ভাই বন্ধু ও একজন ত্রাণকর্তা হিসেবে। অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে দোয়া আপনার জন্য ভাই।’
অ্যাডভোকেট মানজুর আল মতিন পীতমের পরিচয়
আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি আব্দুল মতিনের ছেলে ও সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের তালিকাভুক্ত আইনজীবী পীতম। তিনি ঢাকার রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসএসি ও এইচএসসি পাস করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ থেকে শিক্ষাজীবন শেষ করে আইনপেশায় মনোনিবেশ করেন। বর্তমানে প্রখ্যাত দেওয়ানি আইন ও রিট বিশেষজ্ঞ জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট প্রবীর নিয়োগীর জুনিয়র হিসেবে কাজ করছেন। আইনপেশা পরিচালনার পাশাপাশি তিনি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল টোয়েন্টিফোরে সংবাদ পাঠ করেন ও টকশো উপস্থাপনা করেন।
কোটা আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানো প্রসঙ্গে অ্যাডভোকেট মানজুর আল মতিন পীতম গণমাধ্যমে বলেন, ‘আমি শিখেছি আইনজীবী হিসেবে সমাজের, মানুষের ও আইনের প্রতি দায়বদ্ধতা কাকে বলে। ১৭ জুলাই রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের ফারহান আমার চোখের সামনে গুলিতে মারা গেল। ওইদিন আমি আমার স্ত্রী ও আমার বন্ধু রিন্টু আমরা যখন দেখলাম বাচ্চাদের ওপর গুলি হচ্ছে, বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা নিরস্ত্র আবু সাঈদকে এভাবে মেরে ফেলা হলো। তারপর আমার কাছে মনে হয়েছে, কোনো মানুষ সে হোক আওয়ামী লীগের, হোক সে বিএনপির, হোক সে যেকোনো দলের, কোনো মানুষ নিরাপদ নয়।’
তিনি বলেন, সে কারণে আমার মনে হয়েছে পরের গুলিটা তো আমার বুকে লাগতে পারে। কারণ ফারহান কি আমার সন্তান নয়? আবু সাঈদ কি আমার সন্তান নয়? তারপর থেকে রাস্তায় থাকছি। সংযুক্ত আরব আমিরাতে আমাদের ভাইয়েরা রাস্তায় নেমেছেন। তারা জানেন রাস্তায় নামলে তাদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হবে। এই মানুষগুলো কত কষ্ট করে, সর্বোচ্চ বিক্রি করে বিদেশে যান আমরা জানি। সেই মানুষগুলো যখন রাস্তায় নেমেছেন, তাদের জীবন শেষ হয়ে যাবে, তারপরও তারা প্রতিবাদ করেছেন। আর আমরা যারা আরাম-আয়েশে এতগুলো বছর কাটিয়েছি, তাদের ঘরে বসে থাকার সুযোগ আছে বলে আমি মনে করি না।
মন্তব্য করুন