• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৯ জানুয়ারি ২০২৫, ২৫ পৌষ ১৪৩১
logo

রেকর্ড ২৯১৯ ভুল তথ্যে ফিরে দেখা ২০২৪ সাল

আরটিভি নিউজ

  ০৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১৫:৫২
সংগৃহীত ছবি

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন দিয়ে শুরু হয়েছিল ২০২৪ সাল। এরপর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের পতন। এরপর ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যম ও এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে বাংলাদেশ নিয়ে একের পর এক সাম্প্রদায়িক প্রোপাগাণ্ডা ছড়ানো হয়। এমন নানা ঘটনাপ্রবাহের মধ্য দিয়ে ২০২৪ বিদায় নিল। সদ্য বিদায় হওয়া বছরটিতে

বুধবার (৮ জানুয়ারি) বাংলাদেশের তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানার জানিয়েছে, গেল বছর এমন সব ঘটনায় ভুল আর অপতথ্যের প্রবাহ হয়েছে। সংস্থাটি রেকর্ড ২৯১৯টি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে। এর আগের বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে শনাক্ত হয়েছিল ১৯১৫টি ভুল তথ্য। এক বছরের ব্যবধানে রিউমর স্ক্যানার প্রায় ৫২ শতাংশ হারে ভুল তথ্য বৃদ্ধি পেতে দেখেছে।

ভুয়া তথ্যে সয়লাব ফেসবুক, এক্সে সাম্প্রদায়িক অপতথ্য

বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে তুমুল জনপ্রিয় এবং বহুল ব্যবহৃত প্লাটফর্ম ফেসবুক। মেটার অধীনে থাকা এই মাধ্যমটিতে ২০২৪ সালে ২৩৩০টি ভুল তথ্য শনাক্ত করা হয়েছে৷ এই হিসেবে প্রতিদিন কমপক্ষে গড়ে ছয়টির বেশি ভুল তথ্য প্রচারিত হয়েছে এই প্লাটফর্মে। ফেসবুকের পর একক প্লাটফর্ম হিসেবে বেশি ভুল তথ্য ছড়িয়েছে ইউটিউবে (৫৬৫টি)। পিছিয়ে নেই শর্ট ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম টিকটকও। ছয় মাসে এখানে ভুল তথ্য ছড়িয়েছে ৫০৯টি৷ গেল বছর এক্সে (সাবেক টুইটার) উল্লেখ্যযোগ্য সংখ্যক অপতথ্য প্রচার করা হয়েছে বাংলাদেশকে নিয়ে। রিউমর স্ক্যানার এই প্লাটফর্মে ছড়িয়ে পড়া এমন ২০১টি অপতথ্য শনাক্ত করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এর বাইরে অন্যান্য প্লাটফর্মগুলো বাংলাদেশে তুলনামূলক কম জনপ্রিয় হওয়ায় সেগুলোতে ভুল তথ্য প্রচারের হারও বেশ কম লক্ষ্য করা গেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো ছাড়াও গণমাধ্যমও ভুল তথ্য প্রচারের ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে। গত বছর দেশের গণমাধ্যমগুলোতে প্রচারিত প্রতিবেদনে ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে ১৫১টি৷

কোন মাধ্যমে কত ভুল তথ্যের প্রচার?

২০২৪ সালে রিউমর স্ক্যানারে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, এই সময়ে পুরোপুরি মিথ্যা বা ভুয়া ঘটনা সম্বলিত ভুল তথ্য শনাক্ত হয়েছে ২০২৮টি। এছাড়া, বিভ্রান্তিকর রেটিং দেওয়া হয়েছে ৫৩৩টি। বিকৃত রেটিং পেয়েছে ৩০৮টি, অধিকাংশই মিথ্যা এমন রেটিং পেয়েছে তিনটি। এছাড়া, সার্কাজম বা কৌতুক হিসেবে হাস্যরসাত্মক ঘটনাকে বাস্তব দাবির প্রেক্ষিতে তা নিয়ে ফ্যাক্টচেক করা হয়েছে ৩১টি। যাচাইয়ের পর অর্ধেক সত্যতা পাওয়া গেছে এমন প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে দুইটি।

রাষ্ট্র ক্ষমতার পটপরিবর্তনের বছরে রাজনৈতিক অপতথ্যই বেশি

২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় দেশের ১২তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ৯১টি ভুল তথ্য শনাক্ত করে রিউমর স্ক্যানার। আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আগে ও পরে রাজনৈতিক অপতথ্যের প্রবাহও বৃদ্ধি পেতে দেখা গেছে। জুলাই-আগস্ট এই দুই মাসে রাজনৈতিক অপতথ্য শনাক্ত হয়েছে ১২৮টি। এর আগের মাসগুলোয় এই ক্ষেত্রটিতে অপতথ্যের প্রবাহ কিছুটা কম থাকলেও আগস্ট পরবর্তী মাসগুলোয় অপতথ্যের প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে। সব মিলিয়ে এক বছরে রাজনীতি বিষয়ে ৭২৭টি ভুল তথ্য শনাক্ত করা হয়েছে, যা অন্য সকল ক্যাটাগরি থেকে বেশি৷ এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভুল তথ্য শনাক্ত হয়েছে আগস্টে (৩৮৬)। ক্যাটাগরি হিসেবে একক মাসে ভুল তথ্য বেশি শনাক্ত হয়েছে জাতীয় ক্ষেত্রে (আগস্টে ১৫০টি)।

৩য় প্রান্তিকে বেশি ভুল তথ্য

গেল বছর ৩য় প্রান্তিকে ভুল তথ্যের প্রচার ছিল সবচেয়ে বেশি। এ সময়ে শনাক্ত হওয়া ভুল তথ্যের সংখ্যা ৮৪৭টি। ৩য় প্রান্তিকে বাংলাদেশ উত্তাল একটি সময় অতিবাহিত করেছে, যার শুরু ছিল কোটা সংস্কার আন্দোলনের ঘটনাপ্রবাহ দিয়ে। এরপর আগস্টে আন্দোলনের চূড়ান্ত পরিণতি হিসেবে হাসিনা সরকারের পতন দেখেছে বাংলাদেশ। এর পরের কয়েকদিন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির সুযোগে সাম্প্রদায়িক অপতথ্যের প্রচার (বিশেষ করে এক্সে) ছিল বেশ লক্ষ্যণীয়। এরপর অন্তর্বর্তী সরকারের ক্ষমতা গ্রহণ পরবর্তী সময়েও সরকারকে জড়িয়ে অপতথ্যের প্রচার দেখা গেছে। এসবই ভূমিকা রেখেছে ৩য় প্রান্তিকে এত বেশিসংখ্যক ভুল তথ্য শনাক্তে।

কোন প্রান্তিকে কত ভুল তথ্য?

বাংলাদেশে সাধারণত যে দল বা ব্যক্তিরা ক্ষমতায় থাকে সে দল বা ব্যক্তিদের বিভিন্ন কার্যক্রমের দরুণ তাদের নিয়ে গুজব ও অপতথ্য ছড়ায় বেশি। রিউমর স্ক্যানার প্রকাশিত গেল বছরের প্রতিবেদনগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এ সময়ে দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিয়ে সর্বোচ্চ ৪৪টি ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে। এর বাইরে দলটির নেতাকর্মীদের নিয়ে ৪০৯টি এবং বিভিন্ন সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন এবং নেতাকর্মীদের নামে ৫৭টি ভুল তথ্য শনাক্ত হয়েছে। শেখ হাসিনাকে জড়িয়ে গেল এক বছরে প্রচার হওয়া অপতথ্যের সংখ্যা ২০৮টি। এছাড়া, সায়েদুল হক সুমনকে জড়িয়ে ৪৯টি, ওবায়দুল কাদেরকে জড়িয়ে ৩৪টি, সজীব ওয়াজেদ জয়কে জড়িয়ে ২০টি, সাকিব আল হাসানকে জড়িয়ে ২৩টি অপতথ্য প্রচার করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে গেল বছরের প্রথম সাত মাসে স্বাভাবিকভাবেই দলটিকে নিয়ে অপতথ্যের প্রচার অনুমিত পরিমাণই ছিল। ০৫ আগস্ট ক্ষমতা হারানোর পরও অবশ্য এই প্রবাহ কমেনি। শেখ হাসিনা ভারত থেকে লাইভ করছেন এমন দাবির ভিডিও, তিনি দেশে ফিরে আসার দৃশ্য দাবির ভিডিও, তাকে ইতিবাচকভাবে উপস্থাপন করে ক্রমাগত অপতথ্যের প্রবাহ ছিল এর পেছনে বড় কারণ। এর বাইরে সংগঠন হিসেবে ছাত্রলীগের নিষিদ্ধ হওয়া পরবর্তী সময়ে সংগঠনটির পক্ষে অপতথ্যের প্রচার, বিভিন্ন দিবস (যেমন নূর হোসেন দিবস) ও ইভেন্ট (যেমন আগস্টের বন্যা) ঘিরে ক্যাম্পেইন আকারে অপতথ্যের প্রচার দলটির পক্ষে অপতথ্যের সংখ্যা বাড়িয়েছে। দলটিকে নিয়ে প্রথম ও শেষ ছয় মাসের অপতথ্যের সংখ্যায় তাই খুব একটা পার্থক্য দেখা যায়নি।

পার্থক্য নেই বিএনপিকে নিয়ে ভুল তথ্যের প্রচার সংখ্যায়ও। প্রথম ছয় মাসে বিএনপি দল হিসেবে, নেতাকর্মীদের নিয়ে এবং দলটির অঙ্গসংগঠনগুলোকে নিয়ে ভুল তথ্যের সংখ্যা ছিল ৭৪টি। বছর শেষে সংখ্যাটা ১৩০ এ গিয়ে ঠেকেছে। এ সময়ে দলটির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে জড়িয়ে সর্বাধিক ২৯টি অপতথ্য প্রচার করা হয়েছে। এছাড়া, তারেক রহমানকে জড়িয়ে ১২টি, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে জড়িয়ে ২০টি এবং রুমিন ফারহানাকে জড়িয়ে ১৫টি অপতথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার।

তবে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে প্রথম ও শেষ ছয় মাসের ভুল তথ্যের তুলনামূলক বিশ্লেষণে জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে ছড়ানো ভুল তথ্য শেষ ছয় মাসে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বৃদ্ধি পেতে দেখা গেছে৷ প্রথম ছয় মাসে দল হিসেবে, নেতাকর্মীদের নিয়ে এবং দলটির অঙ্গসংগঠন মিলিয়ে জামায়াতকে নিয়ে ভুল তথ্যের সংখ্যা ছিল মাত্র নয়টি। বছর শেষে সংখ্যাটা প্রায় নয় গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। আগস্ট পরবর্তী সময়ে রাজনীতির ময়দানে জামায়াতের সক্রিয় হওয়া দলটিকে নিয়ে ছড়ানো ভুল তথ্যের সংখ্যা বৃদ্ধির বড় কারণ। দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমানকে নিয়ে সর্বাধিক ১১টি ভুল তথ্য প্রচারের প্রমাণ মিলেছে।

এছাড়া অন্যান্য দলের মধ্যে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরকে জড়িয়ে ৭টি এবং বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ, এবি পার্টির যুগ্ম সদস্যসচিব আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্নাকে জড়িয়ে একটি করে অপতথ্য শনাক্ত করা হয়েছে।

কোটা আন্দোলন থেকে সরকার পতনের টাইমলাইনে ভুল তথ্যের প্রবাহ

কোটা সংস্কারের দাবিতে গেল বছর আন্দোলন শুরু হয় ৫ জুন। জুলাইতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ এর ব্যানারে সংগঠিত হয় এবং সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে ২০১৮ সালের সরকারি বিজ্ঞপ্তি পুনঃবহালের দাবিতে টিএসসিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করে। পরবর্তীতে ঢাকাসহ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে এই আন্দোলন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকার দলীয় নেতা-কর্মীরা

আন্দোলনে বাঁধা দিলে তা সহিংসতায় রূপ নেয়। এতে অসংখ্য মানুষের প্রাণহানি হয়, আহত হয় হাজার হাজার মানুষ। কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভ এক পর্যায়ে গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়। অবসান ঘটে আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনের। একটি বড় ইস্যু যখন সামনে আসে, তখন স্বাভাবিকভাবেই তাকে ঘিরে গুজবের প্রচার ও প্রসার ঘটে। তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে এই পূর্ব অভিজ্ঞতা রিউমর স্ক্যানার কাজে লাগিয়েছে এই ইস্যুতেও। আমরা শুরু থেকেই এই আন্দোলনের ঘটনাপ্রবাহ গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছিলাম। এই আন্দোলনকে ঘিরে রিউমর স্ক্যানার প্রথম একটি ভুল তথ্য শনাক্ত করে ১১ জুলাই। এরপর জুলাইয়ের প্রায় প্রতিদিনই এই আন্দোলন সম্পর্কিত একাধিক ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার। সে সময় ভুল তথ্যের প্রবাহ এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছিল যে রিউমর স্ক্যানারের পক্ষ থেকে ১৬ জুলাই একটি লাইভ আপডেট চালু করা হয় ওয়েবসাইটে। আন্দোলন নিয়ে সময়ে সময়ে ছড়িয়ে পড়া ভুল তথ্যের ফ্যাক্ট এবং এই আন্দোলন ঘিরে বিভিন্ন হালনাগাদ তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে জানাতে এই ব্যবস্থা করেছিল রিউমর স্ক্যানার। নির্ভরযোগ্য সূত্রের মাধ্যমে এই আন্দোলনের মৃত্যুর সংখ্যাও প্রতিদিন হালনাগাদ করা হতো এই পাতায়। এই আন্দোলন সম্পর্কিত ১৮৯টি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার।

৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের চূড়ান্ত পরিণতি হিসেবে শেখ হাসিনা ও তার সরকারের পতন ঘটে। পরবর্তী সময়েও ভুল তথ্যের প্রচার ছিল লক্ষ্যণীয়। রিউমর স্ক্যানার এই সময়ে ৬৭টি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

কোটা আন্দোলন থেকে সরকার পতনের সময়টায় সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ নামের একটি সংগঠন। জুলাইতে সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা বাতিলের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ৬৫ সদস্যের একটি সমন্বয়ক কমিটি গঠনের মাধ্যমে এই সংগঠনের কার্যক্রম শুরু করেন। এই সংগঠনকে জড়িয়ে ২৪টি অপতথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের নিয়ে ৮৩টি ভুয়া তথ্য শনাক্ত করা হয়েছে। এদের মধ্যে সারজিস আলমকে নিয়ে ৩৬টি, হাসনাত আবদুল্লাহকে নিয়ে ২৪টি, আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াকে নিয়ে ৬টি, নুসরাত তাবাসসুমকে নিয়ে ৫টি, নাহিদ ইসলামকে নিয়ে ৩টি, তারিকুল ইসলামকে নিয়ে ২টি অপতথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার। এছাড়া, বাকের মজুমদার, খান তালাত মাহমুদ রাফি, মাহফুজ আলম, আব্দুল হান্নান মাসুদ, উমামা ফাতেমা, সাজিদুল ইসলাম বাপ্পি ও ইয়াছমিন মিতুকে জড়িয়ে একটি করে অপতথ্য শনাক্ত করা হয়েছে।

জুলাই ও আগস্টের আন্দোলনের সময়ে অসংখ্য মানুষ প্রাণ দিয়েছেন। এদের মধ্যে রংপুরের আবু সাঈদকে জড়িয়ে সর্বাধিক আটটি এবং ঢাকার মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধকে নিয়ে পাঁচটি অপতথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার।

অন্তর্বর্তী সরকারের চার মাসে শতাধিক ভুল তথ্য

আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ০৮ আগস্ট দায়িত্ব নেয় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। পরের চার মাসে এই সরকারকে জড়িয়ে প্রচার হওয়া ১৩৫টি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার। ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সরকারের প্রথম ১৪৬ দিনে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসকে জড়িয়ে ছড়িয়েছে ১১০টি ভুল তথ্য।

এছাড়া এই সরকারের উপদেষ্টাদের মধ্যে ড. আসিফ নজরুলকে জড়িয়ে ২৪টি, নাহিদ ইসলামকে জড়িয়ে ১৩টি, আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও মোস্তফা সরয়ার ফারুকীকে জড়িয়ে ৬টি, মাহফুজ আলমকে জড়িয়ে ৫টি, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানকে জড়িয়ে ৪টি, আ ফ ম খালিদ হোসেনকে জড়িয়ে ২টি এবং এম সাখাওয়াত হোসেন, নূরজাহান বেগম ও শেখ বশির উদ্দিনকে জড়িয়ে একটি করে অপতথ্য প্রচারের প্রমাণ পেয়েছে রিউমর স্ক্যানার।

সাম্প্রদায়িক অপতথ্যে ভারতীয়রা

ধর্মীয় বিষয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ হয়ে উঠছে সাম্প্রদায়িক ভুল তথ্য। বিশেষত, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সময়ে গেল আগস্ট থেকে এই ক্ষেত্রটিতে অপতথ্য প্রচারের হার আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। গেল বছরের প্রথম ছয় মাসে সাম্প্রদায়িক ২৯টি অপতথ্য শনাক্ত করে রিউমর স্ক্যানার। পরের ছয় মাসে তা পাঁচ গুণের বেশি বৃদ্ধি পেতে দেখা গেছে। ০৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের বিদায়ের পর সরকারবিহীন পরের তিনদিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে রাজনৈতিক হামলা ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। হামলা হয় বিভিন্ন ধর্মের অনুসারীদের বাসা এবং স্থাপনায়ও। এসব ঘটনাবলির মধ্যেই সাম্প্রদায়িক ভুল তথ্য এবং অপতথ্যের ব্যাপক প্রচারের মাধ্যম হয়ে ওঠে মাইক্রোব্লগিং সাইট হিসেবে পরিচিত প্লাটফর্ম এক্স (সাবেক টুইটার)। রিউমর স্ক্যানার ইনভেস্টিগেশন ইউনিট সে সময় এক্সে এমন ৫০টি অ্যাকাউন্ট খুঁজে বের করেছিল, যেগুলোতে বাংলাদেশের সে সময়ের ঘটনাবলির বিভিন্ন ছবি, ভিডিও এবং তথ্যকে সাম্প্রদায়িক রূপ দিয়ে প্রচার করা হয়। এসব অ্যাকাউন্টের প্রতিটির অন্তত একটি পোস্টে সাম্প্রদায়িক অপতথ্য ও ভুল তথ্য প্রচারের প্রমাণ পেয়েছে রিউমর স্ক্যানার। রিউমর স্ক্যানার ইনভেস্টিগেশন ইউনিট বিশ্লেষণ করে দেখেছে, ভুয়া এবং অপতথ্য ছড়ানো এসব অ্যাকাউন্টধারীর ৭২ শতাংশই ভারতে থাকেন বলে উল্লেখ করেছেন। অ্যাকাউন্টধারীদের মধ্যে দায়িত্বশীল অনেক ব্যক্তিও রয়েছেন। এমনকি ভারতের একাধিক মূল ধারার গণমাধ্যমেও এসব ভুয়া তথ্য প্রচার করা হয়।

বাংলাদেশকে জড়িয়ে সাম্প্রদায়িক অপতথ্য

ভারত-বাংলাদেশ দুই দেশকে জড়িয়ে সাম্প্রদায়িক অপতথ্যের প্রচার নতুন নয়। তবে আগস্টে এত কম সময়ের মধ্যে এত বেশি সংখ্যক অপতথ্যের বিরুদ্ধে লড়াই করাটা রিউমর স্ক্যানারের জন্য বেশ চ্যালেন্জিং ছিল। রিউমর স্ক্যানার টিম রাতদিন নিরলস চেষ্টা করে গেছে।

আগস্ট পরবর্তী সময়ে ভারতীয়দের দ্বারা সবচেয়ে বড় অপতথ্যের বন্যা ফের শুরু হয় নভেম্বরের শেষ নাগাদ। ২৫ নভেম্বর জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগে দায়েরকৃত রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। পরদিন তাকে চট্টগ্রামে আদালতে হাজির করা হলে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়। এরই প্রেক্ষিতে আদালত প্রাঙ্গণে উত্তেজনা, বিক্ষোভ, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনার মধ্যে সাইফুল ইসলাম নামের এক আইনজীবীকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে সরব হয় ভারতের গণমাধ্যম ও এক্স অ্যাকাউন্টগুলো। ভারতের মূলধারার গণমাধ্যম এবং এক্স অ্যাকাউন্টগুলো রীতিমতো এই ইস্যুতে অপতথ্যের ক্যাম্পেইন চালিয়েছে। গত ডিসেম্বরে এমন ৪৯টি ভারতীয় গণমাধ্যমের তালিকা প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার, যারা কিনা গত ১২ আগস্ট থেকে ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে ১৩টি ভুয়া খবর প্রচার করেছে। রিউমর স্ক্যানারের বিশ্লেষণ বলছে, এক্সে আগস্ট পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশকে নিয়ে ছড়ানো অপতথ্যগুলো দেখা হয়েছে অন্তত ২০ কোটি বার।

ভুল তথ্যের প্রবাহ থেকে বাদ যায়নি কোনো ক্ষেত্রই

২০২৪ সালের রিউমর স্ক্যানারের প্রতিবেদনগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, একক ব্যক্তি হিসেবে গেল বছর সবচেয়ে বেশি ভুল তথ্যে (২০৮টি) জড়ানো হয়েছে শেখ হাসিনার নাম। সম্মিলিত এই তালিকায় পরের অবস্থানে (১১৬টি) রয়েছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছেন সাকিব আল হাসান (৯৮টি)। রাজনৈতিক অঙ্গনের প্রথম তিন অবস্থানেও এই তিনজনকেই পাওয়া যাচ্ছে। জাতীয় ক্ষেত্রে অবশ্য ড. ইউনূস আছেন শীর্ষ অবস্থানে। পরের অবস্থানে রয়েছেন সারজিস আলম। তৃতীয় অবস্থানে যৌথভাবে এসেছে ড. আসিফ নজরুল ও হাসনাত আবদুল্লাহর নাম।

দেশে সশস্ত্র এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জড়িয়ে গেল বছর ১৭৪টি ভুল তথ্য প্রচারের প্রমাণ পেয়েছে রিউমর স্ক্যানার৷ এর মধ্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে জড়িয়ে সর্বোচ্চ ৯৭টি ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে। বাহিনীটির সাবেক প্রধান জেনারেল (অবঃ) এস এম শফিউদ্দিন আহমেদকে নিয়ে ৭টি এবং বর্তমান প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানকে নিয়ে ১৯টি অপতথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার।

এছাড়া বাংলাদেশ পুলিশকে নিয়ে ৫০টি, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখার সাবেক প্রধান হারুন অর রশিদকে নিয়ে ৭টি, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক মো: ময়নুল ইসলামকে নিয়ে ২টি, র‍‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে (র‍্যাব) নিয়ে ৫টি, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে (বিজিবি) নিয়ে ৫টি, বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে নিয়ে ৪টি, বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীকে নিয়ে ৪টি এবং জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা, বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী ও বাংলাদেশ বিমান বাহিনীকে নিয়ে ১টি করে ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার৷

স্থাপনার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ভুল তথ্যের শিকার হয়েছে ঢাকার মেট্রোরেল (২৫টি)। এছাড়া, কর্ণফুলী টানেল নিয়ে ৮টি, পদ্মা সেতুকে নিয়ে ৪টি এবং বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটকে নিয়ে ২টি ভুল তথ্য শনাক্ত করা হয়েছে৷

ভুল তথ্যের হাত থেকে রেহাই পায়নি ধর্ম সংক্রান্ত নানা বিষয়ও। ধর্মীয় বিষয় নিয়ে নিয়মিতই ছড়াচ্ছে নানা গুজব। গেল বছর ধর্ম ভিত্তিক ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে ৩১৩টি। মুসলিমদের প্রধান উৎসব ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে ২৩টি ভুল তথ্য প্রচারের তথ্য মিলেছে৷ রমজানকে কেন্দ্র করেও ভুল তথ্য ছড়িয়েছে, সংখ্যায় যা ৩৮টি। গেল বছর সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান উৎসব দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে ১৩টি অপতথ্যের প্রচার দেখেছে রিউমর স্ক্যানার। ধর্মীয় ক্ষেত্রে সর্বাধিক ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে নিয়ে (৯টি), যিনি বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র।

শিক্ষা ক্ষেত্রে পাবলিক এবং বিভিন্ন পর্যায়ের ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে প্রতিবছর ভুল তথ্য প্রচার হতে দেখা যায়। ২০২৪ সালেও এর ব্যতিক্রম ছিল না। এই সময়ে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা নিয়ে ১১টি করে, জেএসসি নিয়ে দুইটি এবং পিইসি নিয়ে একটি ভুল তথ্য ছড়িয়েছে। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় নতুন শিক্ষা কারিকুলাম নিয়ে আলোচনা ও সমালোচনা হয়েছে৷ থেমে থাকেনি এ সংক্রান্ত ভুল তথ্য প্রচারও। এই বিষয়ে শনাক্ত হয়েছে ১৩টি ভুল তথ্য। বাংলাদেশের পাঠ্যবইগুলোতে ভুলের প্রবণতার বিষয়টিও গেল কয়েক বছর ধরেই আলোচনা ও সমালোচনার ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। রিউমর স্ক্যানার গেল বছরগুলোর ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালেও পাঠ্যবইয়ে থাকা ভুলের বিষয়ে কাজ করেছে, প্রকাশ করেছে ৮টি ফ্যাক্টচেক। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মাধ্যমে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড গেল বছর স্কুলগুলোতে একটি সংশোধনী দেওয়া হয়, যার মধ্যে রিউমর স্ক্যানারের তিনটি ফ্যাক্টচেকের ভুলগুলোর বিষয়েও উল্লেখ রয়েছে। ২০২৪ সালে প্রশ্ন ফাঁস বিষয়ে ৭টি, মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে ৪টি এবং গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে ৩টি ভুল তথ্য শনাক্ত করা হয়েছে।

গত বছর ক্রীড়াঙ্গনে ছড়িয়ে পড়া ৪৭৬টি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার। ক্রীড়াঙ্গনের ভুল তথ্যগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ক্রিকেট আর ফুটবল এই দুই ক্ষেত্রেই শুধু বছর জুড়ে ভুল তথ্য ছড়িয়েছে। এই দুই ক্ষেত্রের মধ্যে অনুমিতভাবেই এগিয়ে আছে ক্রিকেট নিয়ে ভুল তথ্য। প্রচারিত এসব ভুল তথ্যের সবচেয়ে বেশি শিকার হয়েছেন সাকিব আল হাসান (৭৫টি)। পরের দুই অবস্থানে আছেন যথাক্রমে তামিম ইকবাল (৪৫টি) এবং মুস্তাফিজুর রহমান (২৪টি)। ক্রিকেটের বাইরে ফুটবল সংশ্লিষ্ট বিষয়ে গত বছর সবচেয়ে বেশি ভুল তথ্যের শিকার হয়েছেন এমন তালিকার প্রথম তিন অবস্থানে রয়েছেন যথাক্রমে আর্জেন্টিনার লিওনেল মেসি (১৪টি), পর্তুগালের ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো (১৩টি) এবং ব্রাজিলের নেইমার জুনিয়র (৩টি)।

বিনোদন জগতে বিভিন্ন বিষয়ে গুঞ্জন আর ধোঁয়াশা লেগেই থাকে সবসময়। এসবের ভীড়ে বিনোদন ও সাহিত্য অঙ্গন ঘিরে ২০২৪ সালে প্রচারিত ২৬৬টি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভুল তথ্যের শিকার হয়েছেন নায়ক শাকিব খান (১৭টি)। এর পরের দুই অবস্থানে রয়েছেন নায়িকা শবনম বুবলী (১৬টি) এবং নায়িকা পরী মণি (১০টি)।

সময়ে সময়ে নানান ইস্যু, সঙ্গী ভুল তথ্যও

দেশে গেল বছর সময়ে সময়ে নানান ইস্যুতে সরগরম ছিল ইন্টারনেটের বিভিন্ন মাধ্যম। জানুয়ারিতে দেশি-বিদেশি নানান ঘটনার প্রেক্ষিতে এমন ইস্যু চিহ্নিত করা হয়েছে ৫টি। পরবর্তী মাসগুলোতে যথাক্রমে ফেব্রুয়ারিতে ৩টি, মার্চে ১টি, এপ্রিলে ৫টি, মে’তে ৪টি, জুনে ৩টি, জুলাইতে ২টি, আগস্টে ৫টি, সেপ্টেম্বরে ৪টি, অক্টোবরে ২টি, নভেম্বরে ৬টি ইস্যু চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব ইস্যুতে ৮২০টি ভুল তথ্য শনাক্ত করা হয়েছে৷ এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভুল তথ্য শনাক্ত হয়েছে যথাক্রমে কোটা সংস্কার আন্দোলন (১৮৯টি), ভিন্ন ভিন্ন সময়ের বন্যা (১০১টি) ও সংসদ নির্বাচন (৯১টি) ইস্যুতে।

প্রতারণা ও ভুয়া নিয়োগ নিয়ে চিন্তা

সময়ের সাথে নিত্য নতুন পন্থায় প্রতারণার পথ বেছে নিচ্ছেন প্রতারকরা। গেল বছর জুয়ার অ্যাপের ভুয়া বিজ্ঞাপনে সেলিব্রিটিদের জড়ানোর বিষয়টি প্রতারণার ক্ষেত্রটিতে সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে। ২০২৪ সালে জুয়ার বিজ্ঞাপন সংক্রান্ত প্রায় অর্ধশতাধিক ভুয়া ভিডিও শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার। জুয়ার বিজ্ঞাপনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সহায়তায় ক্রিকেটার, বিনোদন তারকা এমনকি প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তাকে জড়িয়ে ভিডিওগুলোকে বিশ্বস্ত করে তোলার চেষ্টা বেড়েছে। এসব ভুয়া ভিডিওতে ব্যবহার হয়েছেন এমন ব্যক্তিরা হচ্ছেন সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম, শাকিব খান, মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা, মুস্তাফিজুর রহমান, গায়ক তাহসান রহমান খান, নায়ক মনোয়ার হোসেন ডিপজল, র‍‍্যাবের সাবেক মুখপাত্র খন্দকার আল মঈন, বিটিআরসির বর্তমান চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদ, কনটেন্ট ক্রিয়েটর তাওহীদ আফ্রিদি এবং কনটেন্ট ক্রিয়েটর ইফতেখার রাফসান। শুধু সেলিব্রিটিরাই নয়, প্রতারণামূলক এসব ভিডিওতে একাধিক গণমাধ্যমের নাম, লোগো এবং ভিন্ন ঘটনার ফুটেজ ব্যবহার করা হয়েছে। এসব বিজ্ঞাপন ফেসবুকে অর্থের বিনিময়ে লাখ লাখ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।

প্রতারণার আরেকটি ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে ভুয়া নিয়োগ। গেল বছর ১২০টি ভুয়া নিয়োগের ঘটনা শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার৷ গত বছর সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নামে ফেসবুকে ভুয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ছেড়ে এর মাধ্যমে আর্থিক প্রতারণা সংক্রান্ত একটি বিষয়ে বিস্তারিত অনুসন্ধান করে রিউমর স্ক্যানারের বিশেষায়িত বিভাগ ‘রিউমর স্ক্যানার ইনভেস্টিগেশন ইউনিট’। দীর্ঘ অনুসন্ধানে দেখা যায়, দেশের ০৭টি সিটি কর্পোরেশন, অন্তত ২০টি পৌরসভা, অন্তত ৬০টি হাসপাতালে এবং অন্তত ২০টি পাসপোর্ট অফিসের নাম, লোগো ব্যবহার করে ফেসবুকে ভুয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি পোস্ট করা হয়। ২৬ মে এ বিষয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার। ০৮ জুন আলোচিত এই নিয়োগ প্রতারণার সাথে জড়িত তাওহীদ নামে এক তরুণকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

প্রযুক্তির অপব্যবহার আর গণমাধ্যমকে জড়িয়ে ভুল তথ্যে দুশ্চিন্তা

২০২৪ সালে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও ডিপফেক প্রযুক্তির কারসাজির মাধ্যমে ভুল তথ্যের প্রচার ও প্রসার বেশ লক্ষ্যণীয় ছিল। গত বছরের জানুয়ারির এক সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করেই ৩টি ডিপফেক ভিডিও শনাক্ত করে রিউমর স্ক্যানার। এর বাইরে গত বছর আরও ৯টি ডিপফেক ভিডিও শনাক্ত করা হয়েছে যার শিকার হয়েছেন রাজনৈতিক এবং বিনোদন অঙ্গণের বিভিন্ন ব্যক্তি। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই-কে কাজে লাগিয়ে প্রযুক্তির এই অপব্যবহার সবচেয়ে বেশি করা হচ্ছে। গত বছর এমন ১০৭টি ভুল তথ্য শনাক্ত করা হয়েছে, যাতে এআই প্রযুক্তির ব্যবহার লক্ষ্য করা গেছে।

আধুনিক এসব প্রযুক্তিকে ভুল তথ্য ছড়ানোর হাতিয়ার বানানো ছাড়াও আরেকটি বড় দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে গণমাধ্যমকে ভুল তথ্য ছড়ানোর কাজে ব্যবহার। গণমাধ্যম যা প্রচার করেনি তা-ই গণমাধ্যমের নামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এই পদ্ধতিতে ২০২৩ সাল থেকেই ভুল তথ্য ছড়ানোর প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এসব ভুল তথ্যের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হচ্ছে গণমাধ্যমের নাম, লোগো, শিরোনাম, পুরোনো ফুটেজ এবং নকল ফটোকার্ড। এসব কায়দা ব্যবহার করা হয়েছে, গত বছর এমন ৫০৫টি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার। অর্থাৎ, গড়ে প্রতিদিন একটির বেশি ভুল তথ্য প্রচারে গণমাধ্যমকে জড়িয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে।

আরটিভি/এসএপি


মন্তব্য করুন

Bangal
rtv Drama
Radhuni
  • সোশ্যাল মিডিয়া এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন করা সম্ভব: আলাল
বাংলাদেশের নির্বাচনে তাড়াহুড়ো বিপজ্জনক হবে: ব্রিটিশ এমপি রূপা হক
কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গোয়েন্দা প্রতিবেদন চায় নির্বাচন কমিশন
চট্টগ্রামে সমন্বয়কের ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির কল রেকর্ড ফাঁস, যা জানা গেল