বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) ভুলের মাশুল গুনতে হচ্ছে ট্যানারি শিল্পকে। কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার কাজ না করায় পরিবেশ দূষণের কারণে রপ্তানি করা চামড়ার প্রত্যাশীত দাম পাচ্ছে না শিল্প মালিকরা। সম্ভব হয়নি চামড়া শিল্পের বাজার সম্প্রসারণ। ফলে বিপুল বিনিয়োগেও সাভারের চামড়া শিল্পনগরীর সুফল মিলছে না।
তথ্যমতে, কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন দূরের কথা উল্টো ডুবতে বসেছে সম্ভাবনাময় চামড়া শিল্প। বিসিক’র আশ্বাসে বিশ্বাস করে পথে বসার উপক্রম প্রতিষ্ঠানগুলোর। পরিবেশ দূষণের মাত্রা কমাতে না পারায় চামড়া শিল্পনগরী আজও এলডব্লিউজির সদস্য হতে পারেনি। আসেনি বিদেশি ক্রেতা। সম্প্রসারণ হয়নি আন্তর্জাতিক বাজার। অথচ পরিবেশ দূষণ রোধ করে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ ও রপ্তানি বাড়ানোর উদ্দেশ্যে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত কমপ্লায়েন্স চামড়া শিল্পনগরী গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রকল্প হাতে নিয়েছিল সরকার।
২০০৩ সালে নেওয়া প্রকল্পটির মেয়াদ বাড়ানো হয় ১২ বার। ১৭৫ কোটি টাকার প্রকল্প ব্যায় বেড়ে এক হাজার ১৫ কোটি টাকা হলেও পরিবেশ দূষণ রোধে কমন ক্রোম রিকভারি ইউনিট নির্মাণ সম্পন্ন হয়নি। সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে রিসোর্স জেনারেশনের ব্যবস্থাও রাখা হয়নি। প্রকল্পের আওতায় দুই বছরের মধ্যে সেন্ট্রাল ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট বা সিইটিপি স্থাপন করার কথা থাকলেও চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের খামখেয়ালিপনা আর শিল্প মন্ত্রণালয়ের ব্যর্থতায় তা শেষ হতে লাগে সাত বছরেরও বেশি। সেই সিইটিপির পরিশোধন ক্ষমতা পিক সিজনে ট্যানারিগুলোর উৎপাদিত বর্জ্যের মাত্র অর্ধেক। তাই পুরোপুরি ট্রিটমেন্ট হওয়ার আগেই বর্জ্য ফেলে দেওয়া হচ্ছে নদীতে। ট্যানারির কঠিন বর্জ্য পরিশোধনেরও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সভাপতি শাহীন আহমেদ বলেন, বিসিকের মাধ্যমে চামড়া শিল্প পরিচালনা সম্ভব নয়। তাদের অভিজ্ঞ লোকবলেরও অভাব।
বিটিএ মহাসচিব সাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, চামড়া শিল্পকে বাঁচাতে হলে একটাই উপায় সিইটিপি ও সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট সম্পন্ন করতে হবে। না হলে ট্যানারি শিল্প বাঁচবে না।
অভিযোগ অস্বীকার করে উল্টো শিল্প মালিকদের দোষারোপ করেছেন বিসিকের চেয়ারম্যান মুহ. মাহবুবুর রহমান।
তবে বিশেষজ্ঞরা কর্তৃপক্ষ ও শিল্প মালিক উভয়পক্ষেরই দুর্বলতা দেখছেন। লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বলছেন, চামড়া শিল্পটা আজ ধ্বংসের মুখে। এর মূল কারণই সিইটিপি’র ব্যর্থতা। এ ছাড়া দেশীয় কনসালট্যান্টের দায় সবচেয়ে বেশি। তারা কি করেছে সেটি অনুসন্ধান করা উচিত।