নতুন গবেষণায় মিলল বুধ গ্রহে ১৮ কিলোমিটারজুড়ে হীরার স্তর!
সৌর পরিবারের সবচেয়ে ছোট গ্রহ বুধের পৃষ্ঠদেশের নিচে ১৮ কিলোমিটার পুরো হীরার স্তর রয়েছে বলে ধারণা করছেন গবেষকরা। সূর্যের সবচেয়ে কাছে থাকা গ্রহটিতে এত হীরার উপস্থিতির বিষয়ে এর আগে জানা যায়নি।
এতদিন ধরে আমরা জেনে আসছিলাম যে, এর পৃষ্ঠ ভীষণ উত্তপ্ত। কিন্তু সাম্প্রতিক এক গবেষণায় উঠে এসেছে নতুন ও অবাক করা তথ্য—বুধের ভূপৃষ্ঠের নিচে হীরার আস্তরণ থাকতে পারে!
প্রায় সাড়ে ৪০০ কোটি বছর আগে ধূলিকণা আর গ্যাসের ঘূর্ণায়মান মেঘ থেকে জন্ম হয় বুধের। তখন এই নবজন্ম গ্রহের গভীরের লাভার মহাসাগরের ওপরে একটি কঠিন গ্রাফাইটের স্তর তৈরি হয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সূর্যের তীব্র তাপ আর গ্রহের নিজস্ব চাপে সেই গ্রাফাইটের স্তরটি হীরায় পরিণত হতে পারে। এটাই বিজ্ঞানীদের ধারণা।
বেলজিয়ামের লিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের প্রধান বার্নার্ড শারলিয়ার এবং তার দল এই ধারণা নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছেন। তারা বুধের ম্যান্টেলের গভীরে থাকা তাপ ও চাপের পরিবেশ কৃত্রিমভাবে তৈরি করেছেন একটি বিশেষ যন্ত্র—অ্যানভিল প্রেস ব্যবহার করে।
গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে, বুধের পৃষ্ঠের নিচে থাকা গ্রাফাইটের স্তরগুলো সত্যিই এই তাপ ও চাপের কারণে হীরায় রূপান্তরিত হতে পারে।
তবে প্রশ্ন হলো, এই হীরা বাস্তবে পাওয়া সম্ভব কি না? গবেষকরা বলছেন, এই সম্ভাব্য হীরার স্তর আমাদের সৌরজগত সম্পর্কে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে। এই হীরা শুধু বৈজ্ঞানিক কৌতূহলের বিষয়ই নয়, এটি ভবিষ্যতে মহাকাশ অনুসন্ধানে এক নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে। তবে এই হীরার উপস্থিতি নিশ্চিত করতে এবং এটি সংগ্রহ করার উপায় নিয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন।
বুধ গ্রহে হীরার সম্ভাবনা নিয়ে আরেকজন বিজ্ঞানী অলিভিয়ের নামুর বলেন, নাসার মেসেঞ্জার মহাকাশযানের পাঠানো তথ্য অনুযায়ী বুধের ম্যান্টেল এবং কোরে যে চাপ রয়েছে, তাতে কার্বন বহনকারী খনিজগুলি গ্রাফাইট নয়, বরং হীরায় পরিণত হয়েছে। এই তথ্যকে ভিত্তি করেই গবেষকরা তাদের ধারণাকে আরও শক্তিশালী করছেন।
বুধের ভূপৃষ্ঠের নিচে থাকা হীরার এই সম্ভাব্য স্তর আমাদের মহাকাশ অনুসন্ধানে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে। এমনকি ভবিষ্যতে এই হীরার মজুত খনন করার মাধ্যমে মহাকাশের সম্পদ আহরণ করা সম্ভব হতে পারে। তবে এই খনন প্রক্রিয়া অত্যন্ত জটিল এবং ব্যয়সাপেক্ষ হবে। যার জন্য আরও উন্নত প্রযুক্তি প্রয়োজন হবে।
এই গবেষণা আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, ২০২৬ সালের মধ্যে এই গবেষণার আরও বিশদ ফলাফল পাওয়া যাবে। তখন বুধের অভ্যন্তরীণ গঠন এবং বিবর্তন সম্পর্কে আরও বিস্তারিত তথ্য আমাদের হাতে আসবে যা আমাদের সৌরজগতের গঠন এবং বিবর্তন নিয়ে নতুন ধারণা দেবে।
মন্তব্য করুন