সাদা নয়, গোলাপি লবণ সংগ্রহে যত অদ্ভুত রহস্য!
সাধারনত লবণ মানেই বেশি দেখা যায় সাদা লবণ, কিন্তু এই চিত্র ভিন্ন। এই লবণের রং গোলাপি! হ্যাঁ, ঠিকই শুনছেন—গোলাপি লবণ! কিন্তু জানেন? কীভাবে তৈরি হয় এই বিশেষ লবণ? আর এর পেছনে রহস্যই বা কী? তবে এটি কৃত্রিম রঙে নয়, প্রাকৃতিক উপায়ে তোইরি হয় এই রঙ। সূর্যের আলো, শৈবালের কারসাজি আর প্রকৃতির জাদু মিলে তৈরি এই বিরল ও চমকপ্রদ গোলাপি লবণ।এই লবণ শুধু তার রঙের জন্য নয়,এর ব্যবহারেও রয়েছে নানা বৈচিত্র্য। প্রসাধনী থেকে শুরু করে খাবার, এমনকি তুষার গলানোর জন্যও এটি অত্যন্ত কার্যকর।
গল্পটা ক্রিমিয়ার একটি বিস্ময়কর জায়গার। এই জায়গার নাম এভপাটোরিয়া, যেখানে প্রতিবছর গোলাপি লবণ সংগ্রহ করা হয়।লবণের গোলাপি রঙের কারণের পেছনে রয়েছে প্রকৃতির অসাধারণ এক বিজ্ঞান। গোলাপি রঙের অন্যতম কারণ ডুনালিয়েলা সালিনা নামের এক বিশেষ শৈবাল। বছরের সবচেয়ে গরম সময়ে, যখন সমুদ্রের পানি শুকিয়ে যায়, তখন এই শৈবাল প্রচুর পরিমাণে বিটা-ক্যারোটিন উৎপাদন করে। এটি একটি প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষামূলক প্রক্রিয়া, যা শৈবালকে উজ্জ্বল গোলাপি রঙ ধারণ করতে সহায়তা করে।যখন লবণ জমতে শুরু করে, এই শৈবাল থেকেই লবণ গোলাপি আভা পায়। পরে যখন সমুদ্রের পানি পুরোপুরি শুকিয়ে যায়, তখন লবণ সেই রঙেই থেকে যায়।
গোলাপি লবণ সংগ্রহের প্রক্রিয়াটিও বেশ ব্যতিক্রমী। এই লবণ সংগ্রহের পদ্ধতি সম্পূর্ণরূপে সূর্যের তাপ ও বাতাসের উপর নির্ভরশীল। বছরের সবচেয়ে গরম মাসগুলোতে, সমুদ্রের পানি বাষ্প হয়ে উড়ে যায়, আর লবণের স্তর পড়ে থাকে। সাধারণত, এই লবণ সংগ্রহ করতে সময় লাগে তিন থেকে চার মাস। আগস্ট থেকে অক্টোবর মাসের মধ্যে এই কাজটি করা হয়। এই প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া বারবার চলতে থাকে এবং প্রতিবছর নতুন করে লবণের স্তর তৈরি হয়।
উৎপাদন সংস্থার বাণিজ্য বিভাগের ব্যবস্থাপক ইউলিয়া জানান, তাঁরা বিভিন্ন ধরনের লবণ উৎপাদন করেন। এর মধ্যে আছে স্নানের লবণ, যা প্রসাধনী ও সৌন্দর্য বৃদ্ধির কাজে ব্যবহৃত হয়, টেবিল লবণ, যা খাবারের জন্য এবং শিল্পের জন্যও প্রয়োজনীয়। আমরা ব্যবহারের ভিত্তিতে বিভিন্ন ধরনের লবণ উৎপাদন করি—স্নানের লবণ, খাবার লবণ, এবং শিল্প কাজে ব্যবহৃত লবণ। বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই লবণ তৈরি করা হয়, যা প্রকৃতির গরম সময়ে সূর্য ও বাতাসের সাহায্যে বাষ্পীভূত হয়ে যায়।
প্রতি বছর হাজারো শ্রমিক এই বিস্ময়কর গোলাপি লবণ সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত থাকেন। সূর্যের তীব্র তাপ ও প্রকৃতির নিখুঁত ভারসাম্যে তৈরি এই লবণ যেনো প্রকৃতির এক আশ্চর্য দান, যা সৌন্দর্য থেকে শুরু করে খাদ্য এবং শিল্পের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়ে আসছে।
আরটিভি/এফআই
মন্তব্য করুন