নিঃসন্তান মায়েরা পদদলিত হলেই মিলবে নাকি সন্তান!
কোথাও যাচ্ছেন, হঠাৎ সামনে দেখলেন অনেকগুলো নারী রাস্তায় শুয়ে আছেন এবং তাদের পিঠ পাড়িয়ে পদদলিত করছেন একজন পুরুষ। এমন চিত্র দেখে যে কারও মনে আসবে প্রশ্ন! যে এমনটা কেন? উত্তর শুনলে আপনি হতভম্ব হতে বাধ্য। মূলত সন্তান লাভের আশায় পদদলিত হচ্ছেন এই নারীরা।
সন্তান সৃষ্টিকর্তার এক অনন্য নেয়ামত। যা অনেকেই দুর্ভাগ্যক্রমে পায় না। তখন মানুষ দ্বারস্থ হয় ডাক্তার, কবিরাজ, মানত, মাজার, পূজা আরও কত কি। তবে এই গ্রামে সন্তান লাভ হয় যেন এক অন্য উপায়ে। পুরোহিতের পায়ের নিচে পড়লেই বুঝি মিলবে সন্তান। এমনটাই বিশ্বাস ভারতের ছত্তিশগড়ের ধামতারি অঞ্চলের মানুষের।
৫০০ বছরের পুরোনো এই রীতি শুরু হয়েছিল দেবী অঙ্গারমতীর মন্দিরে, যা রায়পুর থেকে প্রায় ৯০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। প্রতি বছর দিওয়ালির পরের প্রথম শুক্রবারে হাজার হাজার মানুষ এখানে সমবেত হন এই মেলায় অংশগ্রহণ করতে।
এখানে ঘটে এমন এক অদ্ভুত ঘটনা যা শুনলে আপনার মনে হতে পারে যেন কোনো প্রাচীন কাল্পনিক গল্পের অংশ। মন্দিরে সন্তান লাভের আশায় সন্তানহীন নারীরা পেটের ওপর শুয়ে পড়েন। আর তাদের পিঠের ওপর দিয়ে হেঁটে যান পুরোহিত এবং ওঝারা, যারা মন্ত্র পড়তে পড়তে পতাকা হাতে ধরে এগিয়ে যান। এতে তাদের বিশ্বাস, পুরোহিতের আশীর্বাদ তাদের সন্তান লাভের সুযোগ এনে দেবে।
প্রতিবছর এ অঞ্চলের মেলা উপলক্ষে প্রায় ৫০০ এর বেশি সন্তানহীন নারী এই রীতিতে অংশ নেন। তারা বিশ্বাস করেন, পুরোহিতের পায়ে স্পর্শ তাদের গর্ভধারণের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। এই প্রথাকে ঘিরে আশপাশের হাজার হাজার দর্শক ভিড় করে, যারা মন্ত্র উচ্চারণ এবং অন্যান্য আচার অনুষ্ঠান প্রত্যক্ষ করেন। যদিও আধুনিক কালের বেশিরভাগ মানুষ এমন আচার অনুষ্ঠানের ন্যায্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে, সেখানে অংশগ্রহণকারী এবং স্থানীয়দের মধ্যে কেউই কোনো ধরনের আপত্তি জানায় না। বরং, স্থানীয় সমাজের কাছে এটি এক বড়ো উৎসব হিসেবে পালিত হয়।
তবে এর স্বাস্থ্যগত দিক নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মাঝে প্রশ্ন উঠেছে। শারীরিকভাবে এ ধরনের আচরণ নারীদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে বলে চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা মন্তব্য করেছেন। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা বিশ্বাস এবং সমাজের চাপের কারণে এই প্রথা আজও চালু আছে। এমনকি সরকারের পক্ষ থেকে এই আচার অনুষ্ঠান বন্ধ করার কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি।
আরটিভি/এফআই/এআর
মন্তব্য করুন