জলপ্রপাতের ভয়ংকর মৃত্যুফাঁদ দুই যোদ্ধার কাছে যেন দুধভাত
চারদিকে বিশাল উচ্চতার জলপ্রপাত, যার কাছাকাছি যাওয়ার সাহস কেবল নিঃসংশয় দুঃসাহসীদেরই আছে। বরফের সংস্পর্শে জলপ্রপাতের জলীয় বাষ্প ঠান্ডা বাতাসে জমে যেন ধোঁয়ার আবরণ তৈরি করে। জলপ্রপাতের গভীরে সেই ধোঁয়ার মধ্যেই লুকিয়ে আছে যেন এক ভয়াল মৃত্যুপুরী।
এখানে যদি কেউ পড়ে যায়, তার লাশ খুঁজে পাওয়া তো দূরের কথা, এমনকি হাড়গোড়ের কোনো চিহ্নও মিলবে না। যেখানে এই দৃশ্য সাধারণ মানুষকে স্তম্ভিত করে দেয়, সেখানে এই দুই সাহসী যোদ্ধা শুধু আকাশ আর মৃত্যুর মাঝখানে টানানো সরু, ঢিলেঢালা এক রশিতে এমনভাবে হাঁটছে যেন প্রিয়জনের হাত ধরে ধীর গতিতে মেঠোপথে পায়চারি করছে।
দর্শক, কী দারুন ও ভয়ংকর না ব্যাপারটা! যেখানে পা রাখা তো দূরের কথা, দাঁড়ানোই অসম্ভব। সেই অসম্ভবকেই যেন পান্তাভাত মনে করছে এই সাহসীরা।
এই রোমাঞ্চকর ঘটনা ঘটেছে আফ্রিকার বিখ্যাত ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাতের ওপরে। ঝমঝম করে পড়তে থাকা পানির স্রোত, আর তার ওপরে টানানো একটি সরু দড়ি। আর সেই দড়ির ওপর দিয়ে পা ফেলে এগিয়ে যাচ্ছেন দুই ইউরোপীয় দুঃসাহসিক যুবক।
এদের একজন লুকাস ইর্মলার, ২৬ বছর বয়সী রসায়নের শিক্ষার্থী আর রেইনহার্ড ক্লাইনডল, ৩৪ বছরের ক্রাইম লেখক। এসেছেন জার্মানির ফ্রেইসিং আর অস্ট্রিয়ার গ্রাজ থেকে এই অভিনব হাড় হিম করা পারফমেন্স দেখাতে, যার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলেন দীর্ঘ দুই বছর।
আর এখানে যে রশিটি দেখছেন এর নাম স্ল্যাকলাইন। টাইটরোপের মতো মনে হলেও এটি অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং। কারণ দড়িটি থাকে ঢিলা, যার ফলে এটি বাউন্স করে আর টানটান থাকে না। তাই এর ওপর দিয়ে হাঁটার জন্য প্রয়োজন অসীম মনোযোগ আর শরীরের ভারসাম্যের নিখুঁত নিয়ন্ত্রণ।
সেই দড়ির ওপর দিয়ে হাঁটার সময়, তাদের প্রতিটি পদক্ষেপ যেন প্রকৃতির বিপুল শক্তি আর মানুষের সীমাহীন মনোবলের প্রতীক হয়ে উঠেছিল। তাদের মন মুগ্ধকর পারফরম্যান্সের সময় জলপ্রপাতের বিশাল জলরাশির গর্জন যেন আরে বেড়ে গেছে। আশপাশের মনোরম দৃশ্য যেন পুরো ঘটনাটিকে আরও অসাধারণ করে তুলেছে।
এই দুঃসাহসিক অভিযানের মাধ্যমে লুকাস ইর্মলার এবং রেইনহার্ড ক্লেইন্ডল প্রমাণ করে, হ্যা ভয়ের পরই জয়। এখানে শুধু তাদের সীমাহীন সাহসিকতার পরিচয়ই দেননি, প্রমাণ করেছেন, মানবসত্তার সবচেয়ে বড় শক্তি হলো আত্মবিশ্বাস।
আরটিভি/এফআই-টি
মন্তব্য করুন